উচ্চ শুল্কহারের পণ্য আমদানি কমেছে

পিবিএ,বেনাপোল: বেনাপোলে বন্দরে উচ্চ শুল্কহারের পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে কমেছে । কিন্তু রাজস্ব আদায় সেই হারে কমেনি । গত বছর থেকে চাল ও স্টোন বোল্ডার ব্যাতিত পণ্যের আমদানি ৩১.৩৮ ভাগ কমলেও সামগ্রিক রাজস্ব কমেনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বেনাপোলের গত বছরের আদায়ের উপর এ বছর লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি হয়েছে ২৭ ভাগ । স্বাভাবিক আমদানি প্রবণতা বজায় থাকলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪.৩৮ ভাগ বেশি রাজস্ব আদায় হতো ।

গত অর্থবছরে মে মাসে ২০ তারিখ পর্যন্ত রাজস্ব আহরণ ৩৫৬৮.৩০ কোটি টাকা এবং বর্তমান অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ ৩৫৭৭.৫৪ কোটি টাকা । ব্রোকেন স্টোন ও বোল্ডার আমদানি বন্দরে সংরক্ষণ করতে গিয়ে উচ্চ শুল্কহারের পণ্য প্রবেশে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। একই সময়ে ব্রোকেন স্টোন ও বোল্ডার ব্যতীত অন্যান্য শুল্কযুক্ত পণ্যের সামগ্রিক আমদানি হ্রাস ১৭.৪৯ ভাগ । একই সময়ে চাল ব্যতিত ২৫ ভাগ শুল্কহারের পণ্যের সামগ্রিক আমদানি হ্রাস ১২.২৮ ভাগ । ১০ ভাগ শুল্কহার যুক্ত পণ্যের আমদানি কমেছে ২০ ভাগ ।

স্টোন বোল্ডার ব্যতিত পণ্যে গত অর্থবছরের একই সময়ের স্বাভাবিক আমদানি প্রবণতা (৩১.৩৮ ভাগ) অব্যহত থাকলে শুল্কহার যুক্ত পণ্যে অতিরিক্ত রাজস্ব আহরিত হত প্রায় ১০৯৮ কোটি টাকা । আহরণযোগ্য রাজস্ব হতো ৪৬৬৭ কোটি টাকা এবং সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ৩০.৮ ভাগ ।

শুণ্য শুল্কহারের পিয়াজ, তুলা, মসুর ডাল ইত্যাদি আমদানি পরিমানে বেড়েছে যথাক্রমে ২৫.৭৬%, ৪৩.৯৭%ও ১০০%। নিম্ন শুল্কহারের পণ্য স্পঞ্জ আয়রন, ফ্লাই অ্যাস ইত্যাদির আমদানি পরিমানে বেড়েছে যথাক্রমে ২০.৯২% ও ১০০%। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিরামিক ও তৈরি পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল মেশিনারি ও ইকুইপমেন্ট, ল্যাকটোজেন, লোহা ও স্টিলের তৈরি পণ্য, রাবার টায়ার ও অটোপার্টস আমদানি হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে ৪৮.১৩%, ১৯.৯৭%, ৮.৫১%, ৩৫.৫৩%, ৭.১৭% এবং ২৩.৮৪% । বাণিজ্যিক পণ্যের উল্লিখিত খাত গুলোতে, আমদানিতে গত অর্থবছরের চেয়ে অন্তত ১৪৫.৪৮ কোটি টাকা কম রাজস্ব আহরিত হয়েছে। চেসিস আমদানিতে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৪.৩১ ভাগ ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে চলতি অর্থ বছরে আমদানি-রফতানি হ্রাস পাওয়ার পারিপার্শ্বিক কারন রয়েছে। ভারতের পেট্রোপোলে বিভিন্ন সংগঠনের ঘন ঘন বনধ ডাকা, ভারতের বিভিন্ন পার্কিং এ যানজট ও পণ্যবাহী ট্রাকের অপর্যাপ্ততা, বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উভয় দিকে জাতীয় নির্বাচন আমদানি-রফতারি উপর প্রভাব ফেলেছে। স্থলবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়া, স্থান সংকট, বন্দরের উন্নয়ন আশানুরূপ না হওয়া, অপ্রতুল অবকাঠামো, পণ্য হ্যান্ডেলিং ইকুইপমেন্টের অভাব ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা,সার্বিক প্রশাসন ও নিরাপত্তায় অব্যবস্থাপনার কারণে আমদানি কার্যক্রমে গতিহীনতা দৃশ্যমান।

