মোঃ শাহিনুর আলম: পরিচয়ের তান্ডবে আমার হুস জ্ঞান হারাবার মত কিছু নেই। তাই জানতে চাই, মানতে চাই, শিখতে চাই এই ছয়টি শব্দের মধ্যে নিজেকে বন্দি রাখতে চেয়েছিলাম জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। কিন্তু ইদানিং অনেকের লেখায় নিরপেক্ষতার দুর্ভীক্ষের সংগে সাহসের অভাব দেখে কলম ধরতে বাধ্য হলাম। আসলেই আমি অজানা গাছের অচেনা ফুল। জন্মেছি রাস্তার ঢালুতে। সৌন্দর্য আছে, সৌরভ আছে তবু ফুলদানিতে তুলতে চায় না কেউ। বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চটা ফুলদানির মত ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেনে নিলেও যেখানে কাগজের ফুলের কদর বেশী, সেখানে পিতলের টবে অনেক পাঁপড়ি মেলে ফুঁটে লাভ কি? আমি ফুলের রাজা গোলাপ না। তাই আমার ছোট মুখে বড় কথা মানায় না। আবার এদেশে শোষিত, বঞ্চিত গরীব মানুষের মুখ ছাড়া সত্য, সুন্দর, উচিৎ কথা তেমন বেরও হয় না। তাই সঙ্গত কারনে অত্যান্ত আক্ষেপ করে বাস্তবতার নিরিখে বলতে বাধ্য হচ্ছি বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি ঘুট ঘুটে অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার নীতি। বাংলাদেশের রাজনীতি মান ইজ্জত মূল্যবান শ্রম ঘন্টা হারিয়ে ফতুর হওয়ার বড় তরবারি। অনেক বিসর্জনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরে একটি সুন্দর মগা সৎ চরিত্রের দেশ পেয়েছিলাম। শুধু মাত্র অল্প সংখ্যক নষ্ট নেতানের্ত্রীদের বাড়াবাড়ি,ক্ষমতার জন্য গুম খুন মারামারি, রাতারাতি গাড়ী বাড়ি, কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার জন্য পুকুর চুরি, লাগামহীন দুর্নীতির কারনে আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারলাম না। সকলে বলে সম্মানের সাথে বাঁচতে হলে কাজের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আর সেই ধারনা বুকে নিয়ে কাজের সন্ধানে নেমে পড়লে যেখানে অফিস আদালতে শিক্ষকতায় ক্ষেতে খামারে, মাটি কাটায় কিংবা ঝি চাকর মিনতি গিরি কাজের জন্য যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও পরীক্ষার দরকার পড়ে, সেখানেই আবার রাজনীতির খাতায় নাম থাকলে সাথে পোস্টারে কোন বড় নেতা নেত্রীর পাশে ছোট একটি ছবি থাকলেই চাওয়া পাওয়ার সকল বন্ধ দরজা আপনা আপনি খুলে যায়। আবার ধারে ভারে ওজনে বয়সে মানানসই হউক বা না হউক- সাবেক বর্তমান মন্ত্রী এমপি বা উজির নাজিরের উত্তরসূরীর পরিচয়টুকু থাকলেই তাদেরকে কিংবা তাদের বাগানের মালিকে বড় নেতা হিসাবে মেনে নিতে হয়, জ্বি হুজুর জাহাপনা বলে কুর্নিশ করতে হয়। শীর্ষ নেতা নির্বাচনে সাংগঠনিক রীতি নীতি রেওয়াজের পথে দুই পরিবারের জন্য কোন ব্যারিয়ার না থাকাতে শেখ হাসিনা, তারেক রহমান শুধু মাত্র সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছেন বলে বিশেষ কোটায় শর্ত পূরনের সব ঘর শূন্য রেখে বড় পদটি, বড় চেয়ারটি পেয়েছেন। অর্থাৎ একজন বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে শীর্ষ পদে এসেছেন, অপরজন রাষ্ট্রপতির জেষ্ঠ্য পুত্র হিসাবে দ্বিতীয় শীর্ষ পদটি পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে বাবার পাসে থেকে মাথার সাথে মাথা লাগিয়ে ঠেকিয়ে ঘষিয়ে নিজের মাথাটা কেমন বানিয়েছেন বেশি বলে চৌদ্দ শিকের ভেতরে ঢুকতে চাইনা। তবে বঙ্গবন্ধুর মন যদি বঙ্গপোসাগরের মত বড় হয়ে থাকে তবে সাহস করে বলতে পারি তিনি তার পিতার ধারে কাছেও পৌঁছুতে পারেননি। আবার তারেক রহমানের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শহীদ জিয়ার আদর্শের কোন লেশ আছে কিনা বা নাই তিনি একটু ভাবলে খেয়াল করলে ধরতে,বুঝতে,বলতে পারবেন ভাল করে। দুই অভিজাত পরিবারের দুই নক্ষত্রের জনপ্রিয়তায় ঘন ঘন এত ধস কেন তারা কখনো বুঝতে চেষ্টা করেননি। দুজনের আশে পাশে যারা ছিলেন বা রয়েছেন তারা যদি বাইরে থেকে পাম্পার দিয়ে কানে পাম্প করে মাথায় কিছু সৎ, ভালো জ্ঞান বুদ্ধি সাপ্লাই দিতেন তবে হয়ত এতসর্বনাশ হত না, দেশ জনতারও বিশাল ক্ষতি হত না। নিকট অতীত বা বর্তমান সময়ে দুজনের কথা বার্তা, দেশ, দল পরিচালনার নমুনা দেখে আমার