কলকাতা আর কত হারবে?

পিবিএ,খেলাধুলা: কে বলবে মৌসুমের শুরুটা উড়ন্ত ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের? আসরের প্রথম পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই জিতেছিল বলিউড সুপারস্টার কিং খানের দল। হেরেছিল যে ম্যাচে, সেটিতে সুপার ওভার ভাগ্য যায়নি দীনেশ কার্তিক, আন্দ্রে রাসেলদের পক্ষে। অর্থাৎ তৃতীয় শিরোপা জয়ের জন্য প্রত্যাশামাফিক শুরুটাই পেয়েছিল ২০১২ এবং ২০১৪ সালের আইপিএল চ্যাম্পিয়নরা।

কিন্তু এরপর? এরপর যেন সবকিছু বদলে গেল এক নিমিষেই। আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারিনদের ব্যাট-বল যেন আর কথা বলছে না জয়ের পক্ষে। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে দীনেশ কার্তিক, নিতীশ রানারা উজ্জ্বল থাকলেও হাসি থাকছে না ম্যাচের শেষে।

শুধু এক-দুই ম্যাচ নয়, টানা ৬টি ম্যাচ গোমরা মুখে মাঠ ছাড়তে হলো কলকাতার সমর্থকদের। যার সবশেষটি ছিল বৃহস্পতিবার, তাও কি না ঘরের মাঠে। কলকাতার মাঠে খেলতে এসে পয়েন্ট টেবিলের তলানির দল রাজস্থান ছিনিয়ে নিয়েছে ৩ উইকেটের জয়। যা কি না কলকাতার টানা ষষ্ঠ পরাজয়।

অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকের ঝড়ো ৯৭ রানের ইনিংসে ১৭৫ রানের লড়াকু পুঁজিই পেয়েছিল কলকাতা। দুই স্পিনার সুনিল নারিন এবং পীযুষ চাওলা ওভারে ছয়ের কম রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে লড়াই জমিয়েছিলেন বেশ। কিন্তু পেসাররা পারলেন না সঙ্গ দিতে। তাই তো ৪ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে স্টিভেন স্মিথের দল।

তবে জয়টা যত সহজ মনে হচ্ছে, তত সহজ ছিল না আইপিএলের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নদের জন্য। রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৫.২ ওভারেই ৫৩ রান করে ফেলেন অজিঙ্কা রাহানে এবং সাঞ্জু স্যামসন। আগের ম্যাচে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হারানো রাহানে খেলেন ২১ বলে ৩৪ রানের ইনিংস।

এমন শুরুর পরেও ১০ রানের ভেতরে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় রাজস্থান। পীযুষ চাওলার লেগস্পিনে বোল্ড হওয়ার আগে ১৫ বলে ২২ রান করেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান স্যামসন। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে (৬ বলে ২) বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখান কলকাতার তারকা অলরাউন্ডার সুনিল নারিন।

ব্যর্থ হন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস (১০ বলে ১১) এবং ভারতীয় অলরাউন্ডার (১১ বলে ১১)। লেগস্পিনার শ্রেয়াস গোপাল টানা তিন চারের মারে ৯ বলে ১৮ রান করে আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু ১৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি সাজঘরে ফেরত যান দলীয় ১২৩ রানের মাথায়।

তখনও জয়ের জন্য ২৮ বলে ৫৩ রান করতে হতো রাজস্থানকে। উইকেটে তখন ১৭ বছর বয়সী ডানহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার রিয়ান পরাগ এবং ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত ইংলিশ পেস অলরাউন্ডার জোফ্রা আর্চার। দুজন মিলে মাত্র ২১ বলে যোগ করেন ৪৪ রান।

এর মধ্যে সুনিল রানের করা ১৭তম ওভার থেকে ১৫ এবং প্রাসিদ কৃষ্ণার ১৮তম ওভার থেকে ১৩ রান নিয়ে দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন আর্চার ও পরাগ। দুই ওভারে যখন ১৮ রানের প্রয়োজন বল হাতে আসেন আন্দ্রে রাসেল।

ওভারের প্রথম তিন বলে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে ১ রান করে নেন দুই ব্যাটসম্যান। চতুর্থ বলেই ছক্কা হাঁকান পরাগ। সমীকরণ নেমে আসে ৮ বলে ৯ রানে, ৩০ বলে ৪৭ রানে পৌঁছে যান তিনি। আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিটা পরের বলে পেয়েই গেছিলেন পরাগ।

