উদ্বোধনের অপেক্ষায় ‘মোংলা অয়েল ইনস্টলেশন’

পিবিএ,বাগেরহাট: প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের অপেক্ষায় এখন মোংলা সমুদ্র বন্দর এলাকায় ২০৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানী তেল স্টেশন ‘মোংলা অয়েল ইনস্টলেশন’।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলেই যেকোন দিন এই কেন্দ্রটি উদ্ধোধনের জন্য প্রস্তুত রযেছে। সরকারের জনগুরুত্বপূর্ন প্রকল্পের আওতায় এক লাখ মেট্রিক টন ধারন ক্ষমতার মোংলা অয়েল ইনস্টলেশন কেন্দ্রটির সব নির্মাণ কাজ গত মাসেই শেষ হয়েছে। এ কেন্দ্রে মজুত ও সংরক্ষন করা যাবে সকল প্রকার জ্বালানী তেল। আর এখান থেকে দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজসহ সকল প্রকার নৌযানে সরবরাহ করা হবে জ্বালীনী তেল।

এ ছাড়া দেশের দক্ষিন উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠান পাবে জ্বালানী তেলের সুবিধা। মোংলা অয়েল ইনস্টলেশন কেন্দ্র চালু হওয়ার পর আর্ন্তজাতিক এই বন্দরে আসা বানিজ্যিক জাহাজ সমূহের জ্বালানী তেলের সংকট নিয়ে চলমান বিড়ম্বনা দূর হবে। পাশাপাশি দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে জ্বালানি তেলের সংকট অনেকটাই পূরণ হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সূত্র জানায়, চালনা পোট নামে ১৯৫০ সালে মোংলা সমুদ্র বন্দরের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতেই আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য সুবিধার পাশাপাশি দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ সমূহের জন্য জ্বালানী তেল সরবরাহের (বাঙ্কারিং) কোন সুবিধা না থাকায় এ বন্দরে জ্বালানী তেল ডিপো স্থাপনের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে। শিপিং কোম্পানি ও শিপিং এজেন্টসহ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মহলে এ দাবির মুখে বিপিসি ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মোংলা বন্দর এলাকায় ২১নং প্লটে ২৫ একর জমি বরাদ্দ নেয় । বরাদ্দকৃত জমিতে সরকার এক লাখ মেট্রিক টনের দ্বিতীয় তেল স্থাপনা ‘মোংলা অয়েল ইনস্টলেশন’ নির্মাণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এর প্রেক্ষিতে বিপিসি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ডিপিপি ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে অনুমোদিত হয়। পরবর্তিতে শুধুমাত্র একটি সাইন বোড ঝুলিয়ে রাখা হয় এখানে। নানা জটিলতায় আটকে পড়ে এ প্রকল্পের কাজ। ২০১২ সালে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে প্রকৌশলী মো. মোছাদ্দেক হোসেনকে নিয়োগ দেন। ২০১২ সালের ৯ জুলাই সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের পর প্রকল্প এলাকায় ভূমি উন্নয়নসহ ১ লাখ মেট্রিক টন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ১৪ টি পেট্রোলিয়াম স্টোরেজ ট্যাংক ও অটোগেজিং সিস্টেম স্থাপন, অত্যাধুনিক ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, সাবস্টেশন নির্মাণ ও ৪টি মেরিন লোডিং আর্ম ডলফিন অয়েল জেটি নির্মানসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও নিধারিত সময়ের আগেই সব নির্মান কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

বিপিসি জানায়, চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা’র ৩টি মেইন ইনস্টলেশন রয়েছে। বর্তমানে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেল এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়াতে তেল মজুদাগার বাড়ানোর প্রয়োজন। স্থান সংকুলানের অভাবে পতেঙ্গায় মেইন ইনস্টলেশনে মজুদাগার বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছেনা। এছাড়া পতেঙ্গার মেইন ইনস্টলেশনে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দেয়াসহ সারা দেশে জ্বালানি তেলের স্বাভাবিক সরবরাহ বজায় রাখতে মোংলা অয়েল ইনস্টলেশন দ্বিতীয় তেল স্থাপনা হিসেবে এই কেন্দ্রটি নির্মান করা হয়েছে। এই কেন্দ্র থেকে কোস্টাল ট্যাংকারের মাধ্যমে দৌলতপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল ডিপোসমূহ ও পাওয়ার প্লান্টসহ এ অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে। ট্যাংক লরির মাধ্যমে খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ পদ্মার এপারের জেলাসমূহে তেল সরবরাহ সহজতর হবে। তাছাড়াও বর্তমানে নির্মাণাধীন খুলনা- মোংলা রেল লাইন চালু হলে রেল ওয়াগানের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে। ফলে দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে জ্বালানি তেলের চাহিদা বহুলাংশে পূরণ করা সম্ভব। তদুপরি মোংলা বন্দরে আসা দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজে জ্বালানি তেল সরবরাহ সহজতর হবে। এছাড়াও সহজে জ্বালানি তেল প্রাপ্তির ফলে মোংলা বন্দরে আগত দেশী বিদেশী জাহাজ, ইপিজেড, বেজাসহ মোংলা বন্দর শিল্প এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে লাভবান হবে ও তাদের কার্যক্রমে ব্যাপক গতিশীলতার সঞ্চার করা যাবে।

বিপিসি’র মোংলা ওয়েল ইনস্টলেশন প্রকল্প রিচালক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, এ প্রকল্পটির মেয়াদ আগামি জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন যে কোন সময় এটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ কে এম ফারুক হাসান (বিএন) জানান, মোংলা তেল ডিপোটি চালু হলে এই বন্দরের বাণিজ্যিক জাহাজে তেল সরবরাহ নিশ্চিত হবে। দূর হবে দীর্ঘদিনের চলমান ভোগান্তি। আগে জ্বালানী তেলের অভাবে বানিজ্যিক জাহাজ সমূহকে দীর্ঘ সময় মোংলা বন্দরে অপেক্ষা করতে হবেনা।

পিবিএ/এসএইচ/হক

আরও পড়ুন...