নাঈম ইসলাম, শেরপুর : করোনা ভাইরাস (কভিট-১৯) এর সংক্রমণ রোধে প্রশাসনের কড়াকড়ি আরোপের কারনে হাট বাজারে লোকজনের উপস্থিতি একদম কমেছে। এতে লোকসানের সম্মূখীন হচ্ছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার হাজারো কৃষক পরিবার।
অপরদিকে মিষ্টি ও দুগ্ধ জাত খাবার উৎপাদনকারী স্থানীয় বিভিন্ন দোকান বন্ধ থাকায় দুধের চাহিদা নেই বললেই চলে।
নভেল করোনা ভাইরাস (কভিট-১৯) এর প্রভাবে বিশ্বের উন্নত অনেক রাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা আজ থমকে গেছে। বাংলাদেশও এই ভাইরাসের প্রভাবে কিছুটা হলেও থেমে গেছে বিভিন্ন উন্নয়ন চলমান কর্মকান্ড। করোনা আতঙ্কে স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন লাখ লাখ মানুষ। অনেক এলাকাবসীরা স্বেচ্ছায় লকডাউন ঘোষণা করেছেন নিজ নিজ পাড়া মহল্লা।
জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে সীমিত করা হয়েছে হাট বাজারে বেচা কেনার কার্যক্রম। ফলে বেচা কেনা স্বাভাবিক কারনেই কমেগেছে। এতে লোকসানের সম্মূখীন হচ্ছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার হাজারো কৃষক পরিবার।
করোনা ভাইরাস (কভিট-১৯) এর সংক্রমণ রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাট বাজারের সময় নির্দৃষ্ট করায় এবং লোকজনের বাহিরে বের হওয়া সীমিত করায় হাট বাজারে লোকজনের উপস্থিতি একদম কমে গেছে। এমতাবস্থায় বিক্রির উদ্দেশ্যে গ্রাম থেকে শহরের বাজার গুলোতে শাক সবজি নিয়ে আসা কৃষকরা বিক্রি করতে না পারায় তা ফেলে চলে যাচ্ছেন। এতে করে তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। তবে দেশ ও জন স্বার্থে তাদের এ লোকসানকে তারা মেনে নিচ্ছেন।
বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সবজি বিক্রেতা কৃষকার জানান, মানুষ করোনা ভাইরাসের ভয়ে ঘর থেকে বাহির না হওয়ায়, আগের চেয়ে চাহিদা অর্ধেকে নেমে এসছে। তাই দাম কম হলেও ক্রেতার অভাবে শাক সবজি বিক্রি করতে না পেরে বাজারেই ফেলে চলে যেতে হচ্ছে তাদের। এসব ফেলে যাওয়া শাক সবজি গরু ছাগলে খায়, আর কিছু নষ্ট হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার বিকেলে নকলা বাজারসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন বাজারে সরজমিনে দেখা যায়, ক্রেতা না থাকায় অনেক কৃষক তাদের ডাটা ও শাকসহ অপেক্ষাকৃত কম চাকচিক্য বিভিন্ন সবজি ফেলে রেখে চলে গেছেন। এসব ডাটা ও শাক সবজি গরু-ছাগলে খাচ্ছে। কিছু দরিদ্র পরিবারের লোকজন সেখান থেকে তাদের পছন্দ মতো শাক-সবজি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তাছাড়া কেউ কেউ অপচয় রোধে ফেলে চলে যাওয়া শাক সবজি থেকে অনেক দরিদ্র পরিবারের সদস্যদেরকে বাড়িতে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করছেন।
পাইকারী শাক-সবজি বিক্রেতা কায়দা গ্রামের শেখ ফরিদ, চরকৈয়া এলাকার মান্নান মিয়া ও মুছারচরের মফিদুল ইসলাম জানান, তারা কৃষকদের কাছ থেকে পাইকারি হিসেবে কিনে নিয়ে খুচরা হিসেবে বিক্রি করেন। কিন্তু বাজারের সময় নির্দৃষ্ট হওয়ায় ও ক্রেতার উপস্থিতি কমে যাওয়ায় আগের মতো মালামাল কিনছেন না। নকলা বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা দক্ষিণ নকলা গ্রামের রফিকুল ইসলাম, জালালপুর এলাকার জুলহাস উদ্দিন, ধামনা গ্রামের সাহাবুল মিয়া, কলাপাড়া গ্রামের সাহু মিয়া, পাইস্কা এলাকার আমজাদ হোসেনসহ অনেকে জানান, তারা পাইকারদের কাছ থেকে শাক সবজি কিনে নিয়ে খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু এখন করোনার কারনে একদমই সীমিত আকারে বেচা কেনা করা হচ্ছে। ফলে আগের চেয়ে বেচা কেনা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে করে কৃষকরা আগের মতো মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। খুব ভালো মানের শাক সবজি উৎপাদনকারী কৃষকরা পাইকার ও অন্যান্য ক্রেতাদের কাছে কিছুটা মূল্যায়ন পেলেও, মাঝারি ও অপেক্ষাকৃত দেখতে নিন্ম মানের শাক সবজি উৎপাদনকারী কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে, তাদের উৎপাদিত শাক সবজির যেন কোন মূল্যই নেই। ফলে তাদের গুণতে হচ্ছে লোকসান, এমনটাই জানালেন অনেক কৃষক। জন স্বার্থে এ লোকসানকে তার কিছু মনে করছেন না।
অন্যদিকে দুগ্ধ খামারী বানেশ্বরদী ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার তালাত মাহমুদ জানান, তার খামারের বেশ কয়েকটি দুধাল গাভী থেকে প্রতিদিন ১৫০ কেজি থেকে ১৮০ কেজি দুধ দোহন করছেন। কিন্তু মিষ্টি ও দুগ্ধ জাত খাবার উৎপাদনকারী স্থানীয় বিভিন্ন দোকান বন্ধ থাকায় দুধের চাহিদা নেই বললেই চলে। উপজেলার কায়দা তাতড়াকান্দা এলাকার আরেক দুগ্ধ খামারী পারভেজ মোশারফ জানান, করোনা ভাইরাসের প্রভাবের কারনে তারা দুধ বিক্রি করা নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। বাজারে স্থানীয় ভাবে দুধের যে চাহিদা রয়েছে তা উৎপাদনের তুলনায় খুবই নগন্য। তাই দুগ্ধ খামারীরা পড়েছেন বিপদে। গাভীর খাবার বাবদ তাদের প্রতিদিন লোকসান গুণতে হচ্ছে বলে তারা জানান।
দেশের জনগনকে সুরক্ষা দিতে বা ভালো রাখতে এর চেয়েও বেশি লোকসান মেনে নিতে রাজি বলে তারা জানান।
পিবিএ/নাঈম ইসলাম/মোআ