এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামীকাল রোববার (১৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নকলমুক্তভাবে পরীক্ষা আয়োজনে গত সোমবার থেকে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড হাতে পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রথম দিন পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এবারের এসএসসি পরীক্ষা। এর মধ্য দিয়ে দেড় বছর পর প্রথম কোনো পাবলিক পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে করোনা মহামারির কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি প্রস্তুতি। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দেওয়া হচ্ছে বিশেষ নজর। সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য পরীক্ষার আগে ও চলাকালে করণীয় নিয়ে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা আয়োজনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি বেঞ্চে দুজন করে পরীক্ষার্থী বসানো হবে। করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাত জীবাণুমুক্ত করে এবং তাপমাত্রা মেপে স্কুলে প্রবেশ করানো হবে। কারো শরীরের তাপমাত্রা বেশি আসলে এবং করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলে তাকে আলাদা রুমে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সেজন্য আইসোলেশন রুমও প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকদের বাড়তি চাপও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
২২ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নেবে পরীক্ষায়
চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। গতবছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৩ হাজার ৬৭৯টি কেন্দ্রে মোট ২৯ হাজার ৩৫টি স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। ৯টি সাধারণ বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১৭ হাজার ৬৭৬টি স্কুলের ১৮ লাখ ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী।
৯ হাজার ১১০টি মাদরাসার ৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৭জন পরীক্ষার্থী ৭১০টি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবে ২ হাজার ৩৪৯টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন শিক্ষার্থী।
কবে কোন পরীক্ষা
এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে ১৪ নভেম্বর। ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ পরীক্ষা চলবে। প্রথম দিন ১৪ নভেম্বর সকালে পদার্থবিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৫ নভেম্বর সকালে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এবং বিকেলে হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ নভেম্বর সকালে রসায়ন (তত্ত্বীয়) বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ নভেম্বর সকালে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া (তত্ত্বীয়) অনুষ্ঠিত হবে। ২১ নভেম্বর সকালে ভূগোল ও পরিবেশ এবং বিকেলে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২২ নভেম্বর সকালে উচ্চতর গণিত ও জীববিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ নভেম্বর সকালে পৌরণীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আর বিকেলে ব্যবসায় উদ্যোগ বিষয়ের পরীক্ষা হবে।
জানা গেছে, ১৪ নভেম্বর দাখিলের কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের, ১৮ নভেম্বর হাদিস শরিফ বিষয়ের এবং ২১ নভেম্বর ইসলামের ইতিহাস, রসায়ন, তাজভিদ নসর ও নজম (মুজাব্বিদ গ্রুপ) এবং তাজভিদ (হিফজুল গ্রুপ) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নির্ধারিত দিনে সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষার্থীর সঙ্গে একজনের বেশি অভিভাবক নয়
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীর সঙ্গে একজনের বেশি অভিভাবক কেন্দ্রে আসতে পারবেন না বলে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে সব পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পর পরীক্ষা কেন্দ্রে আসলে রেজিস্টারে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করতে হবে। বিলম্বে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্র সচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নয়
কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীগণের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে যাবে প্রশ্ন
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। ট্রেজারি বা থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তাঁর মনোনীত উপযুক্ত প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসারসহ প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতি ছাড়া প্রশ্ন বের করা যাবে না বা বহন করা যাবে না।
ট্রেজারি বা থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পরীক্ষার কেন্দ্রে বহুমুখী নির্বাচনী প্রশ্নসহ রচনামূলক বা সৃজনশীলের সকল সেট প্রশ্নই নিতে হবে। সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সেট কোডে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার), কেন্দ্র সচিব এবং পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে বিধি অনুযায়ী প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে।
অনিবার্য কারণবশত কোন পরীক্ষা বিলম্বে শুরু করতে হলে যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদের সে সময় থেকে যথারীতি প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত নির্ধারিত সময় দিতে হবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে প্রবেশ নয়
এরই মধ্যে পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী ও কেন্দ্রের কর্মী ছাড়া অন্য কাউকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে প্রবেশ করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিশেষ নজরদারি
মন্ত্রণালয় জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নজরদারি জোরদার করবে।
পরীক্ষা দিতে অতিরিক্ত সময় পাবেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা
দৃষ্টিহীন, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধকতা ও হাত না থাকা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শুধু তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনা হয়েছে দেড় ঘণ্টায়।
দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে আসছে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগেই এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়। করোনাভাইরাসের কারণে দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার নয় মাস পিছিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।