উত্তরায় সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, দুই তরুণীসহ গ্রেপ্তার ৯

ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে রাজধানীর উত্তরার একটি হোটেলে চাঁদাবাজির অভিযোগে দুই তরুণীসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ভোরে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের বেইজিং হোটেল থেকে যৌথ বাহিনী তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সিনথিয়া কবির (২৫), সিনথিয়ার স্বামী খান মোহাম্মদ ওয়ালীদ (২৭), সিনথিয়ার ভাই রাইয়ান কবির অয়ন (২১), কাজী যুবায়ের (২২), ইরফান পায়েল (১৯), বিভাষ বড়াল (২৮), সুবর্ণা (২০), মনিরুল ইসলাম (৩০) ও মো. নিহাদ (২৪)। তাঁরা উত্তরার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী।

গ্রেপ্তারের পর সকালে তাঁদের চাঁদাবাজির মামলায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। পরে বিচারক শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

উত্তরার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘উত্তরায় কোনো সমন্বয়ক নেই। তবুও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের ভুয়া পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, মার্কেট, ফুটপাত, বাজার, ভাঙারির দোকান, খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় অনৈতিক সুবিধা দাবি করে আসছে কিছু অসাধু শিক্ষার্থী। শুধু তা-ই নয়, অবৈধ টাকা ও অস্ত্র রয়েছে অভিযোগ তুলে তাঁরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের বাসায় ঢুকে চাঁদা আদায় করেন। দল বেঁধে গিয়ে যেভাবে যা পারত নিয়ে আসে।’

তাঁরা বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসে চাঁদাবাজির অভিযোগে দুজন ছাত্রের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় মামলা হওয়ার পর, তাঁরা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের এক উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে টাকাপয়সা ও স্বর্ণালংকার ডাকাতির অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।’

বেইজিং হোটেলে ঢুকে হোটেলের মালিককে একটি রুমে আটকে রাখা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর গ্রেপ্তার হওয়া নয়জনসহ আরও কয়েকজন পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই সময় হোটেলটির মালিককে কথিত সমন্বয়কেরা ৫ লাখ টাকার জন্য ১০ মিনিট সময় বেঁধে দেন। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ কৌশলে প্রশাসনকে জানালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে নয়জনকে গ্রেপ্তার করে।

হোটেলটির মালিক হাসিব আহসান খান বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে ২০-২২ জন যুবক ও যুবতী হোটেলে প্রবেশ করে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে হোটেলটিতে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলে—এমন অভিযোগ তুলে ভাঙচুর করা হবে বলেও তারা হুমকি দেয়। তারা হোটেলে তল্লাশি চালায়। পরে ক্যাশে থাকা এক লাখ টাকা নিয়ে নেয়। বাকি চার লাখ টাকার জন্য জোরাজুরির একপর্যায়ে প্রশাসন এসে তাদের চাঁদাবাজির টাকাসহ গ্রেপ্তার করে।’

উত্তরার দিয়াবাড়ী আর্মি ক্যাম্পের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে হোটেলে চাঁদাবাজির অভিযোগে দুই তরুণী ও সাত যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য উত্তরা পশ্চিম থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘বেআইনি জনতাবদ্ধে অনধিকার প্রবেশ করে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের একটি হোটেলে চাঁদাবাজির অভিযোগে দুই তরুণীসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকালে তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ৪০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, চাঁদাবাজির ঘটনায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা তিন-চারজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানো হলে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন...