শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা এ তথ্য জানা গেছে। বিধি-নিধেষ চলাকালে বিশেষ কয়েকটি কারণে এবং পুলিশের দেয়া মুভমেন্ট পাস ছাড়া এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কেউ যেতে পারবে না।
শনিবার (২৬ জুন) মুভমেন্ট পাস সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আরও বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে সাধারণ মানুষের অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ এবং জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মুভমেন্ট পাস চালু থাকবে। মুভমেন্ট পাস ছাড়া কাউকে বের হতে দেবে না পুলিশ।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এবার পুলিশ কাউকেই লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনে ছাড় দেবে না। গত লকডাউন চলাকালে অনেকেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। কিন্তু এবার তা হতে দেয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে থাকবে পুলিশের কড়া চেকপোস্ট। কারণ দর্শানো ছাড়া চেকপোস্ট পার হয়ে কেউ যেতে পারবে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবার কঠোর ভূমিকায় মাঠে থেকে কাজ করবে পুলিশ। বিনা কারণে কেউ রাস্তায় বের হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পর বাসায় পাঠানো হবে।’
এর আগে শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে জরুরি তথ্য বিবরণীতে সোমবার (২৮ জুন) থেকে পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা দেয় তথ্য অধিদপ্তর।
তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, কোভিড ১৯ সংক্রমণ রোধকল্পে সোমবার থেকে পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত সারাদেশে কঠোর লকডাউন পালন করা হবে। এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
বিবরণীতে আরও বলা হয়, কঠোর লকডাউনের সময় জরুরি পণ্যবাহী ব্যতীত সব প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এছাড়া জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবেন না। তবে গণমাধ্যম এর আওতামুক্ত থাকবে। বিস্তারিত আদেশ শনিবার (২৬ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা হবে।
এরআগে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশ করেছিল জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তখন এ বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে মুভমেন্ট পাস অ্যাপের উদ্বোধন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, করোনার টিকা গ্রহণ, মুদি দোকানে কেনাকাটা, কাঁচা বাজার, ওষুধপত্র, চিকিৎসা, চাকরি, কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, ত্রাণ বিতরণ, মৃতদেহ সৎকার, ব্যবসা ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে নাগরিকেরা মুভমেন্ট পাস নিতে পারবেন।
https://movementpass.police.gov.bd/ লিংকে ঢুকে মুভমেন্ট পাসের জন্য আবেদন করতে হবে। মুভমেন্ট পাস ক্লিক করে মোবাইল নম্বরটি প্রবেশ করাতে হবে। এরপর গ্রাহকের মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চলে যাবে। ওটিপি প্রবেশ করালে পাসের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মুভমেন্ট পাসের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য
যে থানা এলাকা থেকে যাবেন, যে থানা এলাকায় যাবেন, নাম, লিঙ্গ, বয়স, ভ্রমণের কারণ, পাস ব্যবহারের তারিখ ও সময়, পাসের মেয়াদ শেষের তারিখ ও সময়, জাতীয় পরিচয়পত্র, নিজস্ব গাড়ির তথ্য এবং ছবি এসব তথ্য দিতে হবে।
এই পাসধারী ব্যক্তি বাধামুক্তভাবে সড়কে চলাচল করতে পারবেন। তবে সবাই এই পাস পাবেন না। শুধু জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হবে এই পাস। যিনি পাস পাবেন শুধু তিনিই এটি ব্যবহার করে কাজ করতে পারবেন। পাস নেয়ার সময় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে চাইলে আবেদনকারী সেটাও করতে পারবেন। পাস কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য না বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
তবে সাংবাদিকদের মুভমেন্ট পাস নেয়া লাগবে না। এই পাস শুধু যারা কাজে বাইরে বের হবেন তাদের নিতে হবে বলে একই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
তিনি জানান, যাদের একান্তই বাইরে যাওয়া প্রয়োজন হবে, তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের জন্য অফিসিয়াল কিংবা জরুরি প্রয়োজনে মুভমেন্ট পাস নেয়া লাগবে। তবে এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের এই পাস নেয়া লাগবে না।
মুভমেন্ট পাস নিতে যা করতে হবে
১. একটি সচল মোবাইল নম্বর দিতে হবে। সেই নম্বরে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) যাবে। সেটা দিতে হবে।
২. আবেদনকারীর জন্ম তারিখ দুই বার লিখতে হবে। জন্ম তারিখ যদি ০১-০২-১৯৯৪ হয় তাহলে ০১০২১৯৯৪ এভাবে লিখতে হবে।
৩. আবেদনকারী যে এলাকায় বা থানার আওতায় বাস করেন তার নাম উল্লেখ করতে হবে।
৪. জরুরি প্রয়োজনে যে এলাকায় যাবেন সেই থানার নাম উল্লেখ করতে হবে। সেই সঙ্গে পুরুষ নাকি নারী সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আপনি যেহেতু জরুরি প্রয়োজনে বের হবেন, অবশ্যই সেই কাজের নাম উল্লেখ করতে হবে। অ্যাপে ১৩টি কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতেও যদি আপনার প্রয়োজনটি উল্লেখ না থাকে তাহলে অন্যান্য অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। আপনার কাজটি শেষ করতে কত সময় লাগবে তা উল্লেখ করতে হবে।
৬. পাস পেতে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি স্টুডেন্ট আইডি, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট নম্বর ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বর জমা দিতে হবে।
৭. জরুরি কাজে বের হওয়ার সময়ে আপনার নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করবেন কি-না সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যদি নিজের গাড়ি ব্যবহার করেন তাহলে গাড়ির নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
৮. সবগুলো শর্ত পূরণের পরে আবেদনকারীর একটি সদ্য তোলা ছবি জমা দিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আবেদনকারী ফিরতি বার্তায় পাস পেয়ে যাবেন।