এতো কৌশলেও শেষ রক্ষা হলো না অপহরণকারীদের

পিবিএ,ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর থেকে প্রাইভেটকারসহ অপহৃত মো. এনায়েত উল্লাহ (৩২) নামে এক ভুক্তভোগীকে র‌্যাব-৪ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানাধীন দুর্গম চরের কাঁশবন থেকে উদ্ধার করে। এর সঙ্গে জড়িত অপহরণকারী চক্রের চার সদস্যকে আটকর পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। আটকরা হলেন- শাহ জালাল (৩২), মো. ফয়সাল (২২), জয়নাল হাজারী (৩০) ও রাকিব (২২)।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ১২ লাখ টাকার নতুন প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ ২৭-৬৮৮৯) ৬ লাখ টাকা বাকি কেনার পর ভাড়ায় চালানো শুরু করেন। এনায়েত উল্লাহ তার প্রাইভেটকারে রাজধানীর রূপনগর থানাধীন শিয়ালবাড়ী মোড় হতে গত ১৯ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় মাদারীপুর যাওয়ার কথা বলে দুজন যাত্রীবেশে ভাড়ায় ওঠেন।

পদ্মা নদী পার হয়ে রাত ২টায় কাঠালবাড়ী এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে গাড়ি থামানোর সিগনাল দিয়ে তল্লাশীর নামে প্রাইভেটকারটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এনায়েত উল্লাহর হাত-পা বেঁধে অপহরণপূর্বক মাদারীপুরের শিবচর থানাধীন দত্তপাড়া চর এলাকায় কাশবনের একটি ছোট ঘরে আটকে রাখে। প্রাইভেটকারটি অপহরণকারীরা চালিয়ে নিয়ে গিয়ে ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানাধীন আটরশি জাকের মঞ্জিলের পার্কিংয়ে লুকিয়ে রাখে।

অপহরণকারীরা হাত ও চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় এনায়েত উল্লাকে ৪ দিন ধরে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। মোবাইল ফোনে মারধরের শব্দ, কান্নার চিৎকার শুনিয়ে তার পরিবারের নিকট ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহৃতরা মোবাইল নম্বর থেকে ভুক্তভোগীর বড় ভাই কেফায়েত উল্লাকে ফোনে দিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে খুন করার হুমকিও দেয়।

কেফায়েত উল্লাহ রূপনগর থানায় জিডি করেন ও র‌্যাব-৪ এর সহযোগিতা চান। পরে তদন্ত শেষে র‌্যাব-৪ এর একটি দল মাদারীপুর জেলার শিবচর দুর্গম এলাকা হতে শুক্রবার ভোরে এনায়েত উল্লাহকে ও প্রাইভেটকারটি উদ্ধারসহ অপহরণে জড়িত ৪ জনকে আটক করে।

জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা নয়ন তারা (২৩), সজিব (২২), রেজাউল (২৮), রবমিয়া (২৪), কামরুল (২৫) এবং মেহেদী হাসান (২৩) নামে জড়িত আরও ৬ জনের নাম প্রকাশ করেছে।

র‌্যাব-৪ সিও বলেন, আটকরা গত তিন বছর যাবত বিভিন্ন কৌশলে গাড়িচালক, মালিক, ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে। ফোনের নম্বর সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন ও কৌশলে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল।

অপহরণের কৌশল

প্রথমত : ঢাকাসহ আশপাশ এলাকার বাস স্টেশন থেকে যাত্রীবেশে তাদের গন্তব্য স্থানে যাওয়ার কথা বলে মাইক্রো বা প্রাইভেটকার ভাড়া করে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। তারা গাড়ির মূল্য, ভুক্তভোগীর বয়স ও আর্থিক অবস্থা সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে তাদের অপহরণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করে। গাড়িতে উঠার পর গাড়ি চলা অবস্থায় ভুক্তভোগীকে অজ্ঞান করে অথবা হাত-পা ও মুখ বেঁধে অথবা অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের পরিকল্পিত এলাকায় নিয়ে জিম্মি করে সব হাতিয়ে নেয় অপহরণকারীরা।

দ্বিতীয়ত : যাত্রীবেশে গাড়িতে অবস্থান করা অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তাদের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানো মাত্র আগে থেকে অবস্থান নেয়া অপহরণকারী চক্রের অন্য সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে গাড়ি তল্লাশীর নামে ভুক্তভোগীকে গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে। এরপর গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় তারা।

তৃতীয়ত : অপহরণকারীরা গামছা দিয়ে চোখ বেধে অস্ত্র দ্বারা মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে গাড়িসহ ভুক্তভোগীকে পৃথকভাবে নিয়ে যায়।

চতুর্থত : অপহরণকারীরা নির্জন চর, আঁখ ক্ষেত বা কাশবনের মধ্যে ভুক্তভোগীকে আটকে রাখে এবং মুক্তিপণের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগীর নির্যাতন ও কান্নাকাটি শুনিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে।

পঞ্চমত : ভুক্তভোগীকে জিম্মি বাবদ মুক্তিপণ আদায় করে অপহরণকারীরা। এরপর প্রাইভেটকার কিংবা গাড়ি বাবদ টাকা আদায় করে। এরপরও কাগজপত্র আটকে রেখেও টাকা আদায় করে।

র‌্যাব-৪ অধিনায়ক বলেন, আটকদের সঙ্গে জড়িত অপহরণকারী চক্রের বাকি সদস্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...