আহসান টিটু, বাগেরহাট : বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় কোডিভ-১৯ সন্দেহকারী রুগীর নমুনা সংগ্রহ করার কথা শুনে হাসপাতাল থেকে পালিয়েছে প্যাথলজি বিভাগের কর্মকর্তা অনিমেষ সাহা ।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ হুমায়ুন কবির পিবিএকে জানান, ‘১৬ এপ্রিল দুপুরে অনিমেষ সাহার পাঠানো স্বেচ্ছায় অবসরের একটি আবেদন পেয়েছি।’
গত ১১দিন যাবত পালিয়ে আত্মগোপনে থাকা মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এমটি) অনিমেষ সাহা না থাকায় বন্ধ রয়েছে প্যাথলজি বিভাগের পরিক্ষা-নিরিক্ষার সকল কার্যক্রম।
তবে কাউকে না জানিয়ে সরকারের জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে দীর্ঘ ১১দিন পালিয়ে থাকা এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যাবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আর তিনি পালিয়ে থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে চিকিৎসারত ও বিভিন্ন দিক থেকে আসা সাধারণ রুগীরা।
জানা গেছে, খুলনা বিভাগের একমাত্র সমুদ্র বন্দর নগরী মোংলা উপজেলার প্রায় ২ লাখ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৯৮ সালের ২৩ মে তৈরী করা হয় ৫০ সয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২৫ জন চিকিৎসক থাকার নিয়ম থাকলেও আছে মাত্র ১০/১২জন। এর মধ্যে ৫জন চিকিৎসক নিয়মিত অফিস করেন। এখানে প্যাথলজি বিভাগে ৩জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট থাকার স্থলে আছে মাত্র ১জন। সরকারের স্বাস্থ্য শাখার লোকবল কম থাকায় এ শাখায় দীর্ঘদিন যাবত একজন (এমটি) দিয়ে চলে আসছিলো হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের কার্যক্রম। কিন্ত সারা দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে দেশের সকল স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকসহ অন্যান্য শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা ছিল। তার মধ্যেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্বেও মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ শাখার একমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অনিমেষ শাহা অফিসে আসা বন্ধ করে দেয়। পূর্বে তিনি অফিসে আসলেও প্যাথলজি বিভাগে না বসে অন্যাত্র ঘুরে বেড়াতেন বলে অভিযোগ উঠেছিলো তার বিরুদ্ধে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ এপ্রিল মোংলা পোর্ট পৌর শহরের খানজাহান আলী সড়কের হাকিম হাওলাদারের ভাড়াটিয়া শাহিনুর আক্তার নামের এক গৃহবধু করোনা ভাইরাস সন্দেহে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের নির্দেশনা দেন উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশী শাহিনুর আক্তারকে আইসোলেশনে রেখে নমুনা সংগ্রহ করে তা খুলনা মেডিকেলে পাঠানোর জন্য বলে। এ খবর শুনেই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এমটি) কর্মকর্তা অনিমেষ শাহা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।
দীর্ঘ ১১দিন প্যাথলোজি বিভাগ বন্ধ থাকায় দুর দুরন্ত থেকে আসা রুগীরা পরেছে চরম বিপাকে। আত্মগোপনে থাকা অনিমেষের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ বলেও স্থনীয়দের অভিযোগ।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস জানায়, কয়েকদিন যাবত প্যাথলোজিস্ট অনিমেষ
আর তিনি পালিয়ে থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে চিকিৎসারত ও বিভিন্ন দিক থেকে আসা সাধারণ রুগীরা। হাসপাতালে অনুপস্থিত। সম্ভবত করেনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয় একটু ভীত হয়ে পড়েছে। মোবাইল ফোনও বন্ধ, তবে তার স্ত্রীর ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
বাগেরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ১১দিন পালিয়ে থাকার ঘটনাটি তার জানা নাই, তবে ১৬ এপ্রিল দুপুরে অনিমেষ শাহার স্বেচ্ছায় অবসরের একটি আবেদন পেয়েছি। স্বেচ্ছায় অবসরের সময় হয়েছে কিনা বা সরকারের এ জাতীয় দুর্যোগ মুহুর্তে পালিয়ে থাকার বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে তিনি জানান।
মোংলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ও জেলা পরিষদের সদস্য শেখ আঃ রহমান পিবিএকে বলেন, অনিমেষ সাহা নিয়মানুযায়ী (স্বেচ্ছায় অবসরে) যেতে পারে কিন্ত দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক মানুষের জন্য তার হাসপাতালে দায়ীত্ব পালন করতে হবে। যদি না করে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবী জানাবো আমরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেনোলজিষ্ট অনিমেষ শাহার মুঠো ফোনে বার বার চেষ্টা করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পিবিএ/মোআ