পিবিএ,ঢাকা: গোয়েন্দা সূত্রে র্যাব জানতে পারে একটি মাদক কারবারি চক্র পাশ্বর্বর্তী দেশ হতে বড় একটি মাদকের চালান নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় তাদের আস্তানায় অবস্থান করছে। এ প্রেক্ষিতে র্যাব উখিয়ার পালংখালির সফিউল্ল্যাহ কাটা সংলগ্ন এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
র্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল গত রাতে উখিয়ার পালংখালির সফিউল্ল্যাহ কাটা সংলগ্ন এলাকার ইরান মাঝির আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে বিশেষ কায়দায় লুকায়িত অবস্থায় আনুমানিক ১২০ কোটি টাকা মূল্যমানের ২৪.২ কেজি আইসসহ কক্সবাজার কেন্দ্রিক আইস চোরাচালানের অন্যতম মূলহোতা ১। ইমরান ওরফে ইরান মাঝি (৩৩), ও তার সহযোগী মোঃ রুবেল ওরফে ডাকাত রুবেল (২৬), ৩। মোঃ আলাউদ্দিন (৩৫), এবং জয়নাল আবেদীন ওরফে কালা বদা (৩৭)-কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা পরস্পর যোগসাজসে পাশ্বর্বর্তী দেশ হতে মাদক চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা পাশ্বর্বর্তী দেশের মাদক চোরাচালান চক্রের যোগসাজসে দেশে অবৈধ মাদক আইস চোরাকারবারির সাথে জড়িত। মূলত গ্রেফতারকৃত ইরান মাঝি এই চক্রের মূল হোতা। তার নেতৃত্বে মাদক সিন্ডিকেটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ইরান মাঝির নেতৃত্বে চক্রটির বেশ কয়েকজন সদস্য পাশ্বর্বর্তী দেশ থেকে দূর্গম সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কক্সবাজার ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রিস্টাল আইসসহ অন্যান্য ভয়ংকর মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। এই চক্রটি মূলত কক্সবাজার কেন্দ্রিক একটি মাদক চোরাকারবারী চক্র এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নির্ধারিত এজেন্ট রয়েছে। প্রথমে ইরান মাঝির নেতৃত্বে চক্রের সদস্যরা পাশ্বর্বর্তী দেশের মাদক চক্রের নিকট হতে মাদক গ্রহণ করে অবৈধ পথে ঘুমধুম সীমান্ত হয়ে তারা মাদকগুলো বর্ডারের নিকটবর্তী গোপন স্থানে জমা করে। পরবর্তীতে সেখান থেকে তারা দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল/নৌপথ ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আনা ক্রিস্টাল আইসসহ অন্যান্য মাদক কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখত। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রটি মাদকের চালানগুলো ইরান মাঝির জামতলির সফিউল্লাহ কাটা সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকার বাড়িতে/আস্তানায় নিয়ে আসত এবং নিজেদের মাঝে বন্টন করত। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তারা বিভিন্ন উপায়ে শরীরের মধ্যে বেধে, গাড়িতে সেট করে এবং যোগান হিসেবে রাজধানীমুখী বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকাসহ চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করত। সর্বশেষ তারা গতকাল এই চালানটি উক্ত আস্তানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে সেখান থেকে মাদকের চালানটি তারা চার ভাগে ভাগ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের এজেন্টদের নিকট পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল।
গ্রেফতারকৃত ইমরান প্রকাশ ওরফে ইরান মাঝি নলবুনিয়া ও পালংখালী এলাকার একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। সে দীর্ঘ দিন যাবৎ মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। সে মূলত মিয়ানমারের মাদক সিন্ডিকেটের সাথে সার্বিক সমন্বয় সাধন করত এবং তার নেতৃত্বে চক্রটি দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল/নৌপথে পাশ্বর্বর্তী দেশ থেকে ইয়াবা নিয়ে আসতো। পরবর্তীতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ক্রিস্টাল আইসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই বছর যাবত তারা মায়ানমার থেকে ক্রিস্টাল মেথ (আইস) নিয়ে আসা শুরু করে। ইতোপূর্বে সমুদ্রপথে সে বেশ কয়েকটি আইসের চালান নিয়ে এসেছে। ইরান মাঝি আরও জানায় পাশ্বর্বর্তী দেশ হতে আনা এটিই তার সবচেয়ে বড় মাদকের চালান। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, অস্ত্র, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা সংক্রান্ত ৭টির অধিক মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে সে বিভিন্ন মামলায় ৪ বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে বলে জানা যায়। সে একজন ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী।
গ্রেফতারকৃত রুবেল ইরান মাঝির সহোদর, কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী এবং ইরানের অন্যতম সহযোগী। সে দীর্ঘ দিন যাবৎ মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। সে বিভিন্ন সময় ইরান মাঝির সাথে পাশ্বর্বর্তী দেশ হতে নৌপথ/দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল দিয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসতো। পরবর্তীতে চালানগুলো নলবুনিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে এনে তার ভাইয়ের জামতলির সফিউল্লাহ কাটা সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকার বাড়িতে/আস্তানায় জমা করত। পরবর্তীতে তাদের আস্তানা হতে মাদকের চালান ভাগ করে বিভিন্ন উপায়ে এজেন্টদের মাধ্যমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, ডাকাতি, মারামারি ও অপহরণ সংক্রান্ত ৪টির অধিক মামলা রয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাভোগ করে বলে জানা যায়। সে একজন ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী।
গ্রেফতারকৃত আলাউদ্দিন বাংলাদেশ পুলিশের একজন বহিস্কৃত সদস্য। সে ২০১৭ সালে মাদক বহনের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তার নামে কক্সবাজারের উখিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, দস্যুতা ও মারামারি সংক্রান্তে ৪টির অধিক মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে সে ৩বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে এবং কারাভোগ করে বলে জানা যায়। সে কক্সবাজারের পালংখালী, রাজাপালং ও উলুবুনিয়া এলাকায় একটি মাদকের সামাজ্ঞ গড়ে তুলেছে। সে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী বজরুকের নিকটাত্মীয় এবং তার একান্ত সহযোগী হিসেবে কাজ করত বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত জয়নাল আবেদীন ওরফে কালা বদা এই চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং টেকনাফ এলাকার একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। ইতোপূর্বে সে ০৫ বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের টেকনাফসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, অস্ত্র, হত্যাচেষ্টা, মারামারি ও সরকারি কাজে বাধা প্রদান সংক্রান্তে ৬টির অধিক মামলা রয়েছে। সে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।