ইয়েমেয়ে চলমান যুদ্ধের ফলে দেশটির অবস্থা খুবই নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় চার বছর ধরে চলতে থাকা এই যুদ্ধ থামানোর উদ্দেশ্যে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছেন। আর যারা বেঁচে আছেন তাদের জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। ইয়েমেন যুদ্ধ অবসানে সৌদি-আরব আমিরাত নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেন সরকার এবং হুথি বিদ্রোহীরা সুইডেনে অনুষ্ঠিতব্য এক শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে সম্মত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত মার্টিন গ্রিফিতস।
এতদিন ধরে চলমান ইয়েমেন যুদ্ধের পেছনে বেশ কয়েকটি বিদেশী শক্তির মদদ রয়েছে। তারা এই যুদ্ধকে উসকে দিচ্ছে। যার ফলে সঙ্কট দিন দিন বেড়েই চলছে। এখানে রক্তপাত, দুর্ভিক্ষ ও বিভিন্ন ধরনের রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানকার শিশুরা স্কুলেও যেতে পারছে না। এসব কারণে দেশটি কয়েক দশক পিছিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
একটি আধুনিক রাষ্ট্রে সুসভ্য ব্যবস্থাপনা শুধু ভালো জিনিসই নয় বরং এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো ছাড়াও রাষ্ট্র পরিচালনার মতো বিভিন্ন বিষয় ইয়েমেনে অনুপস্থিত। এমন অবস্থায় সেখানে জাতিসঙ্ঘের উত্থাপিত শান্তি প্রস্তাব আধুনিক বিশ্বকে ধোঁকা দেয়ার মতোই। এটা অনেকটা নিছক লোক দেখানো। এসব শান্তি প্রক্রিয়া বিশ্লেষকদের চিন্তায় ফেলে দেয় যে তারা এ ঘটনার আড়ালে মূলত কী করতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকেরা এ রকম শান্তি প্রক্রিয়ার বিষয়ে সন্দিহান।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে জাতিসঙ্ঘের রেজুলেশন ও প্রস্তাবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের সাথে যায় না। ইয়েমেনি জনগণ যারা তাদের দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করতে চাইছে। উভয় পক্ষের বিভিন্ন ইস্যু সামনে রেখেই শান্তি আলোচনা চালিয়ে নিতে হবে।
জাতিসঙ্ঘের একপক্ষের প্রতি সহানুভূতিমূলক রেজুলেশনের বেশ কয়েকটি প্র্রমাণ রয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সঙ্কটে ইসরাইল জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব বা রেজুলেশন না মেনেই জোর করে দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকারের জন্য লড়ে যাচ্ছে। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ এ ব্যাপারে কিছুই করতে পারেনি।
এখন দেখার বিষয় সৌদি-আরব আমিরাত জোট নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সরকারের সাথে হুথি বিদ্রোহীদের আলোচনায় কী অগ্রগতি আসে। ইয়েমেনে লাখ লাখ মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ন্যূনতম বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ সেখানে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
শান্তি আলোচনার আগে ইয়েমেনে দুই সপ্তাহ যুদ্ধ বন্ধ রাখার ঘোষণায় দুই পক্ষই সুইডেনে শান্তি আলোচনার আলোচ্য বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই আলোচনা ইয়েমেন সঙ্কট সমাধানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া আলোচনা সফল করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ক্রমে চাপ দিচ্ছে।
এত কিছুর পরও এই শান্তি আলোচনা নিয়ে খুব বেশি কিছু আশা করা যায় না। কেননা এর আগেও সৌদি-আরব আমিরাত নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সরকার ও বিদ্রোহী হুথি গ্রুপের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের চেষ্টা বিফল হয়েছে। এ ছাড়া হুথি গ্রুপ বিভিন্ন ধরনের শর্ত দিচ্ছে আলোচনা শুরুর আগেই।
যা হোক, এর আগেও বেশ কয়েকজন ইয়েমেন সঙ্কট সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমানে ইয়েমেনে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত মার্টিন গ্রিফিতস দুই পক্ষকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে আলোচনার টেবিলে বসতে ব্যর্থ হয়েছেন।
শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত সোমবার ইয়েমেন থেকে বেশ কিছু বিদ্রোহী হুথি সেনাদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য ওমান নেয়া হয়েছে। যা হুথি গ্রুপকে শান্তি আলোচনায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ভরসা জোগাবে বলে ধারণ বিশ্লেষকদের। জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় ইয়েমেন থেকে জাতিসঙ্ঘের বিমানে করে হুথি সেনাদের চিকিৎসার জন্য মাস্কট নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, ইয়েমেন যুদ্ধে নিহত হয়েছে ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই যুদ্ধ অবসানে শান্তি আলোচনার জন্য নভেম্বরে সময় নির্ধারণ করা হলেও শেষ সময়ে হুথি বিদ্রোহীরা নিরাপত্তাজনিত কারণে সে আলোচনা বাতিল করে দেয়।
তবে ইয়েমেনের জন্য এই শান্তি আলোচনার সময়টা অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত গ্রিফিতস। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মাঠপর্যায়ে লড়াই জোরালো হলে শান্তি প্রক্রিয়া লাইনচ্যুত হতে পারে।
বিশ্লেষকেরা এখন সুইডেনের আলোচনার দিকে তাকিয়ে আছেন। সেখানে কি সত্যিই শান্তি আলোচনা হবে, নাকি আলোচনা উপলক্ষে দুই পক্ষই ছুটি কাটাবে! তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ শান্তি আলোচনার ফলে ইয়েমেন যুদ্ধ সাময়িক বন্ধ হতে পারে।