এম ইব্রাহীম সরকার, পিবিএ, ঢাকা: রাজধানীর উত্তরখানের মৈনারটেক এলাকায় একই পরিবারের তিন জনের অর্ধগলিত লাশ নিয়ে ক্রমেই রহস্য ঘনীভূত হয়ে উঠছে। লাশের সাথে উদ্ধারকৃত চিরকুট থেকে প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে আত্মহত্যা মনে করা হলেও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ স্পষ্টভাবেই জানান, রাজধানীর উত্তরখানে ছেলেকে গলা কেটে হত্যা এবং মা ও মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার (১৩ মে) বিকেলে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘উত্তরখানে তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ময়দাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে তিনজনকেই হত্যা করা হয়েছে।’
ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ময়নাতদন্তকালে দেখা গেছে, ছেলের গলা কাটা ছিল এবং মা ও মেয়েকে শ্বাসরোধের চিহ্ন ছিল, সেজন্য বোঝা যাচ্ছে মা ও মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, তিন মরদেহের ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে রোববার দিবাগত রাতে উত্তরখানের মৈনারটেক বাজার সংলগ্ন চা-পানের টেকের ৩৪/ডি নরম্ব বাসা থেকে একই পরিবারের তিন জনের অর্ধ-গলিত গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁরা সম্পর্কে মা, মেয়ে ও ছেলে। তারা হলেন, মা জাহানারা মুক্তা (৪৮),ছেলে মুহিব হাসান রসি (২৮) এবং মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিম (২০)।
ছেলে মুহিব হাসান মাস্টার্স শেষ করে বিএসএস পরিক্ষাও দিয়েছিলেন। বোন তাসফিয়া মিম ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধি। অপরদিকে মা জাহানারা গৃহিণী ছিলেন।
লাশ উদ্ধারের সময় বাসাটি থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে লেখা ছিল- ভাগ্য আর আত্মীয়স্বজনের অবহেলার কারণেই তাঁরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
এখন চিরকুট নিয়ে রহস্য দানাবেঁধে উঠছে। যদি আত্মহত্যা না হয়, তাহলে তাদেরকে হত্যা করলো কারা, আর চিরকুটই বা লিখলো কারা?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবারটি মাত্র এক সপ্তাহ আগে উত্তরখানের ঐ বাসায় ওঠে। তাঁদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের জগন্নাথপুর উত্তরপাড়ায়। সপ্তাহখানেক আগে ভৈরবের বাসা ছেড়ে তাঁরা তিনজন ঢাকার উত্তরখানের বাসায় উঠেছিলেন।
জাহানারা বেগমের স্বামী ইকবাল হোসেন ছিলেন বিআরডিবি অফিসের ব্যবস্থাপক। ২০১৬ সালে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। ইকবাল বড়লেখায় কর্মরত থাকলেও দীর্ঘদিন পরিবারটি থাকত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। ইকবালের মৃত্যুর পর পরিবারটি ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করে। মাস দুয়েক আগে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসাটি ছেড়ে তিন সদস্যের পরিবারটি বাড়ি ফিরে আসে। বাড়িতে তাঁদের থাকার নিজস্ব ঘর না থাকায় পাশের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করেন।
পরিবারটি ৫ মে ভৈরবের বাসা ছেড়ে দিয়ে ঢাকার উত্তরখানের বাসায় উঠেছিল বলে জানালেন ইকবালের ছোট ভাই আহসান উল্লাহর স্ত্রী তানজিনা আক্তার। তিনি বলেন, ঢাকায় চলে যাওয়ার আগে তাঁদের বাড়িতে দাওয়াত খেয়েছে পরিবারটি। তবে কয়েক দিন ধরে পরিবারটির কারও সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল না।
পিবিএ/এএইচ