ইঞ্জিনিয়ার এম এ হাসেম তপন : ফেসবুকে সরকারকে পরামর্শদাতা প্রতিদিনই বাড়ছে। আওয়ামী লীগের যারা বিরাট বুঝদার আছেন। যারা হয়ত একটুর জন্য মন্ত্রী, এমপি, মেয়র বা অন্য জনপ্রতিনিধি হতে পারছেন না। জীবনে কোনও রাজনৈতিক পরিচয় বা সরকারি প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন না। সুযোগ পেলে এই দেশকে আমেরিকা-কানাডার মতো চালাতে পারতেন তাদের উদ্দেশ্যে দু-একটা কথা বলতে চাই।
আপনাদের কি মনে হয় গার্মেন্টস খুললে দেশে করোনা রুগীর সংখ্যা বাড়ার আশংকা বাড়বে। একথা আপনি, আমি সবাই বুঝি, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুঝেন না! নাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা সব নির্বোধ। এমন যদি ভাবেন তাহলে ভুল ভাবছেন।। মহোদয়রা সবই জানেন। আর আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা বলে সবই অনেক ভালো বুঝেন।
আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, চায়না, জাপান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি যখন সামনে অর্থনৈতিকভাবে সমস্যার মোকাবেলার চিন্তায় তাড়াহুড়ো করে লকডাউন তুলে নিচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার করোনায় আক্রান্তরোগী বাড়ার পরও প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চালু করছে। তখন আমাদের মতো দরিদ্র রাষ্ট্র যারা অনেকাংশেই ঐ সমস্ত দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে-সব লকডাউন দিয়ে বসে থাকবো যাতে সামনের সময় দূর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় আর তার ভয়াবহতায় কোটি লোক অনাহারে আর হানাহানিতে মারা যায়।
দরিদ্র দূর্ভিক্ষে মরলে আপনি ভালো থাকবেন আশা করছেন! তা না, অভাব দেখা দিলে খুন-ডাকাতি-চুরি-ছিনতাই-লুটতরাজ এই সবে ধবংস হবে দেশ।। লকডাউন ছিলো দেশ প্রায় একমাসের বেশী, গার্মেন্টস কর্মীরা কি ঘরে বসেছিলো না দরিদ্র কোনো লোক ঘরে বসে থেকেছে। প্রতিনিয়ত হাটে বাজারে হাজার হাজার লোক ভীড় করেছে, এটা কি শুধু আমাদের সমস্যা ? তা নয়! ভারত,পাকিস্তান,ফিলিপিন, ব্রাজিল, তার্কি, ইরানসহ প্রায় সবগুলি দেশেই মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না, কারণ কি? কারন দারিদ্রতা!
আপনার প্রতিবেশী খেতে পারছে না। একথা জানার পর যদি দায়িত্ববান লোক হিসেবে তাদের খাদ্য সাহায্য পৌছে দিতে লকডাউন উপেক্ষা করেই কিন্তু আমি- আপনি ঘর ছেড়ে বেরিয়েছি। আর যার ঘরে খাবার নেই সে খাবার যোগাড়ে বেরিয়েছে। এই দুই যখন বের হয়েছে তখন দিন আনে দিন খায় এই লোকগুলিও বের হয়েছে কাজের আশায়। লকডাউন নামে। কাজে থাকার উপায়টা কি? না খেয়ে আপনি বাচতে পারবেন ? তাহলে বাজার বন্ধ কিভাবে রাখবেন?
