কল্যাণমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রগঠনের অভিপ্রায়ে বর্তমান সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বোরি) সংস্কারের লক্ষ্যে মহাপরিচালক পদে পরিবর্তন এনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৭ অক্টোবর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফি ও ওশনোগ্রাফি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা কমডোর এম মিনারুল হককে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়। কিন্তু বিগত সরকারের মদদপুষ্ট কতিপয় ব্যক্তিবর্গ এ সংস্কারের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করছে। যা সরকারের সংস্কার কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে এবং দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ওশনোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটে কর্মরত কিছু সুবিধাভোগী কর্মকর্তা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় ও চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা বিবেচনায় মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে সরকার বিরোধী কর্মসূচি গ্রহণে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতায় গৃহীত এ সকল কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ হচ্ছে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে বর্তমান সরকারের সংস্কার কার্যক্রমকে ব্যাহত করা।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্র ও সমুদ্র সম্পদের সুরক্ষা এবং সমুদ্র জরিপ ও গবেষণায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী পথিকৃৎ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি সমুদ্র গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে ১৯৮৩ সাল থেকে হাইড্রোগ্রাফি ডিপার্টমেন্ট এবং পরবর্তীতে ব্লু-ইকোনমি সেল সংযোজন করে নৌবাহিনী। বাংলাদেশ নৌবাহিনী হাইড্রোগাফিক এন্ড ওশনোগ্রফিক সেন্টারের (বিএনএইচওসি) অধীনে পরিচালিত সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ও হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে কার্যক্রমের মান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
তাদের তৈরীকৃত পেপার ও ডিজিটাল নেভিগেশনাল চার্ট ব্রিটিশ এ্যাডমিরালটি কর্তৃক স্বীকৃত যা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য সামুদ্রিক জাহাজ ব্যবহার করছে। সমুদ্র অর্থনীতি বাস্তবায়ন এবং পানির গভীরতা পর্যবেক্ষণসহ সমুদ্র তলদেশের নানা প্রতিবন্ধকতা সনাক্ত করে সকল জাহাজ চলাচলালের লক্ষ্যে নিরাপদ সমুদ্র পথ বজায় রাখতে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে নৌবাহিনী। সেই সাথে তাদের ৫টি রিসার্চ শিপ ও কিছু বিশেষায়িত সার্ভে বোট সমুদ্র গবেষণায় ইতোমধ্যে সাফল্য দেখিয়েছে। এ সকল গবেষণা কার্যক্রমে কমডোর মিনারুল হক সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।
নবনিযুক্ত বোরি’র মহাপরিচালক কমডোর এম মিনারুল হক নেভাল হাইড্রোগ্রাফি স্কুল, গোয়া, ভারত থেকে আইএইচও হাইড্রোগ্রাফি কোর্স এবং গোয়া ইউনিভার্সিটি হতে হাইড্রোগ্রাফিতে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশোনোগ্রাফি হতে ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি বর্তমানে ওশনোগ্রাফি নিয়ে পিএইচডি করছেন। এছাড়া বেসিক ও লং হাইড্রোগ্রাফিক কোর্সেও ওশানোগ্রাফি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ইতোপূর্বে তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ডাইরেক্টর অব হাইড্রোগ্রাফি, ডাইরেক্টর অব-ব্লু-ইকোনমি এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক ও ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ সেন্টারের অধিনায়ক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের অন্যতম ‘ওশান রিসোর্স পারসন’ হিসেবে পরিচিত কমডোর মিনারুল হক ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব মেরিটাইম রিসার্চ এন্ড ডেভলপমেন্ট’ (বিমরাড) এর মহাপরিচালক হিসেবেও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট (বোরি) এর মহাপরিচালক নিয়োগের পূর্বে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে আর্থ ও ওশান সাইন্স ফ্যাকাল্টির ডিন এবং ওশানোগ্রাফি ডিপার্টমেন্টের হেড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। যেখানে তিনি ওশানোগ্রাফিক বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করেছেন। এছাড়াও তিনি ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট অফ বে অব বেঙ্গল এন্ড বাংলাদেশ স্টাডিজ এর ডাইরেক্টর হিসাবেও সফল ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কমডোর মিনারুল হক গত প্রায় ৩০ বছর যাবৎ হাইড্রোগ্রাফি ও ওশানোগ্রাফি বিষয়ক কর্মকাণ্ডসহ সমুদ্র গবেষণা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন।
জানা গেছে, বিগত সরকারের আস্থাভাজন হয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পা ড. তৌহিদা রশীদ। তিনি বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রজেক্ট এর ক্রয় ও ঠিকাদার নির্বাচনে দলীয়করণ ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় তা তৎকালীন সরকার কর্তৃক আমলে নেওয়া হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কিছু ব্যক্তি বর্তমান মহাপরিচালক নিয়োগে অসন্তুষ্ট হয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার কর্তৃক দুর্নীতিবাজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিবর্তনের মাধ্যমে বিগত দিনের নৈরাজ্য রোধের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখায় বোরি এর সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই নিয়োগে বিরোধিতা করেন। আরও উলেখ্য, মহাপরিচালক হিসেবে গত কয়েক বছরে যারাই দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কেউই সরাসরি ওশানোগ্রাফিতে এক্সপার্ট ছিলেন না বলে জানা যায়। সদ্য সাবেক মহাপরিচালক ছিলেন একজন Meteorologist। যেখানে কমডোর মিনারুল হক সরাসরি ওশনোগ্রাফি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। এ সকল বিবেচনায় কমডোর মিনারুল হক বোরি’র মহাপরিচালক হিসেবে অত্যন্ত যোগ্য ব্যক্তি ও সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।