আহসান টিটু, বাগেরহাট : করোনার প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক লাখ চাষী, ব্যবসায়ী এবং শ্রমিক চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
অন্যদিকে চিংড়ি উৎপাদনের মৌসুমের শুরুতে ঘেরে চিংড়ির পোনা ছাড়তে না পারায় হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন চাষীরা। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
দক্ষিণাঞ্চলের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় আশির দশক থেকে কয়েক লাখ চাষী বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি চাষ করে আসছেন। এই অঞ্চলে চিংড়ি চাষ লাভজনক হওয়ায় চিংড়ি ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিত। ফলে দিন দিন চাষীর সংখ্যা এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। চিংড়ি শিল্প থেকে সরকারের বিপুল রাজস্বও আসে। কিন্তু করোনা সংকটে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে সিংহভাগ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক খাল খননের কাজ করায় খালগুলোতে এখন পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে ঘেরে পানি যাচ্ছে না। বিষয়টিকে চাষীরা মরার উপরে খাঁড়ার ঘা বলছেন। এছাড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় ও বাজারে মাছের দাম কমে যাওয়ায় সবকিছুই যেন স্থবির হয়ে পড়েছে।
মৎস্যচাষী ফখরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অনেকেই মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আমরা ঘেরের মাছ বিক্রিও করতে পারছি না, আবার নতুন করে ঘেরে মাছ ছাড়তেও পারছি না। অথচ পাওনাদাররা টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। মাছের ন্যায্য দাম পাচ্ছি না অথচ পোনার দাম অনেক। কি হবে কিছুই বুঝতে পারছি না!
চিংড়ি ব্যবসায়ী লিটন পরামানিক বলেন, করোনার প্রভাবে বিদেশে মাছ রপ্তানি বন্ধ। দেশের বাজারেও ক্রেতা নেই। আমরা বেকার অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র, বাগেরহাটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচ এম রাকিবুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে শুধু চিংড়ি সেক্টর নয়, সকল সেক্টরেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, বাগেরহাটে প্রায় দেড় কোটি পোনার চাহিদা রয়েছে। এ বছর ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ পোনা বাজারে পাওয়া যাবে। ফলে কোনোভাবেই পোনার চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তবে মহামারি থেকে দেশ পরিত্রাণ পেলে চাষীদের নতুন দিন আসবে।
পিবিএ/মোআ