
রাজধানীর আদাবরের মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং লিডার কব্জিকাটা আনোয়ার এবং টুন্ডা বাবুর অন্যতম সহযোগী মোঃ রুবেল ওরফে পানি রুবেল (২৫)’কে সোমবার (১৭ মার্চ) রাতে ভোলা জেলার সদর মডেল থানা এলাকা থেকে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-২ ও র্যাব-৮।
সোমবার (১৭ মার্চ) র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এর পক্ষে খান আসিফ তপু গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী দীর্ঘদিন যাবত রাজধানীর আদাবর থানাধীন শেখেরটেক এলাকায় দুই ছেলে সন্তানসহ ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে। বাদীর বড় ছেলে মোঃ রাসেল (৩০) একটি কমিউনিটি সেন্টারে বাবুর্চির চাকুরি করে এবং ছোট ছেলে মোঃ বিজয় (২৫) দারোয়ানের চাকুরী করে।
উক্ত মামলার আসামিগণ এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। ভিকটিম বিজয় আসামিগণকে মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধ করলে আসামিগণ ভিকটিমের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ২০:০০ ঘটিকায় ঘটনাস্থল আদাবর থানাধীন শেখেরটেক এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে অবস্থানকালে ভিকটিম মোঃ বিজয়কে দেখতে পেলে আসামি মোঃ রুবেল ওরফে পানি রুবেলসহ এজাহারনামীয় আসামিগণ ও অজ্ঞাতনামা আরো ৯/১০ জন আসামি ধারালো দেশীয় অস্ত্র ও সামুরাই দিয়ে ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ভিকটিমের ডাক চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে আসামিরা দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন আহত অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
উক্ত ঘটনার পর বাদীর বড় ছেলে মোঃ রাসেল উক্ত ঘটনার বিষয়ে আসামি মোঃ রুবেল ওরফে পানি রুবেলকে জানালে আসামি তাকেও বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করে এবং গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ০১:৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম বাসায় ফেরার পথে আদাবর থানাধীন শেখেরটেক বড় মসজিদের সামনে পৌঁছালে উক্ত আসামিগণ ভিকটিম রাসেলকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো দেশীয় অস্ত্র ও সামুরাই দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভিকটিম রাসেলকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিম’দ্বয়ের মা বাদী হয়ে ০৭ জন আসামির নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৯/১০ জন আসামিদের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা (মামলা নং-১২ তারিখঃ ২০/০২/২০২৫, ধারা-১৪৩/৩০৭/৩২৬/৫০৬/১১৪/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০) দায়ের করেন।
উক্ত ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে র্যাব এ বিষয়ে আসামিদেরকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-২ ও র্যাব-৮ এর একটি আভিযানিক দল সোমবার (১৭ মার্চ) রাতে উক্ত মামলার আসামি মোঃ রুবেল ওরফে পানি রুবেল (২৫)’কে ভোলা জেলার সদর মডেল থানা এলাকা থেকে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মোঃ রুবেল ওরফে পানি রুবেল জানায় যে, সে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে টুন্ডা বাবুর মাধ্যমে কব্জিকাটা আনোয়ারের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত হয়। সে কব্জিকাটা আনোয়ারের নির্দেশে মোহাম্মদপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ বিভিন্ন সস্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত এবং আনোয়ার ওরফে কব্জিকাটা আনোয়ার গ্রেপ্তার পরবর্তী সময়ে সে উক্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করত। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৪টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায় এবং সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাভোগ করে। সাধারণত দিনের বেলায় তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় কম জনসমাগমপূর্ণ স্থানে পথচারীদের জিম্মি করে নগদ অর্থ, মোবাইল, ল্যাপটপ, ভ্যানিটি ব্যাগ ইত্যাদি মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে এবং রাত গভীর হলেই বাসা বাড়ি, ফ্লাটে ও গাড়ি থামিয়ে অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুটে নেয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে যা যাচাই বাছাই করে ভবিষ্যতে র্যাব-২ এ ধরণের অভিযান অব্যাহত রাখবে। আসামিকে গ্রেপ্তার পূর্বক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
উপরোক্ত বিষয়ে আসামির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।