সমকামিতা ও স্কুল ছাত্রীকে হত্যার অভিযোগে মানববন্ধন

পিবিএ,নাটোর: নাটোরে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী সাদিয়া হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সমকামী নারী রুপা ওরফে টিকটক রুপের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন এবং সংবাদ সম্মেলন করেছে বড়গাছা এলাকাবাসী । শনিবার সকালে শহরের কানাইখালী ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী অংশ নেন । এ সময় বক্তব্য রাখেন নিহত সাদিয়ার রিকশাচালক বাবা আব্দুল কুদ্দুস,চাচা ইদ্রিস আলী,গণমাধ্যমকর্মী নাসিম উদ্দীন নাসিম,শাহরিয়ার আলম মান্না । মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানান।

নাটোরে এক যুবতীর বিরুদ্ধে পুরুষের পোষাক পরে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে সমকামীতায় অ্যভস্ত করাসহ এক স্কুল ছাত্রীকে গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করিয়ে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা দিতে গেলে মামলা নেয়নি নাটোর থানা পুলিশ। আজ শনিবার দুপুরে নাটোর ইউনাইটেড প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মৃত স্কুল ছাত্রীর বাবা নাটোর শহরের চৌধুরী বড়গাছা মহল্লার আব্দুল কুদ্দুস এই অভিযোগ করেন। পরে প্রেস ক্লাবের সামনে সাদিয়া হত্যার বচিারের দাবিতে মানব বন্ধন করেন এলাকিাবাসী। তারা সাদিয়া হত্যার বিচার দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় নাটোর শহরের উপর বাজার এলাকার রুবেল হোসেনের মেয়ে রুপা বন্ধুদের বাইক আর ক্যামেরা ধার নিয়ে টিকটক ভিডিও নির্মাণ করে নিজেকে রুপস ভাই বলে পরিচয় দিতো । নিজেকে নাটোরের টিকটক আপু ভাই বলে জাহির করা ব্যক্তিটি আসলে একজন নারী।

রুপা খাতুন নামের এই মেয়েটির কাজই ছিল নিজেকে সুদর্শন পুরুষ দাবী করে স্কুল কলেজগামী ছাত্রীদের প্রেমের প্রস্তাব দেয়া। নিজেকে ধনীর সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়ে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিলাসী জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। নিজেকে বাংলাদেশ জুটমিল করপোরেশন বিজেএমসি অফিসার হিসেবে পরিচয় দিতো । তাতেও রাজি না হলে মেয়েটি নিজের দুই হাত কেটে এবং বিষ খেয়ে একাধিকবার প্রমাণ দিতো সে খাঁটি প্রেমিক। প্রতিরাতে শহরের কালিবাড়ি দীঘির মাছ চুরি করে বিক্রি করে ইয়াবা কেনা এবং নিত্যনতুন প্রেমিকাদের পিছনে খরচ করতো। আপাদমস্তক নারী হলেও চলনে, বলনে, পোষাকে সুদর্শন পুরুষ মনে হতো তাকে। তাই অনেক মেয়েই তার সাথে স¤পর্ক জড়িয়েছে।

এক পর্যায়ে নারীত্বের বিষয়টা জানতে পেরে রুপাকে ছেড়ে গেছে। কিন্তু এরই মধ্যে ক্ষতি হওয়ার যা হয়ে গেছে।সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয় প্রতিদিন শহরের স্কুল ও কলেজ ছুটির সময় সে কয়েকজন বখাটে বন্ধুদের নিয়ে মেয়েদের উত্যক্ত করা ছিল কাজ।। প্রতিদিন বিকেলে স্টেডিয়ামে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, উন্মুক্ত স্থানে সিগারেট খাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুই ছিল পুরুষের মতো।। ২০ বছর বয়সী রুপস বন্ধুদের সাথে মিশে প্রথমে ইয়াবা,গাঁজা সেবন করা শুরু করে।

কপর্যায়ে সমকামিতায় আসক্ত হয়ে পরে।আব্দুল কুদ্দুস জানান, ৫ মাস আগে তার ছেলে সনির সাথে রুপার বোনের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। স¤পর্কে বিয়াইন হওয়ার সুযোগে রুপা তার মেয়ে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী কিশোরী সাদিয়াকে সমকামিতার স¤পর্কে প্রলুব্ধ করে ।

এক সপ্তাহ আগে সাদিয়াকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তারা জানতে পারে রুপা তার মেয়েক নিয়ে পালিয়েছে। পরে সাদিয়ার পরিবার বিষয়টি নিয়ে রুপার নামে সদর থানায় জিডি করে। পরে সাদিয়ার সন্ধান পেয়ে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। এরপর গত ১৬আগস্ট শনিবার রাত তিনটায় সবার অগোচরে বাসা থেকে পালিয়ে যায় সাদিয়া।

পরে তারা জানতে পারে রুপা তাদের মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে। বিষয়টি তাদের পরিবারকে জানানো হয়।সোমবার (১৭ আগস্ট)রুপার বাবা রুবেল সাদিয়ার মাকে ফোন করে জানান, আপনার মেয়েকে পাওয়া গেছে। আমার বাসায় এসে নিয়ে যান। তাৎক্ষনাৎ সাদিয়ার মা এবং আপন তিন চাচী রুপদের বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান রুপার বাবা,মা,দাদী লোহার রড এবং পাইপ দিয়ে সাদিয়াকে এলোপাথাড়ি পেটাচ্ছে।

তারা মেয়েকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে তাদের বাসায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। রুপার বাবারুবেল হোসেন বলেন, থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে এসে মেয়েকে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে রুপা এসে জোর করে সাদিয়ার মুখে গ্যাস ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দেয়। নিজেও খায়। এর কিছুক্ষণ পরে সাদিয়ার শরীরে বিষক্রীয়া শুরু হলে অনেক আকুতি মিনতি করেই সাদিয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে। কিন্তু রুপার পরিবার রাজি হয়নি। পরে অবস্থার অবনতি হলে সাদিয়াকে নিয়ে প্রথমে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে নেয়া হয়।নাটোর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাদিয়াকে রামেক হাসপাতালে প্রেরন করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালেই মারা যায় সাদিয়া। এ ব্যাপারে রাজপাড়া থানায় পুলিশ ইউডি মামলা করে।

সাদিয়ার বাবা অভিযোগ করেন এ বিষয়ে নাটোর থানায় হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। তারা বলেছে পোস্ট মর্টেম রিপোটর্রে পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আব্দুল কুদউদস এ বিষয়ে সাদিয়ার হথ্যা মামলা গ্রহণ এবং রুপা ও তার পরিবারের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেছন।সংবাদ সম্মেলনে সাদিয়ার বাবা আব্দুল কুদদস ছাড়াও মা এবং ভাই পারভেজ আলম ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রেস ক্লাবের সামনে সাদিয়া হথ্যার বিচারের দাবিতে মানব বন্ধন করা হয়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রুপার বাবা রুবেল হোসেন বলেন, সাদিয়া নিজেই গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করে আÍহত্যা করেছে এবং আমার মেয়ে রুপাকেও হত্যার চেষ্টা করেছে। এবিষয়ে আমরাও আইনের আশ্রয় নেব।

এ বিষয়ে নাটোর থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, এ ধরণের অভিযোগ নিয়ে নাটোর থানায় কেই আসেনি। তবে রাজাপাড়া থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। সুতরাং মামসলা না নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

পিবিএ/মোঃ রাশেদুল ইসলাম/এসডি

আরও পড়ুন...