মৎস্যচাষীদের কাছে নতুন এক সম্ভাবনা

কলাপাড়ায় কৃত্রিম ফিড খাবারের মাধ্যমে পুকুরে কোরাল চাষ

উত্তম কুমার হাওলাদার,কলাপাড়া (পটুয়াখালী): মৎস্য চাষীরা ঘেরে বা পুকুরে কোরাল চাষ করলে অন্যান্য প্রজাতির মাছ খেয়ে সাবার করে দেয়। ফলে চাষিদের লাভের বদলে গুনতে হতো লোকসান। তবে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রথমবারের মতো কৃত্রিম ফিড খাবারের মাধ্যমে পুকুরে কোরাল চাষ করে সফল হয়েছেন মৎস্য চাষী আনোয়ার হোসেন। প্রায় এক বছর আগে উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের মাইটভাঙ্গা গ্রামের তার নিজের পুকুরে কোরাল চাষ শুরু করেন। বর্তমানে এক একটি কোরালের ওজন হয়েছে ৩ থেকে ৪ কেজি। দীর্ঘ গবেষনার পর সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড মেরিন ফিশারীজের একদল গবেষক থাইল্যান্ড থেকে ৭ শতাধিক পোনা আমদানি করে এই মৎস্য চাষীকে সরবারহ করেন। এ মাছগুলোর খাদ্য হিসেবে দেয়া হয়েছে গবেষকদের উৎপাদিত সিউইড সমৃদ্ধ কৃত্রিম ফিড খাবার। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন কোরাল চাষে। উদ্ভাবিত সামুদ্রিক শৈবাল সহযোগে কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে কোরাল মাছ চাষ প্রযুক্তি বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে গবেষকরা।

মৎস্য চাষী আনোয়ার বলেন, পুকুরে এক দুটি কোরাল থাকা মানে অন্য সব মাছ শেষ। পুকুরে কোরাল চাষের কথা কোনভাবে চিন্তাও করতাম না। কারন এ মাছ হলো রাক্ষসী। তবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের পরামর্শে পুকুরে গত বছর কোরাল চাষ শুরু করি। তারা আমাকে থাইল্যান্ড ৭ শতাধিক পোনা দিয়েছে। আর খাবার হিসেবে দেয়া হচ্ছে বাজার থেকে কিনে আনা ফিড খাবার । আশা করছি ব্যাপক লাভবান হবো।

মাইটভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা হোসেন মিয়া বলেন, আনোয়ার পুকুরে কোরাল চাষে ব্যাপক লাভবান হবে। বর্তমানে এক এটি কোরাল ৩ থেকে ৪ কেজি ওজন হয়েছে। এ জাতের পোনা পেলে তার পুকুরে চাষ করবেন বলে তিনি জানান। একই এলাকার অপর বাসিন্দা রহমান মিয়া বলেন, এটি একটি আশ্চর্যের বিষয়। দেশী কোরাল কখনো ফিড খাবার খায়না। পুকুরের অন্যান্য মাছ খেয়ে কোরাল বেড়ে ওঠে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ও সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড ফিসারীজ প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড.আবদুর রাজ্জাক বলেন, উপকূলীয় এলাকায় কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে কোরাল চাষ ছড়িয়ে দিতে দীর্ঘ গবেষনা করা হয়েছে। এমনকি এসব মাছের খাবার বিশ্ববিদ্যালয় বসেই মেশিনের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়েছে। এসব মাছের খাবারে সামুদ্রিক শৈবাল (সিউইড) ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম সামুদ্রিক শৈবাল সহযোগে কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের হ্যাচারিতে উৎপাদিত কোরাল মাছের চাষ পদ্ধতি নিয়ে তাঁর দল কাজ করছেন। ৫ গ্রামের কোরাল মজুদ পুকুরে ১ বছরে চাষ করে ২ থেকে ৩.৫ কেজি ওজনের হওয়ায় শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয় পুরো বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যচাষীগণের কাছে নতুন এক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড ফিসারীজ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক শরিফুল আজম বলেন, দেশের উৎপাদিত পোনা মূলত তৈরী খাবার না খাওয়ার কারনেই থাইল্যান্ড থেকে এসব পোনা আমদানি করা হয়েছে। তবে দীর্ঘ গবেষনার পর কৃত্রিম খাদ্যের কোরালের পোনা বর্তমানে কক্সবাজারের কয়েকটি হ্যাচারীতেও উৎপাদিত হচ্ছে। চাষীরা চাইলে সেখান থেকেও কোরালের পোনা নিয়ে আসতে পারবে। উপকূলীয় এলাকায় আমরা ফিড খাবারের কোরাল চাষ নিয়ে ব্যাপক গবেষনা করেছি।

আরও পড়ুন...