গবেষনা, চুলচেরা বিশ্লেষণনে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনার কপাল খারাপ, তারেক রহমানের নসীব খারাপ। কেননা শেখ হাসিনা কেন জানি সরকার গঠন করে ১৬ বা ১৮ কোটি জনতার প্রধানমন্ত্রী হতে চান না। দলীয় দৃষ্টি ভঙ্গির বাইরে এসে দলমত নির্বিশেষে আমজনতার জন্য কাজ করতে চান না। সামান্য উধার হয়ে একটু ইচ্ছে করলে তিনি সকলকে পরিচ্ছন্নভাবে আইনের শাসনে বশে এনে প্রত্যেকের গনতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারতেন। পাশাপাশি উন্নয়নে বেশভাল দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে কাবু করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা কন্যা হিসাবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন। শুনেছি বঙ্গবন্ধু মানুষকে খুব ভালবাসতেন, দলমত নির্বিশেষে সকলকে কাছে ডাকতেন, নিজেই এগিয়ে এসে অনেকের মান অভিমান ভাঙ্গাতেন। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মহৎ গুণাবলির ধারে কাছে যেতে পারছেন কিনা ধরা পরছে না। যাক দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবকুল রক্ষা করে দেশের জলন্ত বারুদ কিভাবে নেভাবেন বুঝতে পারছি না। তাছাড়া জনগনের উপর আস্থা ভরসা হারিয়ে বিদেশী কতিপয় মিত্রদের স্বার্থ রক্ষা করে কিভাবে দেশের স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব,গনতন্ত্র, মানবাধিকার, অর্থনীতি আইনের শাসন ইত্যাদি সুরক্ষা করবেন তারও হিসাব মিলাতে পারছি না। শুধুমাত্র জেদ্দাজেদ্দি, গোয়ার্তমির কারণে এবং নিজের একক বুদ্ধিতে চলতে যেয়ে মনে হয় তিনি খেই হারিয়ে ফেলেছেন, সুন্দর ছন্দের পতনে পড়েছেন। প্রধান বিরোধী দলকে গায়েবী মামলা হামলা দমন নির্যাতনের মাধ্যমে মাঠ ছাড়া করে সর্ব মহলে নিন্দিত জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ আয়োজন করে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকেও তিনি সরে আসতে পারছেন না। সব মিলিয়ে কপাল খারাপ বলে প্রশংসা করলে ভালো লাগে বকা দিলে মজা লাগে গনতন্ত্রের এই উদাহরণটি শিখতে পারেননি। এমনকি মিল মহব্বতের নৌকা তৈরী করে নিজে বৈঠা হাতে নিয়ে নৌকা চালাবেন এমন চেষ্টাও করেননি। অতঃপর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এর পুত্র তারেক রহমান। জনতার মুখের মিছিলে কান পাতলে শুনা যায় জীবন গড়ার ভরা মৌসমে মস্তিষ্কের খালি ভান্ডারে তীক্ষè জ্ঞানবুদ্ধি সমৃদ্ধশালী করার কোন চেষ্টাই তারেক রহমান করেননি। বরং একটি বিশেষ ভবনে কতিপয় গোত্র পরিচয়হীন ল্যাংটা পোলাপানদের সাথে মেতে থেকে তিনি জীবনের মহামূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন সবচেয়ে কম বয়সের জননন্দিত নেতা হওয়ার সকল সরস সুবর্ণ সুযোগগুলো হাত ছাড়া করেছেন। রাজনীতিটাকে তিনি তামাসা এবং লুডু খেলার মত মনে করে দেশের স্ব-রাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, অর্থনীতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেননি। আবার দলের বাইরে অভিজাত বর্গের কাছে তার গ্রহন যোগ্যতাও তেমন একটা বাড়াতে পারেননি। মানুষ খুউব আক্ষেপ করে বলাবলি করে বাবর, হারিজ চৌধুরী, খাম্বা মামুনের মত লোকদের পরিহার করে কেন তিনি রাহুল গান্ধী, বিলওয়াল, চেলসিদের মত তারকাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলেন না। একজন সৎ সাহসি পরিশ্রমী বিশাল জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতির সন্তান হয়ে পিতার দেশ গড়ার কর্মসূচীগুলো লুফে নিলেন না এবং প্রধানমন্ত্রী মাকে সহযোগিতার মাধ্যমে কৃষক শ্রমিক জনতার অন্তরে মিশে যেতে পারলেন না। অল্প কথায় মোদ্দা কথা হলো নসীব খারাপ বলে তিনি অনেক এগিয়ে থেকেও পেছনে পড়ে গেলেন। আর দুই নক্ষত্রের কাছে দেশের চাওয়া পাওয়া ছিল আকাশ ছোঁয়া। তারা দুজনই দেশবাসীকে কষ্ট দিয়েছেন ঠকিয়েছেন,হতাস করেছেন।এক কথায় দেশ জনতার ভাগ্য খারাপ বলে একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা, স্বার্ভৌমত্ব, গণতন্ত্র, অর্থনীতি, মানবাধিকার, আইনের শাসন, সৌর্হাদ্যপূর্ণ সর্ম্পকের সকল ভিত্তি গুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।