করোনাভাইরাস ও আমাদের সচেতনতা

রহমত উল্যাহ: বর্তমানে পুরো পৃথিবীজুড়ে একটিই আতংক, আর তা হলো করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। চিকিৎসাবিদদের মতে এটি সংক্রামক রোগ যার প্রতিশোধক এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি। তবে আশার দিক হলো -এটি সংক্রামক রোগ হলেও বাতাসে ছড়াতে পারে না। কেবল আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে সংক্রামিত হতে পারে। সেই আলোকে বিশ্বের অন্যান্য দেশেরর মত বাংলাদেশে রোগ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে। এই জন্য জরুরি ক্ষেত্র ব্যতিত অফিস আদালত, দোকানপাট, পরিবহন সেবা সহ সবকিছু বন্ধ ঘোষনা করলেও সর্বসাধারণের মাঝে ততটা সচেতনতা তৈরি হয়নি যতটা হওয়া দরকার ছিল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নিজেদের বাসা/বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। জনসমাগম সৃষ্টি না করতে বলা হয়েছে। ১ মাসের ব্যবধানে আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ পেরিয়ে গেলেও আমাদের যেন বোধোদয় হয়নি। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, চিকিৎসক, মিডিয়া কর্মীরা যথেষ্ট চেষ্টা করেই চলছেন। আমরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে লুকোচুরি খেলি। মাস্ক কিনে পকেটে রেখে দিই, তাদেরকে দেখলে মাস্ক ব্যবহার করি, তাদেরকে দেখলে পালিয়ে যায় আবার জনসমাগম তৈরি করি। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চায়ের দোকান খোলা হচ্ছে। অনেকের ভাবখানা যেন এমনই যে দোকানে গিয়ে এক কাপ চা না খেলে হবেই না। আগে যারা মসজিদেই যেতেন না তারা এখন স্ব-দলবল নিয়ে মসজিদে যাচ্ছেন। ইবাদত তো একাগ্রচিত্তে বাড়িতেও করা যায়। জনৈক র‌্যাব কর্মকর্তা এক যুবককে ৫ কিলোমিটার তাড়িয়ে ধরে জানতে চাইলে সে বললো, ঘরে শান্তি লাগে না বাহিরে শান্তি লাগে। এক মহিলা ঔষদ আনতে পুত্রবধু সহ ৪জনকে নিয়ে বের হয়েছে। প্রবাস ফেরত ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নিতে বাধ্য করেছে কেন এ নিয়ে জনৈকা গৃহবধুর উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। আবার চায়ের দোকানে বসে মাস্ক এর বানান নিয়ে মারামারি একজন নিহতও হলো। কেউ কেউ আবার বলছেন যে , এসব করে লাভ কি আল্লাহ যখন চাইবেন তখনই মৃত্যু হবে।

স্কুলে জীবনে হাজার বছর ধরে উপন্যাসে পড়েছিলাম ওলাবিবি(কলেরা/ডায়রিয়া) নামক রোগের ভয়ে মানুষ আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ির নিকটেও যেতেন। সম্ভবতঃ আমাদের সাহস পূর্বেকার লোকদের চেয়ে বেশি। হয়তো আমরা ভাবতেছি অন্য লোক আক্রান্ত হলে আমার কি আমি তো ভালো আছি।

একটি গল্প পড়েছিলাম, সাপ আর ব্যাঙের খুব ভাব, খুব বন্ধুত্ব ছিল। একদিন দুই বন্ধু ঘুরতে বের হলো। সাপ তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হেলে দুলে চলতে লাগলো। এতে পাশাপাশি চলতে সমস্যা হচ্ছিল ব্যাঙের। ব্যাঙ সাপকে বলল, ‘বন্ধু, তুমি একটু সোজা হয়ে হাটলেইতো পারো।’

সাপ বলল, ‘তুমি আসলে আমাকে পছন্দ করোনা তো তাই আমার চলন তোমার কাছে বাঁকা লাগে।’ ব্যাঙ যতই বোঝাতে চায় সাপ ততই ফোঁসফোঁস করতে থাকে। তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে কয়েকজন লোক ছুটে এসে সাপকে এলোপাতাড়ি লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। মেরে খেজুর গাছের ডালে সোজা করে ঝুলিয়ে রাখে। ব্যাঙ তখন আফসোস করে বলে, ‘সোজা হলেই বন্ধু, তবে তা মরণের পরে।’
জানি না আমরা কবে সচেতন হব। হয়তো তা রোগাক্রান্ত হওয়ার পরে।
লেখকঃ সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রেসক্লাব কোম্পানীগঞ্জ

আরও পড়ুন...