এ সময়ের কৃষি সমস্যা ও সমাধান

পিবিএ ডেস্ক: কাঁঠালের “মুচি পঁচা” রোগের কারণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা এবং “ফল ছিদ্রকারী পোকা” দমন ব্যাবস্থাপনাঃ

jack-fruit-PBA

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। কাঁঠালে প্রচুর পরিমানে শর্করা, আমিষ ও ভিটামিন এ পাওয়া যায়। এটি এমন একটি ফল যার কোন অংশই ফেলে দিতে হয় না (কোষ ও বীজ মানুষের খাদ্য ও বাকী অংশ পশু খাদ্য)। এ ফল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। বাংলাদেশে উৎপাদনের দিক থেকে কলার পরেই কাঁঠালের স্থান। এ ফল অন্যান্য ফলের তুলনায় দামে কম হওয়ায় গরিব মানুষ সহজে খেতে পারে। কৃষকেরা এ ফলটি চাষ করতে গিয়ে গাছে কিছু রোগের সম্মুখীন হন। ফলে বিশাল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হয়। রোগগুলো নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারলে কাঁঠালের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। কাঁঠালের একটি মারাত্মক রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বর্নণা করা হল।

মুচি পঁচা/মুচি ঝরা (Soft rot) রোগ
রোগের কারণঃ রাইজোপাস আরটোকার্পি (Rhizopus artocarpy) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তারঃ

গাছের পরিত্যক্ত অংশে জীবাণু বেঁচে থাকে এবং বাতাস, পানি ও পোকামাকড় মাধ্যমে রোগ ছড়ায়। বৃষ্টিপাতের সময়, ঝড় তুফানের পরে রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়। ফুল ও ফল আসার সময় গরম, আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করলে রোগের আক্রমণ বেশী হয়।ছায়াযুক্ত স্থানে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।

রোগের লক্ষনঃ

এই রোগের দ্বারা গাছের ফুল ও কচি ফল আক্রান্ত হয়।
আক্রান্ত ফুলের বা কচি ফলের বোঁটার গোড়ায় পানি ভেজা দাগ পড়ে।
আক্রান্ত ফল সাদা মাইসেলিয়াম দ্বারা আবৃত থাকে।
পরবর্তীতে আক্রান্ত স্থানের কোষ মরে কালো রং ধারণ করে।
পরে সম্পূর্ণ ফলটি আক্রান্ত হয়ে কালো রং ধারণ করে।
পরিশেষে আক্রান্ত ফল পঁচে ঝরে পড়ে।

রোগের প্রতিকারঃ

গাছের নিচে ঝড়ে পরা পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে।
কাঁঠাল বাগানে কোন জৈব সার বা কম্পোস্ট তৈরী না করাই ভাল।
বাগান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ফল বেশী ঘন হলে পাতলা করে দিতে হবে।
মুচি ধরার আগে ও পরে কপার অক্সিক্লোরাইড (যেমন-কুপ্রাভিট ৫০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম অথবা টেবুকোনাজল (যেমন-ফলিকুর ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার হারেমিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।

ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ

এটি কাঁঠালের অত্যান্ত ক্ষতি কারক পোকা। পূর্ন বয়স্ক পোকা কাঁঠালের গায়ে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে লার্ভা ভিতরে প্রবেশ করে। প্রাথমিক অবস্থায় ছোট ছিদ্র সহ পোকার তাজা বিস্টা দেখা যায়। ধীরে ধীরে ছিদ্র বড় হতে থাকে এবং পরবর্তীতে ছত্রাকের আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। অক্রান্ত স্থানে পচন ধরে এবং কাঁঠাল আশিংক বা সম্পুর্ন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

প্রতিকারঃ
১। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ। আক্রান্ত কাঠাল মাটিতে পুতেঁ ধংশ করে ফেলতে হবে।
২। নিম তেল (প্রতি লিটার পানিতে ১০ মি:লি: হারে) + ট্রিক্‌স ৫ মি:লি: মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে।
৩। ব্যাপক আক্রমন হলে ডাইমেথোয়েট জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২ মি:লি: হারে) ফুট পাম্প এর সাহয্যে সেপ্র করতে হবে।
কান্ড ছিদ্রকারী পোকা
এ পোকা গাছের কান্ডে ছিদ্র করে ভিতরের অংশ কুরে কুরে খায় এবং গাছের ফলন কমে যায়, অবশেষে গাছটি মারাও যেতে পারে।

প্রতিকারঃ
১। ছিদ্রের ভিতর লোহার শলাকা ডুকিয়ে পোকা মারার ব্যবস্থা করতে হবে।
২। সিরিঞ্জের মাধ্যমে কেরোসিন মিশ্রিত পানি বা কীটনাশক মিশ্রিত পানি ছিদ্রের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে ছিদ্রের মুখ কাদা মাটি দিয়ে লেপে ভিতরের অবস্থিত পোকা মারা যাবে।

লেখক: মঞ্জুর আলী।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...