করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি এবং আমাদের উদাসিনতা

পিবিএ: পৃথিবীতে করোনাকাল চলছে। লকডাউন শেষে কাজকর্ম শুরু হয়েছে। অর্থনীতি পুনুরুদ্ধারে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। করোনার অতিমারিতে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আমাদের দেশেও প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিষেধকহীন এই রোগ থামাতে শুরু থেকেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে। এজন্য শুরু থেকেই পৃথিবীর সব দেশ জোর দেয় স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করা, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, হাত বারবার সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা, হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা বা সংস্পর্শে না আসা, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে দেয়া, কাপড় চোপড়সহ সবকিছু জীবাণুমুক্ত রাখা ইত্যাদি সহ আরো বেশকিছু নিয়ম কানুন। এসব করার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা।

তা সত্ত্বেও প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম দফা সংক্রমণ শেষে কোনো দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ হচ্ছে। যখন মনে হচ্ছে করোনা ভাইরাস বিদায় নিয়েছে তখন নতুন কোনো রোগী পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য বিভিন্ন দেশ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছে। রাশিয়া ও চীন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সামনের কাতারে রয়েছে। আরও কয়েকটি দেশ সফলতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। সেদিন বেশি দূরে নয় যখন করোনা ভাইরাসের কারণে আর কোনো প্রাণহানি হবে না।

করোনার ভ্যাকসিন প্রতিটি মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হবে। অন্য অনেক ভাইরাসের মতো করোনা ভাইরাস ভীতিও আমাদের ভেতর থেকে বিদায় নেবে। করোনা নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা থাকবে না। সেদিন বেশি দূরে নয়। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। মানতে হবে। বুঝতে হবে মেনে চলাটাই একমাত্র অবলম্বন। এই সময়টাতে আমাদের সামাজিক দুরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি মেনা চলা একান্ত প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিধি এমন একটি বিষয় যা আমাদের প্রতিদিন মেনে চলা উচিত। এটা ছোট থেকে বড় সবার মেনে চলা উচিত। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো নিত্য স্বাস্থ্যবিধি আমাদের এমনিতেই অনুসরণ করা উচিত। এর ফলে আমরা বহু রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। কিন্তু আমরা তা কতজন করি? নিজের সুরক্ষায় করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর প্রথম থেকেই এ কথাই বলা হচ্ছে। কিন্তু এখন হাট বাজারে সবর্ত্র পরিস্থিতি দেখে মনে হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তেমন কোনো আগ্রহ আমাদের মাঝে নেই। মাস্ক ব্যবহারেই চূড়ান্ত অনীহা দেখা যাচ্ছে। কোন নিয়ম বা আইন তৈরির উদ্দেশ্য থাকে জনসাধারণের কল্যাণ।

আমাদের দেশে জনকল্যাণে বহু আইন রয়েছে। কিন্তু সেসব বহু আইনের মেনে চলার প্রবণতা নেই। একটু মেনে চললেই যখন দেশটাকে আরো সুন্দর করে তোলা যায় কিন্তু আমরা তা করতে নারাজ। আর করোনার সময়ে মেনে চলা আবশ্যকীয় স্বাস্থ্যবিধি নিজের জীবনের প্রশ্ন। নিজের সাথে আরো অনেক মানুষের জীবনের প্রশ্ন। কারণ একজন থেকে অনেকে ছড়ায় এই ভাইরাস। অথচ সামান্য একটু অভ্যাস পরিবর্তন করলেই আমরা নিজেদের সুরক্ষিত করার পাশাপাশি অন্যদেরও সুরক্ষিত রাখতে পারি। করোনা মহামারীর শুরুর পর থেকে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা,বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এসব স্বাস্থ্যবিধির অনুশীলন করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এখনো তাই বলা হচ্ছে। কারণ প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে এবং আক্রান্তও হচ্ছে। কতদিনে ভ্যাকসিন আমাদের দেশে আসবে ততদিন আরও প্রাণহানি ঘটবে। যদি আমরা সবাই চাই তাহলে এই প্রাণহানি এবং আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারি। এটা করা সম্ভব কেবল স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে।

কিন্তু আমাদের সেই চিরাচরিত জীবন যাপন আমরা আজও ছাড়তে পারিনি। এই করোনার সময়েও আমরা প্রায়ই স্বাস্থ্যবিধি মানতে অস্বিকার করছি। করোনা শুরুর পর কিছুটা নিয়মের মধ্যে জীবন যাপন করলেও দিন গড়ানোর সাথে সাথে আমাদের মধ্যে থেকে সেই প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। যা আমাদের দেশের জন্য আশংকাজনক। এতে কোনোভাবেই ভালো হবে না। করোনা নিয়ন্ত্রণের যে প্রচেষ্টা তা সফল ভাবে সম্ভব হবে না। কারণ এর অনেকটা দায় আমাদের ওপরেও বর্তায়। আমরা নিজেদের দায়িত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারি না। রাস্তাঘাটে,গণপরিবহণে,হাট বাজারে মানুষের চলাচল দেখে বুঝতে কষ্ট হয় যে পৃথিবীতে করোনার অতিমারী চলছে এবং আমাদের দেশে এই অতিমারীতে প্রতিদিন প্রাণহানি ঘটছে।

করোনা বিষয়ে সচেতনতা, করোনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা আমাদের মধ্যে থেকে ক্রমেই বিলুপ্ত হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় মাস্ক না পরার জন্য জরিমানা আদায়ের খবর আসে। কিন্তু তাতেও কি সবার মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। হচ্ছে না। অথচ মাস্ক ব্যবহার করা নিজেকে করোনা থেকে সুরক্ষা রাখার একটি কার্যকর উপায়। এতে নিজেকে সুরক্ষা রাখার সাথে সাথে অন্যকেও নিরাপদে রাখা যায়। সারা বিশে^ই এটি অনুসরণ করা হচ্ছে। তাহলে আমরা কেন নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি।

একটু সচেতনার অভাবে আমরা করোনার ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এমনিতেই দক্ষিণ এশিয়ায় করোনার প্রকোপ বাড়ছে। আমাদের উচিত ছিল করোনার শুরু থেকে যে অভ্যাস শুরু করেছিলাম বা আমাদের বিশেষজ্ঞরা করোনা থেকে বাঁচতে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছিল বা এখনো পর্যন্ত বলা হচ্ছে তা সঠিকভাবে অনুসরণ করা। এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হওয়া প্রয়োজন ছিল। তা হয়নি। অথচ এর বিপরীত চিত্র আমাদের চোখে পরছে। আইন মানার সাধারণ ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। কতৃপক্ষের আইনের কড়াকড়ির সাথে সাথে আমাদের সচেতনার কোনো বিকল্প নেই। নিজে করোনাকালীণ স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং অন্যকেও তা পালনে উৎসাহ দিতে হবে।

স্বপ্নীল রায়
সাংবাদিক ও কলাম লেখক

আরও পড়ুন...