পিবিএ,যবিপ্রবি: দপ্তরিক কাজে বাধা, কাউন্সিল শাখা হতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তাদের রুম থেকে বের করে দেওয়া, রিজেন্ট বোর্ড সম্পন্নে বাধা দেওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা করায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কর্মকর্তা সমিতির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে রিজেন্ট বোর্ডের ৭৭তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়া কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি এটিএম কামরুল হাসানকে (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার) দায়িত্ব প্রদান করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
আজ শনিবার সকাল ১০ টায় পদোন্নতি নীতিমালা, বেতনস্কেল প্রনয়ণ, করোনাকালীন ডিউ ডেট প্রদান সহ ১৪ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি। কিছু সময় কর্মবিরতির পর এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তা সমিতির নেতারা ১৪ দফা দাবি পেশ করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ের মত অর্থ কমিটির অনুমোদন ও রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে সহকারী রেজিস্ট্রার/সহকারী পরিচালক ও সমমানের পদের বেতন স্কেল ২৯০০০ টাকার পরিবর্তে ৩৫০০০ টাকা এবং উপ-রেজিস্ট্রার/উপ-পরিচালক ও সমমানের পদের বেতন স্কেল ৪৩০০০ টাকার পরিবর্তে ৫০০০০ টাকার স্কেল নির্ধারণ করার দাবি জানান তারা। কর্মকর্তাদের সমগ্র চাকুরী জীবনে তিনটি পদোন্নতি প্রদান, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুসারে দপ্তর প্রধানগণ চাকুরীজীবনে তৃতীয় গ্রেডের সর্বশেষ ধাপ অতিক্রম করলে দ্বিতীয় গ্রেড প্রদান করার দাবি জানানো হয়। তাছাড়া করোনার অতিমারীকালীন সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাগণের অবিলম্বে ডিউ ডেট প্রদান করে জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠ সমতা বিধান করা, পদোন্নতির ক্ষেত্রে পূর্বেও সকল শর্ত মওকুফ করা এবং নতুন কোনো অযৌক্তিক শর্ত প্রণয়ন না করা, পূর্বে বিজ্ঞপিত সকল শূণ্য পদে কর্মকর্তা নিয়োগ সম্পন্নকরন ও নানাবিধ জটিলতায় পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তাগনের পদোন্নতি প্রদানের জোর দাবি জানানো হয়। এছাড়া কর্মকর্তা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী হেলালুল ইসলাম কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে স্নাতকোত্তরে ভর্তিতে পেশাজিবী ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করার পরও ভর্তিতে গরিমসি করে ভর্তি না নেওয়ার কারন ব্যখ্যা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভর্তি সম্পন্ন করে ভর্তি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানান কর্মকর্তাবৃন্দ।
কর্মকর্তা সমিতির দাবি-দাওয়া, কর্মবিরতি ও উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, কর্মকর্তাদের দাবির অধিকাংশই পূর্বে মেনে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদকের ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ভর্তি কারোনো সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব। এটা উপাচার্যের কোন বিষয় নয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার সনদে সমস্যা থাকায় তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান। এ সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ওই সমস্ত কর্মকর্তা কোন ধরনের শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবে না। তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডার না পাওয়ায় তারা এসকল কর্মকান্ড করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।
টেন্ডারবাজির অভিযোগে যবিপ্রবি কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি সহকারী রেজিস্ট্রার এটিএম কামরুল হাসান বলেন, কর্মকর্তা হিসাবে আমাদের নায্য দাবি ও অধিকার আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করতেই পারি। আমাদের দাবিগুলোর প্রেক্ষিতে উপাচার্য মহোদয় আমাদের সাথে আলোচনা করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ ছুড়ে দিলেন। আমরা উপাচার্যের এ বক্তব্যকে প্রত্যাখান করলাম।
এ বিষয়ে কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. হেলালুল ইসলাম বলেন, আমরা যদি উপাচার্যের কাছে টেন্ডার চাইতাম তাহলে স্যার তৎক্ষনাৎ আমাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিলেন না কেন? যখন আমাদের দাবিগুলোর ব্যাপারে স্যারকে অভিহিত করেছিলাম তখন তিনি দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কতিপয় উগ্রবাদী মতাদর্শী শিক্ষক আমাদের দাবিগুলো পূরণ হোক এটা চাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, গত ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ এমন কি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনেও যবিপ্রবি কোন বড় ধরনের অনুষ্টানের আয়োজন করতে পারেনি। গেট সংষ্কারের নামে বঙ্গবন্ধুর ছবিটাকে রড দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামের সামনে শেখ রাসেলের ভাষ্কর্য এবং শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের সামনে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভাষ্কর্য স্থাপন করা হোক। এসময় তিনি আরো বলেন, অধিকার আদায় করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে যেতে হয়েছে। ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। সেই তিনিই আবার সর্বোচ্চ সম্মানিত হয়েছেন। সুতরাং আমাদেরকে হেনস্তা করা হলেও আমাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
এরপূর্বে সকাল ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আগামীকাল থেকে ছুটির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড় হয়। এসময় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বলেন, এই ছুটি আমি দিতে পারিনা। এটা রিজেন্ট বোর্ড থেকে অনুমোদনের বিষয়। এসময় তিনি আরও বলেন, কতিপয় দুষ্কৃতকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডার না পাওয়ায় এসকল কর্মকান্ডে তাঁরা সরাসরি লিপ্ত হয়ে প্রশাসনের গতিরোধ করতে চাই। এসকল কথা তোমাদের জানা উচিত। কাজেই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কয়েকজন মানুষের কাছে এভাবে জিম্মি হতে পারে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমাজকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি। তোমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হও, বিশ্ববিদ্যালয়ে যত কলঙ্ক আছে সব কলঙ্ক আমরা মুছে দিবো।