বাদল সাহা,গোপালগঞ্জ: দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম টুঙ্গিপাড়া। ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ সবুজ শ্যামল ছায়ায় ঘেরা টুঙ্গিপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন এই গ্রামে। পুরোজীবন তাঁর কেটেছে বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে। আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। সারাজীবন ধরে চেয়েছেন বাঙালির জন্য পৃথক আবাসভূমি বাংলা নামক দেশের জন্য।
জানাগেছে, ৩৬০ বছর আগে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জের (বর্তমানে জেলা) অজপাড়া গাঁ টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপণ করেন বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষেরা। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জর টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বতর্মান সমাধী সৌধ কমপ্লেক্সে পাশের বাড়ীতে বেড়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। শৈশব আর কৈশর কেটেছে এই বাড়ীতেই। বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়েরা খাতুনের খুবই আদরের ছেলে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারা আদর করে ডাকতেন খোকা নামে। সব আদরই পেয়েছেন তিনি।
সেদিনের টুঙ্গিপাড়ার অজপাড়াগাঁয় জন্মগ্রহণ করা ‘খোকা’ নামের সেই শিশুটি পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। কিশোর বয়সেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাকে ভর্তি করা হয় সাত বছর বয়সে। সেই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে চতুর্থ শ্রেণীতে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিব প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তাঁর আজীবন সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষীও এ বাড়ীটি। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকে বাড়ীটি। ৯৬ তে সরকার গঠনের পর বাড়ীটি সংস্কার করে আওয়ামী লীগ সরকার।
২০১৪ সালে তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বাড়ীটি পুরানো কাঠামোয় সংস্কার করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৬ গত ১৮ এপ্রিল সংস্কৃতি মন্ত্রাণালয়ের পক্ষ থেকে কিভাবে বাড়ীটি সংস্কার ও সংরক্ষন করা যায় তার জন্য তিনটি বিকল্প প্রস্তাব দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। কিন্তু তা আর করা হয়নি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর খেলার মাঠসহ বিভিন্ন স্থান সংরক্ষন করা হয়।
প্রতিদিনই বঙ্গবন্ধুর সমাধী ও বাড়ীটি দেখতে ভীড় করছেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা। তবে প্রথমবার পৈত্রিক বাড়ীটি বাড়ী যেভাবে সংস্কার করা হয়েছে তা দেখে যেন তৃপ্ত হতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করতে আসা দর্শনার্থীদের কোথাও যেন একটু ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। বাড়ীটি পুরানো কাঠামোয় সংস্কার ও সংরক্ষণ করে নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভব হবে বলে মনে করেন দর্শনার্থীরা।
আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ১৯৬৯ সালে ছাত্র জনতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই পেল একটি নতুন দেশ বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার পর দেশ গড়ায় অংশ নেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু মুজিবকে জাতি জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার আগেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই মহান নেতাকে ঘাতক দল স্বপরিবারে হত্যা করে তারপরেও তিনি সাধারন মানুষের মনে আর হৃদয়ে বেঁচে আছেন।
বঙ্গবন্ধুর শ্যালক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামা ও টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান শেখ আহম্মদ হোসেন মির্জা বঙ্গবন্ধু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছোট বেলা কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়। দুর্দান্ত চঞ্চল ছিলেন তিনি। গরীব, দু:খী মানুষের জন্য মন কাঁদতেন সব সময়। গরীব মানুষ যখন অভাবে থাকতে তখন তার বাবার ধানের গোলা কেটে সব ধান গরীব মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। শুধু তাই নয় সব সময়ই গরীব মানুষে পাশে থাকতেন তিনি। বঙ্গবন্ধু যখন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি সাধারন মানুষের মত টুঙ্গিপাড়ায় আসতেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গিপাড়ায় মা বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করেছেন। তবে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বাকী রায় কার্যকর করার দাবী জানাচ্ছি
পিবিএ/বিএস/হক