করোনাকালের ডায়রি ০৯ এপ্রিল ২০২০


শতাব্দী আলম : আমি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছি। গণমাধ্যমকর্মী হিসাবে সংবাদ সংগ্রহ-প্রচার আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। তারপরও মানবতার জন্য এমন যুদ্ধ করার সৌভাগ্য শত বছরে একবারই আসে। আমি মানব জাতির জন্য যুদ্ধ করছি। বিজয়ী আমাদের হতেই হবে।
মানুষের সচেতনতা বাড়াতে আরও কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভোরে চা খেতে খেতে একটা সাদা কাগজে মোটা অক্ষরে লিখলাম,‘‘করোনা, ঘরে থাকুন’’। স্কসটেপ দিয়ে আমার বাইকে সামনের উইনশিডে লাগিয়েছি। বরাবরই আমি খুব ধীরস্থির বাইক চালাই। আজ আরো কম গতিতে চালিয়েছি। যাতে পথ চলতে মানুষের নজরে আসে।
কলেজ রোড কাঁচা বাজারের পাশে কিছুক্ষণ থামি। সেখানে মানুষের স্বাভাবিক ভির। এটা কোনভাবেই কাম্য না। মনে মনে ভাবি মানুষগুলো কেন যে সচেতন হচ্ছে না। মৃত্যুর মুখেও কি এদের বোধদয় হবে না। সফিউদ্দিন বাজারের সামনে আবার থামলাম। বাজারে ঢুকতেই মানুষের ভির। বাজারে না জানি কি অবস্থা।


টঙ্গী কলেজ রোড থেকে চেরাগ আলী, স্টেশন রোড পরে টঙ্গী থানায় ওসি আমিনুল ভাইয়ের সাক্ষাতে যাই।
থানার প্রবেশ মুখে ব্লিচিং পানি দিয়ে জুতা সেনিটাইজ করি। তারপর হ্যান্ড সেনিটাইজ করা হয়। ওসি সাহেবের সামনে বেশ খানিকটা দূরত্বে চেয়ার পাতা। বসলাম। তিনি বেশ আন্তরিকতার সাথে কুশল জানলেন। আমি সালাম দিয়েই প্রবেশ করেছি।
‘‘ভাই পুলিশ সদস্যদের জন্য আমরা গর্বিত। এই মহামারির ক্রান্তিলগ্নে পুলিশই সব থেকে বেশী কাজ করছে। আপনাদের সেলুট জানাই। একটা অনুরুধ করতে এলাম।’’
তিনি জানতে চাইলেন !
‘‘আসার পথে দেখলাম বাজারগুলো ও নিত্যপণ্যের দোকানের সামনে মানুষ ভির লাগিয়ে কেনাকাটা করে। চেরাগআলীতে ১০ টাকার চালের লাইনও বেশ ঘেষাঘেষি করে দাড়ানো। এদের কিছু বলুন।’’
তিনি বললেন, ভাই প্রতিদিন বলছি। আমি নিজেও যাচ্ছি। মানুষ কোনভাবেই মানছে না। বলে আসি! আমরা যেতেই আবার যা তা অবস্থা। তারপরও নিয়মিত যাচ্ছি! বলছি! ’’
আমি অনুরুধ করলাম, ‘‘আমিনুল ভাই এক কাজ করলে কেমন হয়। বাজারের সময়টা কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়মিত বাজারগুলোতে ডিউটি করুক। বাজারের প্রবেশ পথে এবং বাজারের ভিতরেও। ’’
তিনি প্রস্তুত হয়েই ছিলেন, আমার অনুরুধে নিজেই তক্ষুনি বের হলেন।
একজন ভাল অফিসার। ভাল লাগলো।
আমি উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে পিবিএ নিউজ এজেন্সি অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
আব্দুল্লাহপুর বেশ জ্যাম। ঢাকার প্রবেশমুখে পুলিশ চেকপোষ্ট। এর আগে টঙ্গী বাটার সামনেও চেকপোষ্ট। পুলিশ রোটিন মাফিক আমাকে না বের হতে অনুরোধ করে। আমি কর্তব্য পালনে আসতে বাধ্য! তাই বলি। আব্দুল্লাহপুরে একই প্রশ্ন এবং উত্তর।
ঢাকার রাস্তা একদমই ফাঁকা। ছিন্নমুল মানুষগুলো খাবারের খোঁজে চেয়ে থাকে। আমি মনে মনে ভাবি যদি ব্যগ ভর্তি খাবার সাথে নিয়ে ঘুরতে পারতাম। তাহলে এদের কিছুটা উপকার হতো।
সাংবাদিক হিসাবে মনে সন্দেহও নাড়া দেয়। ভাবলাম। কাল আবার দেখবো এই লোকগুলোই আসে কিনা। কারন একদিন সাহায্য পেলে পরদিন আসা উচিত না। কারন এখন শুধু বেচে থাকার প্রয়োজন। রোজ রোজ আসার দরকার নাই।
সারাদেশ থেকে ভাল খবর আসছে না। প্রতিদিন লকডাউন আর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
সরকার এবং প্রশাসন আন্তরিক। আমিও আশাবাদি।

উত্তরা, ঢাকা –বেলা : ৩ টা

পিবিএ/মোআ

আরও পড়ুন...