পিবিএ ডেস্ক : ভারতের কলকাতাতে গরুর দুধের দামকে পিছনে ফেলে দিয়েছে গো-মূত্রের দাম! আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র গো-মূত্রের রোগ প্রতিরোধক গুণের দাবিকে বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি না দিলেও ব্যবসায়ী মহলের খবর, গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের পথ অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায় গত তিন-চার বছরে তুঙ্গে উঠেছে গো-মূত্রের বিক্রি। বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে ‘গো-মূত্র চিকিৎসা ক্লিনিক’। বিক্রি হচ্ছে ‘গো-মূত্র ক্যাপসুল’ এবং ‘ডিস্টিল্ড’ ও ‘মেডিকেটেড’ গো-মূত্র!
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ফার্মাকোলজির শিক্ষক স্বপন জানা বলেন, ‘পুরো বিষয়টাই ভণ্ডামি। গাছগাছালি থেকে রাসায়নিক বের করে ওষুধ হতে পারে। তার ফার্মাকো কাইনেটিক্স ও ডায়নামিক্স রয়েছে। গো-মূত্রের এমন কিছুই নেই।’
অথচ কলকাতা শহরেই এর চাহিদা দেখে ভিন রাজ্যের নামী গোশালা থেকে গো-মূত্র আনিয়ে ব্যবসা করছেন একাধিক এজেন্ট। তাদেরই অন্যতম ললিত আগারওয়াল বলেন, ‘গত কয়েক বছরে এখানে গো-মূত্রের চাহিদা পাঁচ গুণ বেড়েছে। মাসে প্রায় ১০ হাজার লিটার গো-মূত্র বিক্রি হয় পশ্চিমবঙ্গে। এ রাজ্যে তেমন উৎপাদন নেই। তাই আমরা নাগপুর থেকে আনিয়ে দিই।’ ললিতের কথায়, ‘এক লিটার গো-মূত্রের দাম ৩৫০ টাকা। আর ওখান থেকে আনা দুধ আমরা বিক্রি করি ১৫০ টাকা লিটারে।’
সাধারণত কলকাতায় গরুর দুধ লিটার প্রতি ৩৫-৪৮ টাকার মধ্যে মেলে। তার প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিকোচ্ছে গো-মূত্র। নাগপুরের যে ‘গো বিজ্ঞান অনুসন্ধান কেন্দ্র’ থেকে ললিতেরা কলকাতায় গো-মূত্র ও দুধ আনান, সেটি মূলত আরএসএস-এর একটি সংস্থা। পুরো ভারতে তাদের পাঁচশ’র বেশি গোশালা রয়েছে। সেখানকার চিফ কোঅর্ডিনেটর সুনীল মানসিংহের দাবি, ‘পশ্চিমবঙ্গেও আমরা ১৬টি জায়গায় গোশালা শুরু করেছি। সেখান থেকেও কিছুদিনের মধ্যে ডিস্টিল্ড গো-মূত্র মিলবে।’
ক্যালকাটা পিঁজরাপোল সোসাইটি নামে একটি সংস্থার পাঁচটি গোশালা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সেখানকার কোঅর্ডিনেটর সর্বেশ্বর শর্মা বলেন, ‘প্রতি বছর ২০-২৫ শতাংশ হারে গো-মূত্রের বিক্রি বাড়ছে। কলকাতায় মাসে প্রায় ৩ হাজার লিটার গো-মূত্র বিক্রি হয় আমাদের। ১ লিটার গো-মূত্রের দাম পড়ে ১৭৫ টাকা। সেখানে আমরা ১ লিটার দুধ বিক্রি করি ৫০ টাকায়।’ মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে গোমূত্র থেরাপি ক্লিনিক চালাচ্ছেন ব্যবসায়ী বীরেন্দ্র জৈন। তিনি বলেন, ‘কলকাতাতেও আমাদের অনেক রোগী আছে। অনেক নেতারা ওষুধ নিয়ে যান। মেডিকেটেড গো-মূত্র ২১০ টাকা করে লিটার বিক্রি করি। মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার লিটার বিক্রি হয়।’
পিবিএ/জিজি