ঐতিহ্যের ৪শ বছর পেরিয়ে ধামরাইয়ের রথযাত্রা

 

লোটন আচার্য্য, পিবিএ, সাভার (ঢাকা): এশিয়া উপমহাদেশের বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী ধামরাইয়ের শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা পেরিয়ে গেছে ৪‘শ বছর। প্রাচীন এই পথযাত্রার ধর্মীও আচার শত শত বছর ধরে একই স্থানে পালন করে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীর লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীরা । এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় আষাঢ়ের শুক্লাপক্ষে দ্বিতিয় তিথিতে । সনাতন রীতিনীতিতে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় দুই দিন । প্রথম দিন ধর্মীও আচার আচরণের মধ্য দিয়ে রথটানের শুরু হয়ে শাস্ত্র অনুসারে রীতিনীতেই উল্টো রথটানে শেষ হয় ।

ভারতের মাহেশের রথ, উড়িষ্যার পুরিতে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথের মেলার মতো রাজধানীর উপকণ্ঠে ধামরাইয়ের রথের মেলার ইতিহাস ৪ শত বছরের সুপ্রাচীন। পুরির জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে এই রথযাত্রার প্রচলন । পুড়িতে রয়েছে জগন্নাথ ,বলরাম ও শুভ্রদার মূর্তি । সনাতন ধর্ম মতে, জগন্নাথ বিশ্ব প্রতিপালন বিষ্ণু অবতার এবং হলধারী বলরাম তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ও শুভ্রদা তাদের ভগ্নি । রথ টানা হয় এই ত্রিমূর্তিকে নিয়ে । রথযাত্রা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্বভারতীয়দের কাছে স্বীকৃতি না মিলেও পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পূণ্যার্থীদের ব্যাপক সাড়া রয়েছে।

ধামরাই রথের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়,ধামরাই উপজেলার সদর গ্রামেই শ্রী মাধব অঙ্গনে স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত রয়েছে শ্রী শ্রী যশোমাধব বিগ্রহ । বাংলার পাল বংশের শেষ রাজা যশোপাল এই মাধব মূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেন। ঘটনা সূত্রে, রাজা যশোপাল এক দিন হাতিতে আরোহ করে বেড়াতে যান ধামরাই এলাকার অন্য একটি গ্রামে । রাজার চলার সময় হঠাৎ একটি মাটির ঢিবির সামনে গেলে হাতিটি থেমে যায় । পরে হাজার চেষ্টা করে হাতিটিকে সামনে নিতে ব্যর্থ হয় রাজা । এতে অবাক হলেন তিনি । তখন রাজা আশ্চর্য হয়ে হাতি থেকে নেমে স্থানীয় লোকজনকে ওই মাটির ঢিবি খনন করতে বললেন। যথাসময়ে খনন কাজ শেষে সেখানে থেকে একটি মূর্তি পাওয়া যায় । তার মধ্যে শ্রী বিষ্ণু মূর্তির ন্যায় শ্রী মাধব মূর্তি ছিল । রাজা ভক্তি করে সেটি নিয়ে এসে ধামরাই সদরে ঠাকুর বাড়ির পঞ্চাশ গ্রামের বিশিষ্ট পন্ডিত শ্রী রাম জীবন রায়কে মাধব মূর্তি প্রতিষ্ঠার ভার দেন। তখন থেকে শ্রী মাধবের নামের সঙ্গে রাজা যশোপালের নামটি বিগ্রহের নতুন নামকরন হলো শ্রী শ্রী যশোমাধব ।

বাংলা ১০৭৯ বছর আগে তৈরী হয়ে ছিল ধামরাইয়ের রথ । ১৯৭১ সালের আগেই ধামরাইয়ের রথটি ছিল বিশাল তিন তলা । এই রথটি নির্মাণ করেন মানিকগঞ্জ জেলার বালিয়াটির জমিদার বাবুরা। তবে প্রথম দিকে ধামরাইয়ের রথটি বাঁশের তৈরি হয়ে ছিলে ।পরে তা কত সালে কাঠের রথে পরিণত হয় সঠিক সময় জানা নেই কারো । তবে ১৯৭১ সালে সেই রথটি পাকবাহিনীরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় । পরে বর্তমান রথটি নির্মাণ করা হয়েছে ।

বর্তমান যশোমাধব পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা করছেন ধামরাই রথযাত্রা উৎস। এই শ্রী মাধবকে কেন্দ্র করেই দেশ-বিদেশের নানা স্থান থেকে লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীদের সমাগম ঘটে ধামরাইয়ের রথযাত্রায় ।

পিবিএ/এলএ/ জেডআই

আরও পড়ুন...