‘ঈদ জামাতে থাকছে ১৫ হাজার পুলিশ’

ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সকল ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় ১৫ হাজার পোশাকধারী পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ‘সমন্বিত নিরাপত্তা বলয়’ গড়ে তোলা হয়েছে।

তিনি বলেন, কোনধরণের নিরাপত্তার কোন ঝুঁকি না থাকলেও নিষিদ্ধঘোষিত কোনও দল যাতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য ‘সদা সতর্ক’ থাকবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

রোববার (৩০মার্চ) সকালে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহ কেন্দ্রিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা সংক্রান্তে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন তিনি।

সাজ্জাত আলী বলেন, বরাবরের মতো এবারও জাতীয় ইদগাহে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির অংশগ্রহণে সকাল সাড়ে আটটায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। আর বায়তুল মোকাররমে ৫ টি ঈদ জামাতের মধ্যে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাতটায়। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে জাতীয় ঈদগাহের জামাতটি সকাল ৯ টায় অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ঢাকা মহানগরীতে মোট ১১১ টি ঈদগাহে এবং ১ হাজার ৫৭৭ টি মসজিদে ১ হাজার ৭৩৯ টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘সকল স্থানের ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি সমন্বিত ও সুদৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তা বিধানে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। তল্লাশির জন্য আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। পুরো জাতীয় ঈদহাগ ময়দানসহ আশেপাশের এলাকা সিসিটিভি আওতাভুক্ত থাকবে। প্রায় ১০০ সিসিটিভি ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে যা সার্বক্ষনিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

তিনি বলেন, ‘ইদগাহে প্রবেশের প্রধান তিনটি গেইটে ব্যারিকেড থাকবে, যেখানে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। মৎস্যভবন, প্রেসক্লাব ও শিক্ষাভবন এবং ঈদ ময়দানের চতুর্পাশে বহিঃবেস্টনি দিয়ে তল্লাশির ব্যাবস্থা থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘ঈদগাহ ময়দান ও আশেপাশের এলাকা এসবির সুইপিং টিম এবং সিটিটিসির ডগ স্কোয়াড সুইপিং করবে। সোয়াত ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট স্ট্যান্ডবাই থাকবে। সাদা পোষাকে ডিবি ও সিটিটিসি সদ্য মোতায়েন থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে মনিটরিংসহ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের কথাও জানান তিনি।

নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশিকাজে সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কোন প্রকার ব্যগ, ধারালো বস্তু, দাহ্য পদার্থ নিয়ে না আসার জন্য অনুরোধ রইল। সকলকে জামাত শেষে তাড়াহুড়া না করে সুশৃঙ্খলভাবে বের হওয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে।’

সন্দেহজনক কিছু মনে হলে নিকটস্থ পুলিশ সদস্যকে জানাতে কিংবা প্রয়োজনে ৯৯৯ অথবা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা দুই ধরনের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নেই। একটা হলো ওভার এবং আরেকটা কভার। সবকিছুতো আমরা ডিসক্লোজ করি না। অনেককিছু নিরাপত্তার স্বার্থে গোপন রাখি। ঈদে কোন ঝুঁকি নেই, আলহামদুলিল্লাহ আমরা রমজান মাসে ঢাকাবাসী অনেক ভালো ছিলাম বলেই আমি মনে করি। আজকে শেষ দিন রমজানের, ইনশাল্লাহ আজকের দিনটিও আমরা ভালোভাবে পার করতে সক্ষম হবো।’

তিনি বলেন, ‘ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় ১৫ হাজার পোশাকধারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাথে এটিইউ, সিটিটিসি, ডিবি সবার সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ আর্মিও থাকবেন। সাবাই মিলে সমন্বিতভাবে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলছি।’

ঈদ ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ‘অপতৎপরতা’ নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় সতর্ক আছি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ না, নিষিদ্ধঘোষিত যে সমস্ত দল আছে সেসব দল যাতে কোনরকম একটিভিটিজ পরিচালনা না করতে পারে সে ব্যপারে আমরা সদা সতর্ক।’

এসময় জাতীয় ঈদগাহের ঈদ জামাত ঘিরে চারপাশে যান চলাচলের বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের দিন সকাল ৬ টা থেকে ঈদের নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’

যেসব পয়েন্টে চলবে ডাইভারসন

জিরোপয়েন্ট ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, সরকারী কমচারী হাসপাতাল ক্রসিং, দোয়েল চত্ত্বর ক্রসিং, মৎস্য ভবন ক্রসিং

যে পয়েন্টে বন্ধ করা হবে সড়ক

সচিবালয় পুল গেইট এর সামনে, প্রেসক্লাবের সামনে, সরকারী কমচারী হাসপাতাল ক্রসিং, দোয়েল চত্ত্বর ক্রসিং, মৎস্য ভবন ক্রসিং

যানবাহন চলাচলের বিকল্প রাস্তা

শাহবাগ ক্রসিং-মৎস্য ভবন ক্রসিং হয়ে গুলিস্থান অভিমুখী যাত্রীবাহী গণপরিবহন/ব্যাক্তিগত যানবাহন মৎস্য ভবন ক্রসিং বামে মোড় নিয়ে কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং-রাজমনি ক্রসিং হয়ে গন্তেব্যে যাবে।

বঙ্গবাজার ক্রসিং হয়ে হাইকোর্ট ক্রসিং অভিমুখী যাত্রীবাহী গণপরিবহন/ব্যাক্তিগত যানবাহন চাঁনখারপুল-বকশীবাজার- পলাশী ক্রসিং হয়ে গন্তেব্যে যাবে।

বাবুবাজার ক্রসিং-গুলিস্থান ক্রসিং হয়ে কদমফোয়ারা ক্রসিং-মৎস্য ভবন ক্রসিং অভিমুখী যাত্রীবাহী গণপরিবহন/ব্যাক্তিগত যানবাহন ইউবিএল ক্রসিং- নাইটিংগেল ক্রসিং হয়ে গন্তেব্যে যাবে।

গাড়িযোগে ঈদগাহে আগত সম্মানিত নগরবাসী রোড ব্লকে গাড়ি হতে নেমে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে প্রবেশ করবেন এবং গাড়ি নির্ধারিত স্থানে পার্কিং করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন...