ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য মানুষের সাথে নিষ্ঠুর রসিকতা: রিজভী

 

পিবিএ,ঢাকা: মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের মহাদুর্ভোগের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আনন্দের বাঁশি বাজাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার বেলা ১২ টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “বাংলাদেশের মানুষ ঈদ যাত্রায় যে দুর্ভোগ সেটাকে দুর্ভোগ হিসেবে মনে করে না। এটা তারা ঈদ আনন্দের অংশ হিসেবে মনে করে। তিনি বলেন, এবারের ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক ছিল। উত্তরের পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে যানজটের খবর গণমাধ্যমে এলেও তিনি জানিয়েছেন যানজটের কোনো তথ্য তার কাছে নেই।”
তিনি বলেন, নিশিরাতের ভোটের সরকারের মন্ত্রীদের কথাতেই প্রমাণিত হয় রোম পুড়ে ছারখার হয়ে গেলেও নিরোর মতো শাসকরা বাঁশী বাজায়। ওবায়দুল কাদের সাহেব’রা এই মহাদুর্যোগ ও পথে পথে মহাদুর্ভোগের মধ্যে সেই আনন্দের বাঁশী বাজাচ্ছেন। অসত্য ও বাস্তবতা বিবর্জিত বক্তব্যই তাদের দিতে হবে, কারণ মিথ্যার ওপর দু:শাসন চালাতে গিয়ে সত্য কথা বলার অধিকার তাঁরা হারিয়েছে। ঈদ যাত্রা নিয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য দু:খ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সাথে নিষ্ঠুর রসিকতা। অপরের দু:খ যন্ত্রণাকে আনন্দ উৎসব হিসেবে মনে করা আওয়ামী লীগের রুচি ও সংস্কৃতি।
রিজভী বলেন, সেতুমন্ত্রী মানুষের দু:খ দুর্দশা জানবেন কিভাবে, তিনি তো জনগণের মন্ত্রী নন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভোটে নির্বাচিত মন্ত্রী। হুইসেল বাজিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ীতে ছুটে বেড়ানোর সেতুমন্ত্রীর অবাধ সুযোগ থাকে। সুতরাং ঘন্টার পর ঘন্টা যানযটে রাস্তায় ঈদে ঘরমুখী মানুষের আটকে পড়ার দৃশ্য দেখে আনন্দ পাওয়ারই কথা। মহাসড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষ যানজটে পড়ে আছে। ভাড়া আদায় করা হয়েছে কয়েকগুন বেশী। ৪০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা, ৩০০, ৪০০ টাকার ভাড়া আদায় করা হয়েছে ১২০০ টাকা। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চললেও দেখার কেউ নেই। কোন কোন মহাসড়কে ৭০-৮০ কি. মি.যানজট। লঞ্চগুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বহুগুণ বেশী যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ী যাচ্ছে। ফেরি ঘাটেও গাড়ীর লম্বা লাইন। সবগুলো ট্রেন সিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে। সকালে ট্রেন রাতেও ছেড়ে যায়নি। পরিবার পরিজন নিয়ে স্টেশনগুলোতে বসে থেকে মানুষের কষ্টের সীমা নেই। আর এটাকেই সেতু মন্ত্রী বলছেন, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ও আনন্দঘন। আওয়ামী লীগের কাজই হলো মানুষের দু:খ দূর্দশা নিয়ে ইয়ার্কী করা, তামাশা করা।
তিনি বলেন, সারাদেশের মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই। দেশ আজ মহা বিপর্যয়ের মুখে। সর্বগ্রাসী সংকটে টালমাটাল অবস্থা। সমস্যা-সংকট গভীর থেকে গভীরতর, কোন আশার আলো নেই, আছে শুধু অন্ধকার, হতাশা ও অনিশ্চিত আগামী। ক্ষমতাবানরা দায়বোধের অনুশোচনা ভুলেই গেছে। অনাচার ও অসাধুতার প্রকোপে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকারটুকুও কেড়ে নিচ্ছে তারা। ডেঙ্গুর ভয়াবহ ছোবলে দেশ বিধ্বস্ত। এডিস মশার দল রক্ত খেতে ছুটে বেড়াচ্ছে দিকবিদ্বিক। মৃত্যুর মিছিল বড় হচ্ছে দিনকে দিন। বানভাসী মানুষের দুর্দশা চরম শোচনীয়। গুম-ক্রসফায়ারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। খুন-ধর্ষণ ডালভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বিচারে গণপিটুনিতে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ নারী-পুরুষ। আইন আদালতকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী ব্যবহার করছে। দুর্নীতির মরণ ছোবল তথা রাহুগ্রাসে দেশ এখন শুন্য গহ্বর। এ যেন এক পৈশাচিক বিকৃতি। এ পরিস্থিতিতে দেশবাসীর মনে ঈদুল আযহার আনন্দ নেই।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...