করোনাভাইরাস: কী করবেন, কী করবেন না

ডা. তানজিনা হোসেন :

জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, মাংসপেশি ও গাঁটে ব্যথাসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ দেখা দিলে আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর: ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এই বিশেষ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে দেশে–বিদেশে উদ্বেগ বাড়ছে। কিন্তু নিজেকে আর নিজের পরিবার, স্বজনদের রক্ষা করতে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার ভূমিকা কী হওয়া উচিত এ সময়? কীভাবে আপনি পারবেন এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে কিছু উপদেশ দিচ্ছে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক।

১. বারবার হাত ধোয়া
নিয়মিত এবং ভালো করে বারবার হাত ধোবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ)। কেন? এ কথা প্রমাণিত যে সাবান–পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুলে এই ভাইরাসটি হাত থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। হাতে ময়লা বা নোংরা দেখা না গেলেও বারবার হাত ধুতে পারেন। তবে বিশেষ করে হাত ধোবেন অসুস্থ ব্যক্তির পরিচর্যার পর, হাঁচি–কাশি দেওয়ার পর, খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনের আগে, টয়লেট ব্যবহারের পর, পশুপাখির পরিচর্যার পর।

২. দূরে থাকুন
এই সময় যেকোনো সর্দি–কাশি, জ্বর বা অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত এক মিটার বা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। কেন? আর সব ফ্লুর মতোই এই রোগও কাশির ক্ষুদ্র ড্রপলেট বা কণার মাধ্যমে অন্যকে সংক্রমিত করে। তাই যিনি কাশছেন, তাঁর থেকে দূরে থাকাই ভালো। ইতিমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। অসুস্থ পশুপাখি থেকে দূরে থাকুন।

৩. নাক–মুখ স্পর্শ নয়
হাত দিয়ে আমরা সারা দিন নানা কিছু স্পর্শ করি। সেই বস্তু থেকে ভাইরাস হাতে লেগে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন। অপরিষ্কার হাত দিয়ে কখনো নাক–মুখ–চোখ স্পর্শ করবেন না।

৪. কাশির আদবকেতা মেনে চলুন
নিজে কাশির আদবকেতা বা রেসপিরেটরি হাইজিন মেনে চলুন, অন্যকেও উৎসাহিত করুন। কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় নাক, মুখ রুমাল বা টিস্যু, কনুই দিয়ে ঢাকুন। টিস্যুটি ঠিক জায়গায় ফেলুন।

৫. প্রয়োজনে ঘরে থাকুন
অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।

৬. খাবারের ক্ষেত্রে সাবধানতা
কাঁচা মাছ–মাংস আর রান্না করা খাবারের জন্য আলাদা চপিং বোর্ড, ছুরি ব্যবহার করুন। কাঁচা মাছ–মাংস ধরার পর ভালো করে সাবান–পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। ভালো করে সেদ্ধ করে রান্না করা খাবার গ্রহণ করুন। অসুস্থ প্রাণী কোনোমতেই খাওয়া যাবে না।

৭. ভ্রমণে সতর্ক থাকুন
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং অন্য দেশ থেকে প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করুন। অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন।

৮. অভ্যর্থনায় সতর্কতা
কারও সঙ্গে হাত মেলানো (হ্যান্ড শেক), কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন

৯. স্বাস্থ্যকর্মীর সাহায্য নিন
এ সময়ে কোনো কারণে অসুস্থ বোধ করলে, জ্বর হলে, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকর্মীর সাহায্য নিন। তিনি বিষয়টি গোচরে আনতে ও ভাইরাস ছড়ানো বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারবেন। অথবা আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর: ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১ এবং ০১৯৩৭১১০০১১।

১০. সঠিক তথ্য জানুন
সঠিক তথ্য-উপাত্ত পেতে নিজেকে আপডেট রাখুন। গুজবে কান দেবেন না। আপনার স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকের কাছে তথ্য জানতে চান।

সহযোগী অধ্যাপক, গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ (সূত্র : প্রথম আলো)

আরও পড়ুন...