কক্সবাজারের ইতিকথা

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার! এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ কিলোমিটার। এই বিশাল দৈর্ঘ্য ও বৈচিত্র্যময় সৈকত যে কত বড় সম্পদ তা বুঝতে আমাদের আরো সময় নিতে হবে!

বহুদূর, বহুদেশ ঘুরে বহু ‘সমুদ্র সৈকত’ দেখার সৌভাগ্য হওয়ার পর এই উপলব্ধিটা বারবার পীড়া দিচ্ছিল যে, আমাদের একটি সৈকত আছে, যা এই গ্রহের মধ্যে দৈর্ঘ্যে সেরাদের সেরা। প্রাকৃতিক এই সম্পদটিকে যদি কিছুটা আর্টিফিশিয়াল রূপ দেয়া যেতো, তবে বিশ্বপ্রকৃতিপ্রেমিরা দলেদলে ছুটতো বাংলাদেশে। ফলাফল কী হতো তা গবেষণার বিষয়।

কক্সবাজারে নাজিরহাট হতে টেকনাফের দক্ষিণপাড়ার দূরত্ব প্রায় ৯৪ কিলোমিটার। আমাদের উপসাগর ঘেঁষে এই ৯৪ কিলোমিটার পথ ৪ লেন বিশিষ্ট হাইওয়ে সৃষ্টি করতে পারলে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে পর্যটকদের কাছে।

কক্সবাজার নামটি এসেছে Captain Hiram Cox (ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স) নামে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসারের নাম হতে যিনি একজন কূটনীতিক ছিলেন। কক্সবাজারের আগের নাম ছিল পালঙ্কী। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধ্যাদেশ ১৭৭৩ জারি হওয়ার পর “Warren Hastings” (ওয়ারেন হাস্টিং) বাংলার গভর্নর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তখন হিরাম কক্স পালঙ্কী নগরের মহাপরিচালক নিযুক্ত হন।
নবম শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে ১৬১৬ সালে মুঘল অধিগ্রহণের আগ পর্যন্ত কক্সবাজার-সহ চট্টগ্রামের একটি বড় অংশ “আরাকান রাজ্যের” অন্তর্ভূক্ত ছিলো। মুঘল সম্রাট শাহ সুজা পাহাড়ী রাস্তা ধরে আরাকান যাওয়ার পথে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন এবং এখানেই ক্যাম্প স্থাপনের আদেশ দেন। তার যাত্রাবহরের প্রায় একহাজার “পালঙ্কী” কক্সবাজারের চকরিয়ার ‘ডুলাহাজারা” নামের স্থানে অবস্থান নেয়। “ডুলহাজারা”— অর্থ হাজার পালঙ্কী। মুঘলদের পরে ত্রিপুরা এবং আরাকান তারপর পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশরা এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।

ক্যাপ্টেন কক্স আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান হাজার বছরের পুরোনো সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেন কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই ১৭৯৯ সালে তিনি মারা যান। তার পুনর্বাসন অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এর নাম দেয়া হয় “কক্স সাহেবের বাজার।” এরপর ১৮৫৪ সালে কক্স সাহেবের বাজার হতে বাজারটি তুলে দিয়ে কক্সবাজার নামে প্রথমে একটি পুলিশ স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পর্যায়ক্রমে ১৮৬৯ সালে কক্সবাজারকে পৌরসভায় রূপ দেয়া হয়।
বর্তমানে কক্সবাজার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির এক স্বর্ণালিদ্বার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

লেখক: এম এ কাদির খান, কলামিষ্ট

আরও পড়ুন...