একুশে পদক-টদকে আমি কখনোই আগ্রহী না : মাকসুদুল হক

Mac
মাকসুদুল হক

গানের মানুষ মাকসুদুল হক। ব্যান্ড সঙ্গীতের প্রবাদ পুরুষ বললেও খুব একটা অত্যুক্তি করা হবে না। তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, তিনি কখনো সস্তা কথার গান করেননি। তার লেখা গীতিকাব্য যেমন অসাধারণ তেমনি স্বতন্ত্র্য তার গায়কী। এই দুইয়ে মিলে মিলে তিনি পৌছে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বার্তা সংস্থা পিবিএ-এর পক্ষ থেকে

সঙ্গীতের নানা প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা বলেছেন জিয়াউল জিয়া

 

প্রশ্ন : মাকসুদ ও ঢাকা’র বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে জানবো-

মাকসুদুল হক : আমরা গানের দল, গানই করছি। পঞ্চম অ্যালবামের কাজ চলছে। রেকর্ডিং চলছে। রিলিজ টাইমটা এখনই বলতে চাচ্ছি না। দেখা যাক কি হয়।

প্রশ্ন : এই পঞ্চম অ্যালবামের ফিজিক্যাল সিডি কি শ্রোতারা পাবে ?

মাকসুদুল হক : ফিজিক্যাল সিডি যেখান থেকে প্রিন্ট হতো সেই একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। গান অপার্থিব সম্পদ। এটা দেখতে পাওয়া যায় না। আমাদের কাজের নিদর্শন এটা। যেকারনে ফিজিক্যাল সিডিটা আসলেই দরকার।

প্রশ্ন : অনেকেই যে বলে আর কখনোই ফিজিক্যাল সিডি ফিরবে না। গান শোনার ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে নাকি এখন অনলাইন মাধ্যমই ভরসা ?

মাকসুদুল হক : যারা এটা বলে, তারা না জেনে বলে। ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরে দেখেছি আমি। ওখানকার ট্রেন্ডটা আমার জানা আছে। ওখানে ফিজিক্যাল সিডি তো আছেই উল্টো এখন লংপ্লে (এলপি) প্রকাশিত হচ্ছে সেই সাদাকালো যুগের মতো। ফিতা ক্যাসেটের অস্তিত্বও বিদ্যমান। এটাই এখন ওখানকার ট্রেন্ড। আমাদের দেশে তো ওদের সব ট্রেন্ডই আমদানি হয়। যদিও এই ট্রেন্ডটা আমদানি হলে গানের জন্য ইতিবাচকই হবে। যেকারণে আমি আশা করছি খুব শিঘ্রই ফিজিক্যাল সিডির যুগটা আবার ফিরবে।

 

প্রশ্ন : অনলাইনে গান শোনার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি কেমন ?

মাকসুদুল হক : শোনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি চরম, কিন্তু কেনার ক্ষেত্রে জিরো-ই বলা যায়। আমরা অনলাইনে গাড়ি, বাড়ি, প্রসাধনী কিনতে পারি, কিন্তু ১০ টাকা দিয়ে গান কিনতে মন চায় না। তখন এটাকে খুব বেশি মনে হয়। এতে করে আমরা শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, আগেও হয়েছি। সঙ্গীত শিল্পের বিকাশে শ্রোতার ভূমিকা অপরিসীম। তার উদ্দেশ্য যদি ভাল হয় তবে তার সুফলে ভর করে এই শিল্প সমানের দিকে এগোয়। এখন তারা যদি ফ্রি গান শুনতে চায় তাহলে তো সমস্যা।

 

প্রশ্ন : দেশব্যাপী যে পরিমান কনসার্ট হচ্ছে তাতে আপনি সন্তুষ্ট ?

মাকসুদুল হক : হ্যাঁ, সন্তুষ্ট। তবে, আরো বেশি কনসার্ট হতে পারতো এবং টিকেট ভিত্তিক কনসার্ট হতে পারতো। এখন যে ধরনের কনসার্ট হচ্ছে তা হলো কোন বহুজাতিক কোম্পানীর পণ্যকে মানুষের কাছে পরিচিত করার নিমিত্তে কনসার্টে স্পন্সর করছে তারা। এতে করে যেটা হচ্ছে তা হলো শ্রোতাদের টিকেট কেটে কনসার্ট দেখার অভ্যাস নষ্ট হয়ে ফ্রি’তে কনসার্ট দেখার বদঅভ্যাস তৈরী হচ্ছে এবং হয়েছে। ওই যে বললাম মানুষ ফ্রি গান শুনতে চায়। ওটার কারণ হিসেবে এটার ইমপ্যাক্টও আছে কিন্তু। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেরকম কনসার্ট চাই, যেখানে স্পন্সর থাকতে পারে কিন্তু মানুষ টিকেট কিনে কনসার্ট দেখবে। আর এটা আমার কোন অহেতুক চাওয়া নয়। বাইরের দেশগুলোর মানুষ তো টিকেট কিনেই কনসার্টে যাচ্ছে, তাই না ? বহুজাতিক কোম্পানীগুলো যখন বিদেশী শিল্পী নিয়ে আসেন তখন তো ভীষণ দামে টিকেট করে। দেশী শিল্পীদের ওপর তাদের ভরসা এত কম কেন ? আমাদের গান কি শ্রোতারা শুনবে না ?

 

প্রশ্ন : টিকেট কিনে শ্রোতারা কনসার্টে এসেছেন এটা প্রমানিত। এখন ‘ফ্রি’তে শোনার বদঅভ্যাস তৈরী হয়েছে। এসময় টিকেট শো করলে শ্রোতারা আসবেন বলে মনে করেন ?

মাকসুদুল হক : বামবা অটিজম দিবসে যে কনসার্ট করলো সেটা তো বেশ ভালোই হয়েছে। আর্মি স্টেডিয়ামে করেছে। ভালো ক্রাউড হয়েছে। চলতে থাকলে শ্রোতারা অবশ্যই আসবেন। আমাদের দেশের মানুষ গান পাগল। এটা যেহেতু প্রমানিত তাই দুশ্চিন্তার কারণ নেই।

 

প্রশ্ন : সঙ্গীতে প্রতিবছর একজনকে একুশে পদক দেওয়া হোক – এই দাবির সঙ্গে আপনি একমত ?

মাকসুদুল হক : একুশে পদক-টদকে আমি কখনোই আগ্রহী না। কারণ এটা সরকারি বিষয়। এক্ষেত্রে তাদের আগ্রহী হতে হবে। তারা সিনসিয়ার না এক্ষেত্রে। সিনসিয়ার হলে তো আজম খানের মতো শিল্পী তার জীবদ্দশায়ই এই পদক পেতেন। এ নিয়ে আমার কোন আক্ষেপও নেই। কারন, পদক মানে সম্মাননা। গানের মাধ্যমে শিল্পীরা গণমানুষের যে ভালবাসা ও সম্মান পান তার যেকোন সরকারি পদকের চেয়ে কম না।

 

প্রশ্ন : আপনার জনপ্রিয় গানের পাত্রী ‘মৌসুমী’ কি কোন কল্পিত চরিত্র নাকি এর অস্তিত্ব আছে ?

মাকসুদুল হক : আমি যখনই কোন গান লিখি বা গাই অবশ্যই সেখানে কেউ না কেউ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। হ্যাঁ, ‘মৌসুমী’ অবশ্যই এক্সিস্ট করে। তবে, সে কে? কোথায় থাকে ? -এসব নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না।

আরও পড়ুন...