এটা কি ৫০ লাখ লোকের দেশ? এই দেশের ১০০ বর্গ কিলোমিটারেই প্রায় ৫০ লাখের বেশী লোক বাস করে। বাজারে লোক না থাকার কারণ নাই,বাধ্য হয়েই এতো ভীড়। এবার ধরেন গার্মেন্টস এর কথা। এখনো হয়তো কিছু অর্ডার ও চাহিদা গার্মেন্টস শিল্পে রয়েছে সামনে কমে যাওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশী।
গার্মেন্টস কর্মীদের বয়স ১৮-৪০ এর ঘরে আর এই খাতে মহিলা কর্মীর সংখ্যাই বেশী। এই পর্যন্ত বিশ্বে যতলোক আক্রান্ত হয়েছে তার পরিসংখান অনুযায়ী সব চেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছে এই বয়সীরা এবং নারীরা।। সেই হিসেবে সবচেয়ে কম ভালনারেবল হচ্ছেন এই গার্মেন্টস কর্মীরা। এটা যুক্তি নয় এটা বাধ্য হয়েই হিসেব করতে হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রকে। এর অর্থ হচ্ছে জীবন বাচানোর তাগিদেই বাজার খোলা রাখা বা গার্মেন্টস খোলার মতো কাজ দুটি সরকার করতে বাধ্য হচ্ছে।
এবার আরেকটা ব্যাপার সেটা হলো মসজিদ বা উপসনালয় নিয়ন্ত্রিত করা প্রসংগে। মুসলমান জনসংখ্যার পার্সেন্টেজ অন্যুায়ী বাংলাদেশের স্থান পৃথিবীতে ৩০তম (২০১৪ অনুযায়ী) যা ৯০% এর মতো আমাদের চেয়েও যে সমস্ত দেশে মুসলমানদের পার্সেন্টেজ বেশী সেখানেও করোনা মোকাবেলায় মসজিদ কোথাও নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে এবং অনেক জায়গায় বন্ধও করা হয়েছে। এটা বৈশ্বিক সিদ্বান্তে, আমাদের নেত্রীর বা সরকারের নয়। মসজিদকে বা অন্যান্য উপসনালয়কে কেন নিয়ন্ত্রন করা হলো? আগে একটু বুঝা দরকার মনে হয়। বাজারের সাথে মসজিদের মতো পবিত্র জায়গার তুলনা চলে নাহ। মসজিদ সর্ব উৎকৃষ্ট আর বাজার নিকৃষ্টতম জায়গা। বাজারে যায় পরিবারের একজন, সপ্তাহে একদিন গেলেই হয়তো চলবে-সবচেয়ে সক্ষম ব্যক্তি গেলেই হয়তো চলে,যার রিস্ক কম। মসজিদগুলোতে মুলত সিনিয়র সিটিজেনই বেশী যায়। যারা যায় তারা পাঁচ ওয়াক্তই যায়। বয়স যাদের বেশী তারাই কিন্তু করোনায় সবচেয়ে বেশী ঝুকিপূর্ণ।
বাজারে আপনি জুতো পায়ে দিয়ে যেতে পারবেন, মসজিদে কি পারবেন? মসজিদে অজু করবেন -মুখে মাস্ক পরে কি অজু করতে পারবেন? পানি কি কোথাও আপনার মুখ থেকে ছিটবে না ? মসজিদে জামাতে কাতারে দাড়ানোর নিয়ম আছে যা সোস্যাল ডিস্টেন্স তত্ত্বের সম্পুর্ন বিপরীত (একজনের সাথে আরেকজনের গায়ের দুরত্বের, গুগলে দেখে নিন)। মসজিদের মেঝেতে সিজদা দিলে নাক,মুখ, কপাল, হাত মেঝে স্পর্শ করবে না? বাজারে কি এমনটা করতে হয়। বাজারে পরিবারের যে কাউকে পাঠালেই হবে মসজিদে আপনাকেই যেতে হবে। নামাজ বাসায় পড়া যায় বিকল্প অপশন আছে। কিন্তু বাজারে না গিয়ে খাওয়ার কি কোনো অপশন আছে? ধনীরা কিছু কিনে স্টক করলেও অন্যদেরতো সেই অবস্থাই নেই। বাধ্য না হলে সরকার এই অজনপ্রিয় পদক্ষেপ নেয়না। উনারাও মুসলিম, উনারাও ঈমানদার।
দরিদ্রদের হাতে খাবার তুলে দিতে যেমন আপনার লকডাউন থেকে বের হয়ে আসতে হয়। এ দেশের প্রধান যিনি এদেশের মানুষের হাতে খাবার যাতে থাকে সেই নিমিত্তে কিছুটা ঝুকি নিয়েও সিদ্বান্ত নিতে হয়। আর ঐ যে বিরোধীদল আছে তারা এখানেই রাজনীতি করে আপনার অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে আপনাকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়ে দেশের অবস্থা খারাপ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখবে। কতজন সরকার বিরোধীদের আপনি এই সময়ে ব্যক্তিগত বা দলগতভাবে ত্রান দিতে দেখেছেন -সোস্যাল মিডিয়ার যুগে সবার চোখে পরার কথা। ওদের কি দায়িত্ব নেই? ওরা তা করবে নাহ! কারণ সমস্যা সমাধান তাদের রাজনীতি নাহ; সমস্যা বাড়ানোর নামই তাদের রাজনীতি। আমেরিকার জিএসপি সুবিধা বন্ধ হয়েছে এই দেশের বিরোধীদলীয় চিঠিতে। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হয়েছে উদেরই লবিংএ। এই জন্যই আমরা বাংলাদেশী। নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারি। আওয়ামী লীগ সরকারের বাইরে থাকলে এমন করে দেশের ক্ষতি করতো কিনা জানি নাহ তবে করলে সেই দিন আওয়ামী লীগএরও বিরোধীতাই করবো। ইনশাআল্লাহ।
কাজেই মসজিদে না যেতে পারার এই সাময়িক সমস্যাকে নিয়ে রাজনীতি করার ভয়াবহতা নিয়ে সবাই সজাগ থাকুন। জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক : প্রকৌশলী ও সমাজকর্মী