উপজেলা নির্বাচন ঘিরে বিএনপিতে ভাঙনের সুর

BNP

আসিফ সোহান, পিবিএ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ‘ভরাডুবির’ পর আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীকে হারাতে পারে দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার সুযোগে এবং হামলা-মামলা থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেকে অন্যান্য দলে যোগ দিতে পারেন। তবে নেতা-কর্মীদের একাংশ মূলত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দল ছাড়ার কথা ভাবছেন। বিভিন্ন সূত্র এ তথ্য জানিয়ে বলছে, এমনটা ঘটলে বিএনপিকে আরো দুর্বল করতে সরকারি দলের চলমান ‘চেষ্টা’ অনেকটাই সফল হবে। বিএনপি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে যাবে কি না- দলটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো পরিষ্কার করা হয়নি। তবে বর্তমান সরকার ও এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিপক্ষে দলটির শীর্ষ নেতারা। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই বিকল্প চিন্তা করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

সূত্র বলছে, বিএনপির মাঠপর্যায়ের অনেক নেতাই উপজেলা নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। বিশেষ করে, যারা এখন উপজেলা চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছেন। যেহেতু বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যাবে না বলে মোটামুটি স্পষ্ট হয়েছে, এসব নেতা এখন দু’টি দলের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেছেন, যার একটি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ ও অন্যটি এইচএম এরশাদের ‘জাতীয় পার্টি’।

এ বিষয়ে বিকল্পধারার অন্যতম নেতা মাহী বি. চৌধুরী বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আমরা উপজেলা নির্বাচনে ভালো ফলাফল করব বলে আশাবাদী। বিএনপির অনেকেই এবার উপজেলা নির্বাচনে বিকল্পধারায় যোগ দিতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।’ বিএনপির যেসব প্রার্থী জনপ্রিয়, যোগ্য ও ভালো, বিকল্পধারার দরজা তাদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মাহী। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন নির্বাচনের আগেও অনেক প্রবীণ এবং ভালো নেতা বিএনপি ছেড়ে বিকল্পধারায় যোগ দিয়েছেন।’ বিকল্পধারা উপজেলা নির্বাচন খুব ভালোভাবে করবে জানিয়ে মাহী বি. চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূলে আমরা একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়তে চাই।’

সূত্রমতে, বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত সম্ভাব্য প্রার্থী অধ্যাপক বি. চৌধুরী এবং মাহী বি. চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বিএনপি যদি নির্বাচন না করে তাহলে তারা উপজেলা নির্বাচনের আগে বিকল্পধারায় যোগ দিতে আগ্রহী।

একইভাবে কিছু নেতা-কর্মী জাতীয় পার্টির সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং বরাবরই জাতীয় পার্টি স্থানীয় নির্বাচনে ভালো ফলাফল করে। এবার নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।’ বিএনপি থেকে কেউ জাতীয় পার্টিতে যোগ দেবে কি না- এমন প্রশ্নে জিএম কাদের বলেন, ‘এটা এখনো আমরা বলতে পারি না। বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায়, তাহলে অনেকেই বিভিন্ন দলে যোগ দিতে পারেন। সেখানে আমাদের সঙ্গে যাদের সামঞ্জস্য হয়, যাদের বনিবনা হবে তারা নিশ্চয়ই জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে পারেন। জাতীয় পার্টির নির্বাচনে একটি শক্তিশালী প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বিএনপি বা অন্য কোনো দল থেকে যারা আসতে চাইবে, নিশ্চয়ই তাদের বিবেচনা করবে।’

বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির পক্ষে একটি বড় যুক্তি দেখানো হয়েছিল- যদি তারা নির্বাচনে না যায় বিএনপির অনেক প্রার্থী বিকল্পধারা বা অন্য কোনো দলে যোগ দিতে পারেন। সেই যুক্তিতেই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবার উপজেলা নির্বাচনের আগে তারা বলেছে যে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। এই পরিস্থিতিতে উপজেলা মনোনয়ন প্রত্যাশী, বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রিয়, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাওয়া এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া নেতারা অন্য দল খুঁজছেন। ইতোমধ্যে তারা উল্লেখিত দু’টি দলে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক মনোনয়ন-বাণিজ্য হয়েছে। তখন থেকেই বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা হতাশ এবং যারা নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন তারা দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এরাই এখন উপজেলা নির্বাচনে বিকল্পধারা কিংবা জাতীয় পার্টির মতো অন্যান্য দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করার ব্যাপারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক না করুক, এই নির্বাচন ঘিরে যে বিএনপিতে একটা ভাঙন হচ্ছে তা নিশ্চিত।

তবে নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ (নবাবগঞ্জ-দোহার) আসনের বিএনপির প্রার্থিতা করা খন্দকার আবু আশফাক বলেন, ‘বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায়, সেটাই হবে ঠিক। কী হবে নির্বাচনে যেয়ে? ভোট তো আগের রাত্রেই হয়ে যাবে। যদিও দল এখনো কিছু জানায়নি, তারপরও বলব এই সরকার আর নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই।’

যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না এটা নিশ্চিত। কেউ যদি দল ত্যাগ করে বা শুধু নির্বাচনের লোভে অন্য দলে চলে যায়। সে রকম লোককে বিএনপিতে তো আর দরকার নেই।’

পিবিএ/এএস/জিজি

আরও পড়ুন...