রাসেলের করা বাউন্সারটি তার ব্যাট ছুয়ে চলে যায় ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে, চারের সংকেত দেন আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডও। কিন্তু তার আগেই ভারসাম্য হারিয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভেঙে ফেলায় হিট উইকেটে পরিণত হন পরাগ, সমাপ্তি ঘটে ৫ চার ও ২ ছয়ের মারে খেলা ৩১ বলে ৪৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটির।

পরাগের বিদায়ের পর শেষ ওভারে ৯ রান প্রয়োজন ছিল রাজস্থানের। প্রাসিদ কৃষ্ণার প্রথম বলে ফাইন লেগ দিয়ে ৪ এবং পরের বল এক্সট্রা কভার দিয়ে ছক্কা মেরে দুই বলেই ম্যাচ শেষ করে দেন আর্চার। বল হাতে কিপটে স্পেল করা আর্চার ব্যাট হাতে খেলেন ২টি করে চার-ছক্কার মারে ১২ বলে ২৭ রানের ম্যাচ জেতানো ক্যামিও।

রাজস্থানের এ জয়ের পর পয়েন্ট টেবিলের তিন দলের অবস্থান হলো সমান্তরাল। সমান ১১টি করে ম্যাচ খেলে ৮ পয়েন্ট এখন কলকাতা, রাজস্থান এবং ব্যাঙ্গালুরুর ঝুলিতে। নেট রানরেটের কারণে তিন দলের মধ্যে ওপরে কলকাতা এবং তলানিতে ব্যাঙ্গালুরু।

শুরুটা হয়েছিল নাজুক, টপঅর্ডাররা ছিলেন চরম ব্যর্থ। এমনকি শেষদিকে আন্দ্রে রাসেল নামক ‘সাইক্লোন’টিও কাজে আসেনি আজ। তাই শঙ্কা জেগেছিল অল্পেই গুটিয়ে যাওয়ার। তবে বুকচিতিয়ে লড়লেন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। দলকে এনে দিলেন লড়াই করার মতো সংগ্রহ।

রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে আগের দেখায় সহজেই জিতেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। স্বাগতিকদের করা ১৩৯ রানের জবাবে ৮ উইকেট ও ৩৭ বল হাতে রেখেই টপকে যায় কলকাতা। আজ প্রতিশোধ নেয়ার ম্যাচে কলকাতাকে অল্পে আটকে রাখার আভাস দিয়েছিল রাজস্থান।

কিন্তু দীনেশ কার্তিকের ৫০ বলে অপরাজিত ৯৭ রানের ইনিংসের কল্যাণে ধুঁকতে থাকা শুরুর পরেও ১৭৫ রানের লড়াকু পুঁজি পায় কলকাতা। প্রতিপক্ষের মাঠে খেলতে এসে প্রতিশোধ নিতে ১৭৬ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় রাজস্থানের সামনে।

টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম পাওয়ার প্লে’তেই দুই ওপেনার শুভমান গিল (১৪ বলে ১৪) ও ক্রিস লিনের (৪ বলে ০) উইকেট হারায় কলকাতা। অষ্টম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৪২ রানের মাথায় ফিরে যান ২৬ বলে ২১ রান করা নিতীশ রানাও।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে দীনেশ কার্তিক এবং সুনিল নারিন যোগ করেন ২৯ বলে ৩৮ রান। ওপেনিং থেকে পাঁচ নম্বরে নামা নারিন আউট হন ৮ বলে ১১ রান করে। এরপর আন্দ্রে রাসেল নেমে ১টি ছক্কা হাঁকালেও ১৪ বলে ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি।

তবে অধিনায়ক কার্তিক একাই দলকে নিয়ে যান লড়াই করার মতো জায়গায়। শেষ ৪ ওভারে ৬০ রান করে কলকাতা। শেষের ২ ওভারেই আসে ৪ ছক্কা ও ২ ছয়ের মারে ৩৩ রান।

শেষপর্যন্ত ৭ চার ও ৯ ছক্কা হাঁকিয়ে ৫০ বলে ৯৭ রান করে অপরাজিত থেকে যান কার্তিক। সেঞ্চুরি করতে ইনিংসের শেষ বলে ৪ মারতে হতো তার। কিন্তু ১ রান নিতে সক্ষম হন কার্তিক। কলকাতার ইনিংস গিয়ে থামে ৬ উইকেটে ১৭৫ রানে।

রাজস্থানের পক্ষে ভরুন অরুন ২টি, শ্রেয়াস গোপাল, জয়দেব উনাদকাত এবং ওসানে থমাস নেন ১টি করে উইকেট।

পিবিএ/এমএস

আরও পড়ুন...