সনজিত কর্মকার,চুয়াডাঙ্গা: করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বাংলাদেশে কার্যত যে লকডাউন চলছে, এতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে আম-বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে বাগান মালিকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরপরও সময় মতো সব আম বিক্রি করতে পারবেন কি না সেটা নিয়ে তারা সংশয়ে আছেন। কারণ দেশজুড়ে কার্যত লকডাউন চলছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলাতে ১৮৭৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ১৯৭৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে আরও বেশি জমিতে আম চাষ হচ্ছে। মূলত আম চাষ লাভজনক হওয়াতে জেলার কৃষকরা আম চাষে ঝুঁকছেন।
চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার কেশবপুর গ্রামের মাঠে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ২০১২ সালে ৪০ লাখ টাকায় ৭০ বিঘা বর্গা জমি লিজ নিয়ে ১০ হাজার পিচ আমের চারা রোপন করে বাগান তৈরী করেন আবুল কালাম, জাহাঙ্গীর হোসনে, সামসুল আলম, রফিকুল ইসলাম ও আব্দুল গনি। বাগানের প্রতিটি ডালে ঝুলছে থোকা থোকা আম। কিছুদিনের মধ্যেই সেগুলো হবে পরিপুষ্ট। বৈশাখ শেষে আমগুলো গাছ থেকে নামানো শুরু হবে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা।
তবে মুখে হাসি নেই আমচাষি ও বাগান মালিকদের। চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে লোকসানের শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
বাগান মালিকরা জানান, চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক বৈঠকে জানানো হয় আগামী ২০ মে গাছ থেকে আম সংগ্রহ করা যাবে। সেই মোতাবেক আগামীকাল বুধবার (২০ মে) থেকে আম নামানো হবে। আম পচনশীল হওয়ায় স্টোর করার সুযোগ নেই। তাই মাসখানেকের মধ্যেই আম বেচা-কেনা শেষ হয়ে যায়। চলমান পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘ হয়, তবে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।
বাগান মালিক আবুল কালাম জানান, রাজশাহী অঞ্চলের পরেই এ অঞ্চলের আম সুস্বাদু ও প্রসিদ্ধ। বিশেষ করে এখানকার হিমসাগর আমের বেশ সুনাম রয়েছে।
মালিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ জেলাতে প্রতি বছর হিমসাগর, ল্যাংড়া, আ¤্রপালি ও মল্লিকাসহ সব ধরনের আমই এ বাগানে উৎপাদন হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চুয়াডাঙ্গা জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চিটাগাং, সিলেটসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন মোকামে আম রপ্তানি করে থাকি। কিন্তু করোনা কারণে আমাদের এই আম গুলো বাজারজাত করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম মুন্সী আম চাষিদের আতংকের কথা স্বীকার করেই তিনি জানান, আমচাষিরা যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হন, এ জন্য এই মুহূর্তে কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁদের উদ্যোগ নিতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী হাসান পিবিএ-কে জানান, করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবে আমের বাজার নিয়ে বাগান বা আম ব্যবসায়ীদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আমচাষিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, এ জন্য কৃষি বিভাগ আম বাজারজাত নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশসনের সাথে বৈঠক করা হয়েছে।
পিবিএ/সনজিত কর্মকার/এএম