উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী গণেশ পাগলের কুম্ভমেলা


পিবিএ,নড়াইল: শ্রী শ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে দেশের সর্ববৃহৎ উপমহাদেশের অন্যতম কুম্ভমেলা মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী দীঘিরপাড় মহামানব মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে।

প্রথমে এক রাতের মেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও বর্তমানে এ মেলা বসে তিনদিনের জন্য। ১৬৭ একর জমিতে দেড়শ বছরের ঐতিহাসিক কুম্ভমেলা উপলক্ষে দেশ-বিদেশের লাখো ভক্তদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গন। মেলা উপলক্ষে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন শৃংখলা বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রায় ৯ কিলোমিটার ব্যাপী মেলায় প্রায় ৫ সহস্রাধিক স্টল পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। এসকল স্টলে মিলছে দেশীয় ঐতিহ্য’র সকল পণ্য। সন্ধ্যা নাগাদ এ মেলায় অন্তত ১৫ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটবে বলে আশাবাদ মেলা কমিটির।

মেলা কমিটির সদস্যরা পিবিএ’কে জানান, সত্য যুগে দেবতা ও অসুরদের সমুদ্র মন্থনে যে অমৃতসুধা উঠেছিল তা চারটি কুম্ভ পাত্রে ভারতের হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী ও নাসিক এ চারটি স্থানে রাখা হয়েছিল। সেই আলোকে ১৩৭ বছর পূর্বে ১৩ জন সাধু ১৩ কেজি চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে ১৩ই জ্যৈষ্ঠ জেলার রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড়ে ভারতের কুম্ভমেলাকে অনুসরণ করে এ মেলার আয়োজন করেন। সেই থেকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড় শ্রী শ্রী গনেশ পাগল সেবাশ্রমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এক রাতের মেলা হলেও চলে তিন থেকে পাঁচ দিন ব্যাপী। বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, চিটাগং, রংপুর,যশোর, খুলনা,ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, গৌরনদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাধু সন্যাসী ও ভক্তবৃন্দরা দলে দলে ঢাকঢোল বাজিয়ে জয় হরিবল ধ্বনি করতে করতে নাচ-গান করে বাসে, ট্রাকে, ট্রলারে ও পদব্রজে এ মেলা প্রাঙ্গনে আসতে থাকে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপাল থেকেও বহু ভক্তবৃন্দ আসে এতিহ্যবাহী এ কামনার মেলায়। এ মেলায় আসা হাজার হাজার সাধু সন্যাসী ও তার ভক্তরা একতারা আর দোতারায় সুর দিয়ে সারা রাত মেতে থাকেন। যেন এক মিলন মেলায় রুপ নেয় এই কুম্ভমেলা। তিল ধারণের ঠাই ছিল না মেলার আশপাশের এলাকা।

দেশ বিদেশ থেকে আসা এসব সাধু সন্যাসী ও ভক্তরা প্রার্থনা, আরাধনা, পূজা-অর্চনা, ধর্মীয় সঙ্গীত, নৃত্য-বাদ্য বাজনা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে রাত অতিবাহিত করেন। এ মেলা উপলক্ষে ৭ দিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছে দোকানিরা। বাঁশ বেতের শিল্প কারু কাজ খচিত গৃহস্থালী মালামাল, মৃৎ শিল্প বা মাটির তৈরি তৈজসপত্র,বাহারী মিস্টি, দৃষ্টি আকর্ষণীয় খেলনা ও বাহারী প্রসাধণী পণ্য দিয়ে সাজিয়ে তুলেছে কমপক্ষে ৫ সহস্রাধিক বিভিন্ন ধরনের স্টল।
মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণব কুমার বিশ্বাস পিবিএ’কে বলেন, মেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। মেলায় আগত ভক্তদের আপ্যায়ণের জন্য চিড়া, গুড়, চাল,ডাল ও খিচুরি প্রসাদের আয়োজন করা হয়েছে।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান পিবিএ’কে বলেন, মেলা শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগ থেকেই কদমবাড়ী মেলা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য পুলিশ প্রশাসন সজাগ রয়েছে।

মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ বিভাগ) উত্তম প্রসাদ পাঠক পিবিএ’কে জানান, আইন শৃংখলা রক্ষার জন্য তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ডিএসবি, ডিবি, র‌্যাব-৮ এর সদস্য ও সাদা পোষাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের তল্লাসী করাসহ আইন শৃংখলাবাহিনীর সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে গণেশ পাগলের কুম্ভমেলা উপলক্ষে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় মহাআনন্দ মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলার কান্দি ইউনিয়নে এ মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। কান্দি ইউনিয়নের সমাজসেবক তুষার মধু এ মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেন।

কান্দি ইউনিয়নের তালপুকুরিয়া থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে ধারাবাশাইল বাজারের দুর্গা মন্দির চত্বরে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে শ্রী শ্রী গণেশ পাগলের ভক্তবৃন্দ মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী গ্রামের অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলায় অংশগ্রহণের জন্য রওনা দেন।

সমাজসেবক তুষার মধু পিবিএ’কে বলেন, শ্রী শ্রী গণেশ পাগলের সেবাশ্রমে অনুষ্ঠিত কুম্ভমেলায় কান্দি ইউনিয়ন থেকে প্রায় ২ হাজার ভক্তবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন।

পিবিএ/ইউআর/এমএসএম

আরও পড়ুন...