পিবিএ,ঢাকা: উড়োচিঠি দিয়ে এক সময় ডাকাতি করত সংঘবদ্ধ ডাকাতরা। কবে, কখন ডাকাতি করা হবে তা চিঠিতে উল্লেখ থাকত। তাতে বাধা দিলে কী ধরনের শাস্তি হবে তাও উল্লেখ করা হতো। চিঠির কথা জানাজানি হলে অথবা ডাকাতিতে বাধা দেওয়া হলে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো অবস্থাপন্ন পরিবারের সদস্যদের। জ্বালিয়ে দেওয়া হতো বাড়িঘর।
খোদ রাজধানীতে সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতি নয়, উড়োচিঠিতে চাওয়া হয়েছে চাঁদা। ঈদসালামি ও পিকনিকের নামে স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন হোসাইন চিশতির বাড়িতে গত ২৭ মে ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে একটি উড়োচিঠি আসে। চিঠিতে নাম ব্যবহার করা হয় ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগ’-এর। চিঠিতে চাঁদা দেওয়ার ডেডলাইন নির্ধারণ করা হয় ২৬ রমজান। এ সময়ের মধ্যে চাঁদা না দিলে বড় ধরনের ক্ষতির হুমকি দেওয়া হয়।
রাজধানীর কদমতলী থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান মহিউদ্দিন চিশতি। করেন সাধারণ ডায়েরিও; কিন্তু পরিবারটিকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি পুলিশ। দাবি করা চাঁদার ২ লাখ টাকা না পেয়ে এবং ঘটনা জানাজানি করায় গত ৬ জুন ভোরে কদমতলীর পশ্চিম মোহাম্মদবাগ এলাকার মহিউদ্দিন চিশতির ৬ তলা ভবনে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
মসজিদে নামাজ পড়ে বের হওয়া মুসল্লিদের সহায়তায় ভবনে বসবাসকারী শতাধিক বাসিন্দা বেঁচে গেলেও পুড়ে ছাই হয়ে যায় নিচতলার গ্যারেজে রাখা মহিউদ্দিন চিশতির মোটরসাইকেলটি। ওই দিনই এ বিষয়ে কদমতলী থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়।
শুক্রবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জড়িত কাউকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উড়োচিঠির জবাব না দেওয়ায় এমন পরিণতির খবর ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে কদমতলীর বাসিন্দাদের মাঝে। পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মহিউদ্দিন চিশতি জানান, ২৭ মে এশার নামাজের পর তার নিচতলার ভাড়াটিয়া মুদি দোকানি মিজানের কাছে একটি সাদা খাম ধরিয়ে দেয় জিন্স প্যান্ট ও সাদা শার্ট পরা আনুমানিক ২২ বছর বয়সী এক যুবক।
বিনয়ের সঙ্গে তিনি খামটি বাড়ির মালিক মহিউদ্দিন চিশতির স্ত্রীর কাছে দিতে বলেন। রাত বেশি হওয়ায় সে দিন চিঠিটি প্রাপকের কাছে না দিলেও পরদিন দেন। চিঠির খামের বাঁ পাশে লেখা ‘ঈদ মোবারক, ছাত্রলীগ, যুবলীগ কর্মীবৃন্দ; কদমতলী থানা।’
ডানপাশে লেখা ছিল বাড়ির ঠিকানা। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘সম্মানিত আপু, আসসালামু আলাইকুম। আপু আমাদের ঈদের বকশিশ ও পিকনিকে যাব, ২ লাখ টাকা দিবেন ২৬ রমজানের মধ্যে। কোনো ঝামেলা করবেন না। আমাদের লোক আপনার বাড়ির নিচে অথবা ওয়াসা ক্লাবের সামনে থাকবে। বার বার বলতেছি, কোনো রকম ঝামেলা করবেন না, এতে ক্ষতি হবে আপনার। ইতি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীবৃন্দ। পি.টি.ও।’ চিঠির অপর পৃষ্ঠার পাশে লেখা রয়েছে ‘আপু, আমাদের লোকেরা ৮-১১ পর্যন্ত থাকবে। প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা। ২৫-২৬ রমজানের মধ্যে থাকবে।’ এই পৃষ্ঠার নিচে লেখা ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-যুবলীগ, কদমতলী থানা।’
উড়োচিঠির ব্যাপারে ৩০ মে কদমতলী থানায় জিডি করেন মহিউদ্দিন চিশতি। পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদেরও বিষয়টি তিনি জানান। এ বিষয়ে কেউই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো বাবুল গাজী নামে মহিউদ্দিন চিশতির এক ভাড়াটিয়াকে অচেনা এক যুবক শাসিয়ে বলে, ‘তোর বোন আমাদের কথা শুনল না। এখন টের পাবে।’ এই হুমকির একদিন পরই দুর্বৃত্তরা মহিউদ্দিন চিশতির বাড়িতে আগুন দেয়। অবশ্য পেট্রল বহন করা বোতলটি উদ্ধার করে পুলিশ।
ভবনে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল জানান, অগ্নিকান্ডের পর ভবনের বাইরে থেকে মসজিদের মুসল্লি ও বাসিন্দাদের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। উড়োচিঠিতে ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগ’-এর নাম ব্যবহার করে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. খোরশেদ আলম বাবু মাস্টার বলেন, ‘এ এলাকায় চাঁদাবাজির ঘটনা নেই বললেই চলে।
আর ছাত্রলীগ-যুবলীগের নামে সে তো অসম্ভব ব্যাপার। দুর্বৃত্তরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের সুনাম নষ্ট করতেই নাম ব্যবহার করেছে বলে আমি মনে করি।’ কদমতলী থানার ওসি মো. জামাল উদ্দিন মীর বলেন, এ ঘটনায় এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। ভুক্তভোগীর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও অগ্নিকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
পিবিএ/আরআই