একাগ্রতা বাড়াবেন কীভাবে

পিবিএ ডেস্ক: আজকের দিনে ইঁদুর দৌড় এর ভিড়ে ছাত্রদের মধ্যে সবথেকে বড় সমস্যা হল হাজার একটা পাঠক্রম পড়ে মনে রাখা এবং সফলভাবে তা নিজের ভবিষ্যতের কাজে লাগানো।বর্তমান ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা দিনে তারে বেড়েছে তাতে নতুন নতুন জিনিস রোজ পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ফলে না চাইতেও স্কুল এবং কলেজের ছাত্রদের বেশি করে পড়াশোনা করতে হচ্ছে এবং তা মনে রাখতে হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রেই তারা পড়লেও ভুলে যাচ্ছে অথবা এক ভাবে বেশিক্ষণ মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারছে না। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করার জন্য ধ্যান করা খুবই জরুরি। অনেক সময় হয় যে ভালো করে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে হাজার একটা পাঠক্রম একটা আরেকটার উপর চেপে তালগোল পাকিয়ে যায়। এই ঘেঁটে যাওয়া আটকাতে ধ্যান ছাত্রাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে একজন ছাত্র যদি তার প্রতিদিনের নিয়মে অল্প খানিকক্ষণের জন্য দান করে তাহলে তার মনোযোগ এবং একাগ্রতা অনেকটাই বেড়ে যায় যে কোন কাজের ক্ষেত্রে এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে। আজকের এই আলোচনায় তাই দেখে নেওয়া যাক যে ছাত্রাবস্থায় ধ্যান মনোযোগ এবং একাগ্রতা কিভাবে বাড়াতে সাহায্য করে।

১. নিজের বিষয়কে ভালোবাসো

যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছো বা যে বিষয় নিজের পাঠক্রমের অন্তর্গত হয়েছে এবং তা পড়তে হবে সবার আগে তাকে ভালোবাসা উচিত। বিষয়টি ভালবাসলে সেই বিষয়ে তোমাকে ভালোবাসবে। ফলে সেই বিষয়ে পড়ে মনে রাখার জন্য বারবার একই জিনিস পড়তে হবে না।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে সিনেমা দেখার জন্য বা ক্রিকেট খেলার জন্য আমাদেরকে আলাদা করে মনোযোগ দিতে হয় না তার কারণ নিজের ভেতর থেকে সেই সিনেমা দেখা বা সেই খেলার জন্য ভালোবাসা জন্মে যায় ফলে স্বাভাবিকভাবে একাগ্রতা মনোযোগ চলে আসে।

২. ভালো ঘুম

আমাদের শরীরে যে কোষ গুলো আছে তাদের ও বিশ্রামের দরকার। তারা যদি বিশ্রাম না পায় তাহলে অল্প পরিশ্রমে আমরা হাঁপিয়ে পড়বো। ছাত্রাবস্থায় পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে ঘুমের যথেষ্ট দরকার। তিনে ছয় থেকে সাত ঘণ্টার কম ঘুমালে শরীরের কোষগুলো পরিমিত অক্সিজেন পায় না ফলে ক্লান্ত হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে চেষ্টা করলেও মনোযোগ বা একাগ্রতা বাড়ানো সম্ভব হয় না।

৩. ভালো খাবার খান

ভালো ঘুমের পাশাপাশি ভালো খাবার খাওয়ার প্রয়োজন আছে।শুধুমাত্র ধ্যান করে বা ঘুমিয়ে শরীরের শক্তি যোগান দেয়া সম্ভব নয় যার জন্য সঠিক এবং পরিমিত খাবার খাওয়ার দরকার। সাধারণ চকলেট আইসক্রিম ফাস্টফুড খেলে হয়তো মন ভরে ঠিকই কিন্তু তার শরীরের জন্য হানিকারক। তাই অবশ্যই ভালো খাবার খাওয়ার একান্ত দরকার যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুন শরীরে বজায় থাকে।

৪. ক্লান্তি দূর করতে ধ্যান

প্রতিদিনের রুটিনে যেমন খাওয়া-দাওয়া ঘুম পড়াশোনা থাকা দরকার, ঠিক তেমনি একটা সময় করে ধ্যান করার অবশ্যই দরকার। প্রতিদিনের নিয়মে যদি ধ্যান রাখা হয় সে যতই কম সময়ের জন্য হোক না কেন, তা মনের একাগ্রতা পাঠাতে সক্ষম হয়। পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটি একটা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে প্রতিদিনের রুটিনে যদি খুব কম করে কুড়ি মিনিট ধ্যান করা হয় তাহলে তা মনোযোগ এবং একাগ্রতা বাড়ানোর জন্য খুবই উপকারী। এর সাথে প্রতিদিন সকাল বেলায় উঠে যদি সূর্য নমস্কার এবং সর্বাঙ্গাসন করা হয় তাহলে তা আমাদের একাগ্রতা যেমন বাড়ায় সাথে সাথে শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন বা রক্ত পরিবহন ভালো হয়।

৫. প্রাণায়াম

প্রতিদিনের যোগাভ্যাস এর সাথে সাথে মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ানো ও নিজের মস্তিষ্কের উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য প্রাণায়াম করা একান্ত দরকার আছে। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই মিনিট যদি প্রাণায়াম করা হয় একাগ্রতার সাথে তাহলে তা আমাদের মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটার কে উন্নত করে।

৬. সুদর্শন ক্রিয়া

প্রাচীনকাল থেকে মনে করা হয় যে আমাদের শরীরে এই মহাজাগতিক বিশ্বের প্রভাব বিদ্যমান। যে কারণে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান এর উপরে নির্ভর করে আমাদের ভালো খারাপ। তাই অনেকেই সুদর্শন ক্রিয়া করার জন্য উপদেশ দিয়ে থাকেন। এটা যেমন শরীর এবং মন ভালো থাকে, পরিষ্কার হয়, তেমনি মহাবিশ্বের সাথে আমাদের শরীরের ছন্দ পতন যাতে না হয় তার দিকে নজর রাখে। শুধু তাই নয় এর সাথে সাথে যে কোন বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যাতে পরিষ্কার হয় তার খেয়াল রাখে।

৭. ধ্যান কে অভ্যেসে পরিণত করুন

আগেই বলা হয়েছে যে ধ্যান আমাদের মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই ধ্যানকে প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। একদিন করে কেউ যদি মনে করে যে তার মনোযোগ এবং একাগ্রতা বিপুল হারে উন্নীত হবে তা কিন্তু নয়। প্রতিদিনের অভ্যাস আস্তে আসতে একজনের একাগ্রতা এবং যেকোন বিষয়ের প্রতি পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি আনতে সক্ষম।

৮. ওয়র্কশপে যান

এখন অনেক ক্ষেত্রে ধ্যান যে আমাদের জীবনে অত্যন্ত জরুরী খাওয়া পরা বা শোয়ার মতই, তা বুঝে বিভিন্ন জায়গায় কর্মশালা খোলা হচ্ছে যেখানে কোন বাবা-মা তা নিজের জন্য অথবা তার ছেলে মেয়ের জন্য যারা চান তাদের ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা একাগ্রতা বাড়ুক, নিয়ে যেতে পারেন।

 

পিবিএ/বিএইচ

আরও পড়ুন...