১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘একাত্তরে আপনাদের ভূমিকা কী ছিল? আপনারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন? আপনারা কোন সেক্টর কমান্ডারের আন্ডারে যুদ্ধ করেছেন?’
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিন উপজেলার হুমায়ূন রশীদ চত্বরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের পক্ষ থেকে যুব এশিয়া কাপ বিজয়ী দলের সদস্য ইকবাল হোসেনের পরিবারকে উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল আমি দেখলাম, এটা আমার কাছে বিস্ময় লেগেছে, দেশপ্রেমী তারা আর সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী দেশপ্রেমী নিঃসন্দেহে। কারণ, তাদের পূর্বপুরুষেরা এই বাংলাদেশ নির্মাণে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। তাই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন মেজর জিয়াউর রহমান, যিনি অন্যতম একজন সেক্টর কমান্ডার, যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। আরও মেজর যাঁরা ছিলেন সেক্টর কমান্ডার সেই সময়, পরে তাঁরা জেনারেল হয়েছেন। অনেকেই তাঁরা রয়েছেন। পরবর্তী পর্যায়ে আমরা দেখেছি, জনগণ যখন অত্যাচারিত হয়েছে, সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমনটি ২০২৪-এর যে গণ-অভ্যুত্থান, সেখানেও উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে।’
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আমি সেই রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, ইসলামপন্থী সেই রাজনৈতিক দল, একাত্তরে আপনাদের ভূমিকা কী ছিল? আপনারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন? আপনারা কোন সেক্টর কমান্ডারের আন্ডারে যুদ্ধ করেছেন? বাংলাদেশে কেউ দেশপ্রেমী নেই, শুধু একটি রাজনৈতিক দল দেশপ্রেমী, এ ধরনের বিভ্রান্তি আপনারা তৈরি করলে মানুষ হাসবে। মানুষ হাসি ছাড়া আর কিছু দেবে না।’
রিজভী আরও বলেন, ‘আমরা খবরের কাগজে দেখতে পাচ্ছি, জুলাই-আগস্টে হত্যার বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি আমাদের প্রত্যেকের শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু এই সরকার তো সর্বজনীন সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের পক্ষের সরকার। শুনলাম, জুলাই–আগস্টে যাঁরা মারা গিয়েছেন বা অত্যাচারিত হয়েছেন, শুধু সেই সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। ইলিয়াস আলীর বিচার হবে না? চৌধুরী হারুনের বিচার হবে না? সাড়ে ১৫ বছরে যাঁরা ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন, তাঁদের বিচার করবেন না।…আমরা জুলাই-আগস্টের মহিমান্বিত আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের হত্যাকারীদের যেমন বিচার হতে হবে, ঠিক সাড়ে ১৫ বছর গণতন্ত্রকে উদ্ধারের জন্য যাঁরা অকাতরে জীবন দিয়েছেন, যাঁরা নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের জন্যও বিচার হতে হবে।’
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজকে দেশপ্রেমী নিয়ে কথা হয়, শুনলে মুখে হাসি পায়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যাদের ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল, তারা পালিয়ে গেল। যে মানুষ সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে, ইউনিফর্ম সার্ভিসে থেকে নাবালক দুটি ছেলে ও নিজের সহধর্মিণীর কথা মনে না রেখে, শুধু দেশপ্রেমের টানে বিদ্রোহ করলেন এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। পালিয়ে থিয়েটার রোডে যাননি। অস্ত্র হাতে এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে এই বাংলাদেশে থেকে তাঁরা যুদ্ধ করেছেন। এই সিলেট তার সাক্ষী। এমসি কলেজ প্রাঙ্গণে সর্বশেষ যুদ্ধ হয়েছিল। সেখানে শহীদ জিয়ার সেক্টরের সদস্যরা ছিলেন। কাজেই ইতিহাস সাক্ষী দেবে, দেশপ্রেমের পরীক্ষায় কারা উত্তীর্ণ। আমরা বলতে চাই না। বিএনপি হচ্ছে সেই দল, যারা মানুষের পাশে থাকে।’
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী ও কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হকের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আশরাফ উদ্দিন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, কলিম উদ্দিন মিলন, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম নাসের রহমান, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।