কক্সবাজারে অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৪

পিবিএ,ঢাকা: কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে জিম্মি করে ঘের দখল, অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্যতম মূলহোতাসহ ০৪ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে দেশীয় অস্ত্রসহ কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫

সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের ধাউনখালি এবং কলাতলীর মেরিন ইকো রিসোর্ট থেকে অবৈধ বিদেশি অস্ত্র চোরাচালান চক্রের দুই সদস্যকে বিদেশী পিস্তল ও মডিফাইড .৩০৩ রাইফেল এবং এ্যামুনেশনসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। এছাড়াও গত এপ্রিল মাসেও চকরিয়ার মাছের ঘেরে ডাকাতির সাথে সংশ্লিষ্ট চারজন ডাকাতকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

পরবর্তীতে তাদের দেয় তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজারের চকরিয়াসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বেশ কয়েকটি গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পারে র‌্যাব। বর্ণিত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে র‌্যাব কক্সবাজারের চকরিয়াসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সারা বছর মৌসুমে লবণ চাষ এবং বাকি মাসগুলোতে চিংড়ি চাষ করা হয়ে থাকে। মূলত লবণ চাষের মৌসুম শেষে চিংড়ি চাষের প্রস্তুতি শুরু হলেই একদল সন্ত্রাসী ঘের মালিকদের নিকট চাঁদা দাবি করে। তাছাড়া অস্ত্রের মহড়ার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে ঘের এলাকা দখল করে। এছাড়া প্রায়ঃশই সশস্ত্র ডাকাত দল মাছের ঘেরে লুটপাট ও অন্যান্য নাশকতা সৃষ্টি করে। এর ফলে বছরজুড়ে অত্র এলাকায় অস্থিরতা চলমান থাকে। বিভিন্ন সময়ে র‌্যাবের অভিযানের মাধ্যমে এ সকল ডাকাত দল নির্মূলের প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। তবে এ সকল ডাকাত ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম সাময়িক সময়ের জন্য রোধ করা গেলেও দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বারংবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের চকরিয়ার বিলুপ্তপ্রায় সুন্দরবন তথা চিংড়ি জোনে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তা-ব ও লুটপাটের কয়েকটি ঘটনা ঘটে। গত ১৯ জুন দিবাগত রাতে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ মৌজার গোলদিয়ায় ১০ একর বিশিষ্ট সাতটি ঘেরে (৭০ একর) হানা দেয় একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। এ সময় তারা অন্তত শতাধিক ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। অস্ত্রের মুখে ঘের কর্মচারীদের জিম্মি ও হাত-পা বেঁধে ফেলে করা হয় মারধর ও বিভিন্নভাবে নির্যাতন। এরপর একে একে ঘেরগুলো দখলে নেয় সন্ত্রাসীরা।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে উক্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।

গতকাল (১ জুলাই) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলের প্রধান ১। বেলাল হোসেন (৪৫), ২। কামাল আহম্মেদ (৪২), ৩। আব্দুল মালেক (৩২), আকবর আহম্মেদ (৩২), ও তাদের সহযোগী ৪। নুরুল আমিন (৩৫)’দেরকে গ্রেফতার করে।

উক্ত অভিযানে উদ্ধার করা হয় ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১২ বোর ৪০ রাউন্ড, ৭.৬২ মিঃ মিঃ ১০ রাউন্ড এবং ৭.৬৫ মিঃ মিঃ ২ রাউন্ড। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ডাকাতি, চিংড়ি ঘের দখল ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। গ্রেফতারকৃত বেলাল, কামাল এবং মালেক আপন তিন ভাই। তারা অস্ত্রধারী ডাকাতদের নিয়ে ‘‘বেলাল বাহিনী’’ গড়ে তুলে মাছের ঘের দখল, লুটতরাজ, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল। এই বাহিনীর সশস্ত্র ডাকাত সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ জন।

গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ কক্সবাজারের চকরিয়াসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, চিংড়ি ঘের দখল, লবণের মাঠ ও আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। গ্রেফতারকৃতরা দেশি ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দ্বারা সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখাত এবং এলাকায় ত্রাশ সৃষ্টি করতো।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা আধিপত্য বিস্তার ও এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে ভাড়া করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাদের দলের শক্তি বৃদ্ধি করে। গ্রেফতারকৃতরা মৌসুমের পর মৌসুম মাছের ঘের মালিকদের নিকট হতে চাঁদা আদায় করতো। ঘের মালিকরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গ্রেফতারকৃত বেলালের নেতৃত্বে ডাকাতি করে নিয়ে যেতো ঘেরের মাছ ও মাছ চাষের নানা উপকরণ। এছাড়াও মাছের ঘের তাদের দখলে নিয়ে নিতো এবং কর্মচারীদের মারধর করে তাড়িয়ে দিতো। এমনকি ঘের মালিক ও কর্মচারীদের অপহরণ করেও নিয়ে যেতো এবং মুক্তিপণ আদায় করতো।

গ্রেফতারকৃতরা মহেশখালীসহ কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন স্থান হতে ভাড়া করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী/ডাকাত দলের সদস্যদের সে চকরিয়াতে নিয়ে আসতো। বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত করার উদ্দেশ্যে তারা সবসময় সশস্ত্র অবস্থায় প্রস্তুত থাকতো।

গ্রেফতারকৃত বেলালের নেতৃত্বে মাছের ঘের ও লবণের মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি, গুলি বর্ষন, মারামারি, ডাকাতি, লুট-পাট ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতো। বিভিন্ন অপরাধ ও মাছের ঘের দখলের উদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন মাধ্যম হতে অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদ ক্রয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এ সকল অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করতো এবং কার্যশেষে নিজেদের হেফাজতে মজুদ করে রাখত বলে জানায়।

গ্রেফতারকৃত বেলাল একজন দুর্ধর্ষ ও চিহ্নিত অস্ত্রধারী ডাকাত। সে এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, চিংড়ি ঘের দখল, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। সে দীর্ঘদিন ধরে মাছের ঘের দখলসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানায়। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় ০২টি হত্যা ও ০১টি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলাসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ০৯টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত কামাল পেশায় একজন কৃষক এবং পাশাপাশি ডাকাত চক্রের সদস্য। সে গ্রেফতারকৃত বেলালের আপন ভাই এবং তার অন্যতম সহযোগী। সে গ্রেফতারকৃত বেলাল এর নেতৃত্বে এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় ০১টি পুলিশ এ্যাসল্ট ও ০১টি অপহরণসহ মোট ০৬টি মামলা রয়েছে বলে জানায়।

গ্রেফতারকৃত মালেক পেশায় একজন চিংড়ি ব্যবসায়ী। সে চিংড়ি ব্যবসার আড়ালে ডাকাতি করতো বলে জানায়। সে গ্রেফতারকৃত বেলালের অন্যতম সহযোগী। সে গ্রেফতারকৃত বেলাল এর নেতৃত্বে এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় ০৩টি মামলা রয়েছে বলে জানায়।

গ্রেফতারকৃত নুরুল পেশায় একজন কৃষক এবং পাশাপাশি ডাকাত চক্রের সদস্য। সে গ্রেফতারকৃত বেলাল এর নেতৃত্বে এলাকায় ডাকাতি ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় মারামারির ০১টির মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আরও পড়ুন...