নাজমুল হুসাইন,ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্যের নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনার রেশ না কাটতেই বিশ্ববিদ্য্যালয়ের রেজিস্ট্রারের (ভারপ্রাপ্ত) অর্থলেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ‘সাথী খাতুন’ নামক একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের চারটি কল রেকর্ড সম্বলিত একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে লেনদেন সংক্রান্ত ভিন্ন ভিন্ন কথোপকথন শোনা যায়। এ ঘটনার পরে আজ বিকেলে বিষয়টি নিয়ে ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে।
অডিও বিশ্লেষণে জানা যায়, একটি অডিও ক্লিপের মধ্যে আলাদা চারটি কল রেকর্ড একত্র করা রয়েছে। এই কল রেকর্ডগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পরিকল্পনা পরিচালক ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানের সাথে এক ঠিকাদারের অর্থলেনের আলাপন শোনা যায়। রেজিস্ট্রার ওই ঠিকাদারের কোনোকাজে সহযোগিতা করায় ঠিকাদার তাকে চারলাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে অডিওতে।
অডিওতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সাথে প্রথম কল রেকর্ডে ওই ঠিকাদারের বলতে শোনা যায়, আমি মঈন (ইসিএল থেকে)। স্যার আজকে ওটা জমা দিয়ে দিলাম কালকে ওই টাকাটা ক্যাশ হবে। তো টাকাটা কোথায়, কখন প্রেস করবো আমাকে বললে আমি সেইভাবে প্রিপারেশন নিয়ে নিতাম। এসময় আলী হাসান ৩টার সময় কুষ্টিয়া থেকে টাকা দিতে বলে। ঠিকাদার ৩টায় সময় পাবেনা বলে সাড়ে চারটায় ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়ার কথা রেজিস্ট্রারকে জানায়। এসময় ঠিকাদার টোটাল টাকাটাই পাবেন কিন্তু রেজিস্ট্রারের ৪ লাখ টাকা সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে ৫ টার মধ্যে পাবেন বলে জানান। এসময় রেজিস্ট্রার বলেন, ‘ফোনে এগুলো বলার দরকার নাই’। একথা শুনে ঠিকাদার সেভ জায়গায় আছে, কোনো সমস্যা হবে না বলে রেজিস্ট্রারকে আশ^স্ত করেন। পরে আবারো রেজিস্ট্রার ফোনে এসব কথা বলা যাবে না বলার জন্য ঠিকাদারকে সতর্ক করেন। তখন ঠিকাদার রেজিস্ট্রারকে পরে ফোন দেওয়ার কথা জানায়।
দ্বিতীয় কল রেকর্ডে ঠিকাদার রেজিস্ট্রারকে বলেন, ওটা (টাকা) ৪ টার দিকে মনে হয় পাবেন। তখন তিনি আবারো অর্থ লেনদেনের বিষয়টি ফোনে না বলার ব্যাপারে সতর্ক করেন। এসময় ঠিকাদার ফোনে সরাসরি কোনো কথা না বলে শুধু ইঙ্গিতের মাধ্যমে (আমার হয়ে গেছে, কোথায় আসবো) বলবেন বলে রেজিস্ট্রারকে আশ^স্ত করেন।
পরের কল রেকর্ডে রেজিস্ট্রার টাকার বিষয়ে কাজ হয়েছে কিনা ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসা করেন। তখন ঠিকাদার এখনো ব্যাংকে আছেন, কাজ শেষ হলেই তাকে জানাবেন বলে ওই অডিও ক্লিপে বলতে শোনা যায়। একইসাথে ঢাকার কনফরমেশনের জন্য ওই ঠিকাদার ব্যাংকে বসে আছেন বলে জানায়।
শেষের কল রেকর্ডে রেজিস্ট্রার ঠিকাদারের কাছে টাকার অবস্থা এবং আর কতক্ষণ লাগবে তা জানতে চান। এসময় ঠিকাদার আর আধাঘন্টার মতো লাগবে বলে রেজিস্ট্রারকে কোথাও বসে চা খেয়ে একটু অপেক্ষা করতে বলেন। ঠিকাদারকে ঢাকা থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে একটু সময় লেগেছে, আধা ঘন্টার মধ্যে হয়ে যাবে বলে রেজিস্ট্রারকে ওই জায়গায় বসার কথা বলেন। তখন ব্যাংক বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে বলে রেজিস্ট্রার ঠিকাদারকে তাগিদ দিতে শোনা যায় অডিওতে। এসময় ঠিকাদার বলেন, আর বইলেন না, ঢাকা থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়েছে। কিভাবে যে করাইছি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আপনারা চেক দিয়েছিলেন অনলাইনের চেক না, এটা হলো মেনুয়্যাল চেক। পরে রেজিস্ট্রার ঠিকাদারের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি অল্প একটু অপেক্ষা করেন, আসতেছি। ব্যাগে ভরতেছি (টাকা), প্লিজ একটু রাখেন।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, এটা সম্পূর্ণ এডিট করা। আমি আইনি পদক্ষেপ হিসেবে জিডি করছি। আমার সামাজিক মর্যাদা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এটা করা হয়েছে।
জিডি’র বিষয়টি নিশ্চিত করে ইবি থানার ওসি আননূর যায়েদ বিপ্লব বলেন, আজ বিকেলে এই বিষয়ে থানায় জিডি হয়েছে। তবে জিডি নম্বরটি এখন মনে নাই।
এরআগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক আলাপন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রেজিস্ট্রারের অর্থলেনদেনের আলাপন ছড়িয়ে পড়ায় আবারো ক্যাম্পাস জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।