সাপ্টার আওতায় রেয়াতী সুবিধায় ছাড়করণে শুল্ককরের উপর প্রভাব পড়েছে। আমদানি-রফতানি পণ্যবাহি ট্রাক পথিমধ্যে বিজিবি কর্তৃক হয়রানির শিকার ও অযথা পণ্যবাহি ট্রাক আটক করার ফলে আশংকাজনক হারে উচ্চ মূল্যের পণ্য আমদানি হ্রাস পেয়েছে। বেনাপোলে বিএসটিআই ও বিসিএসআইআর এর শাখা অফিস না থাকায় পণ্যের গুণগতমান নির্ধারণে বিলম্বিত হচ্ছে ফলে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হচ্ছে। ভারতে বাজারজাত পণ্যেও উপর জি.এস.টি আরোপিত হওয়ায় আমদানি-রফতানির উপর প্রভাব পড়েছে।

SASEC এর আওতায় Exchange of document দিতে হয় বলে আমদানিকারকগণ Fabrics, Motor parts, Marble slab ইত্যাদি পণ্য এ দপ্তরের মাধ্যমে খালাস না করে অন্য বন্দর দিয়ে আমদানি করছে। বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক লতা বলেন, চলতি অর্থ বছরে কাস্টম কর্তৃপক্ষ আইন প্রয়োগে মনোজোগ দেয়ায় কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী বেনাপোল বন্দরের পরিবর্তে অণ্য বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি করায় বেনাপোল বন্দরে কিছুটা রাজস্ব আদায় হ্রাস পেয়েছে। তবে আগামী জুন মাসের মধ্যে তা কাটিয়ে উঠবে বলে আশা করছেন কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ।

নিবিড় পর্যবেক্ষন ও মনিটরিং এর কারনে বেনাপোল কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম ও মোংলা কাস্টম হাউজের তুলনায় প্রতি মেট্রিকটনে অধিক পরিমান রাজস্ব আদায় করেছে।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, পাথর ও বোল্ডারের মত নিম্ন শুল্কহারের পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে । এ বছর ভোমরা স্থল বন্দরে সকল পণ্য আমদানির সুবিধা দেয়া হয়েছে। ভোক্তা ও অংশীজন একই হওয়ায় ভোমরার রাজস্ব বৃদ্ধি পেলে বেনাপোলে কমবে। ব্যাপক সংস্কার ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে । তেত্রিশ দিনের লীড টাইম কমে তিন ঘন্টা হয়েছে। বেনাপোল বিমুখ অনেক সংগঠিত আমদানিকারক সাম্প্রতিক সময়ে আবার বন্দর অভিমূখী হচ্ছে । শুল্কায়ন ও খালাস সহজিকরণ করায় বর্তমানে বন্দর দৈনিক একহাজার (১০০০) ট্রাক হ্যান্ডেলিং করার সক্ষমতা অর্জন করেছে । আমদানি কমা স্বত্ত্বেও নিবিড় মনিটরিং এবং যথাযথ মূল্যায়ন এবং পরীক্ষণের ফলে রাজস্ব আদায় তুলনামূলক বেড়েছে । অধিকন্তু যে পরিমান পণ্য বেনাপোল কাস্টম হাউসে আমদানি হয়েছে, সে তুলনায় পূর্বের রেকর্ড ও ঐতিহ্য অনুসারে রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ।

পিবিএ/এনইউ/হক

 

আরও পড়ুন...