কষ্টে আছে বগুড়ার বেনারসি পল্লীর শ্রমিকরা

পিবিএ,বগুড়া: অতিকষ্টে আছে বগুড়ার শেরপুরের বেনারসি পল্লীর শাড়ি তৈরির শ্রমীকেরা। এক সময় যাদের হাতে তৈরি হতো বেনারসি শাড়ি, এখন জীবন বাচানোর তাগিদে সেই হাতে তারা ভ্যান-রিকশা অটো সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর এখন যারা এ পেশা ধরে রেখেছেন তাদেরও দিন চলছে অনেক কষ্টে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বৈধ অবৈধ পথে আসা শাড়ি দখল করে নিয়েছে দেশী বেনারসি পল্লীর তাঁতে তৈরি শাড়ির বাজার। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ি কলোনি গ্রামে বেনারসি শাড়ি তৈরির শ্রমিকদের বসতি এলাকা। অনেক আগে ভারতের বিহার প্রদেশ থেকে আসা এই পরিবারদেরকে স্থানীয়রা বিহারী বলে চিনে। ঘোলাগাড়ি গ্রামেই আরেক পাড়ার নাম নদীয়া পাড়া। এই পাড়ার বাসিন্দারা ভারতের নদীয়া জেলা থেকে উঠে এসে বসতি গড়ার কারণে নাম হয়েছে নদীয়া পাড়া। এক সময় দুইপাড়ার ৭০-৮০টি পরিবারের সবাই ব্যস্ত ছিলবেনারসি শাড়ি তৈরিতে। আর এ জন্যই বেনারসি পল্লী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে এলাকা। তবে এখন আর বেনারসি পল্লীতে বেনারসি শাড়ি তৈরি হয় না।
এ এলাকায় এখন জামদানি, কাতান, ধুপিয়ানসহ তাঁতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। তাও আবার সীমিত আকারে। দিন দিন চাহিদা কমে যাওয়ায় শাড়ি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক তাঁত। বেনারসি শাড়ি তৈরির শ্রমিক আব্দুল ওয়াহেদ ঢাকার মিরপুরে বেনারসি পল্লীতে দীর্ঘ ১৫ বছর কাজ শিখে ১৯৯৫ সালে নিজের বাড়িতে তাঁত বসিয়ে ঘোলাগাড়ি গ্রামে প্রথম বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি।

দিন দিন শাড়ির চাহিদা বাড়তে থাকলে ঘোলাগাড়ি কলোনি ও নদীয়াপাড়ায় নারী-পুরুষ সবাই তাঁতের কাজ শুরু করেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে দুইপাড়ায় ৭০-৮০টি তাঁত বসানো হয়। শুরু হয় বেনারসি ছাড়াও জামদানি, কাতান, ধুপিয়ানসহ বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি তৈরির কাজ। আর এ তাঁত শিল্পের কারনেই ঘোলাগাড়ি কলোনি ও নদীয়া পাড়া বেনারসি পল্লী হিসেবে এলাকাবাসীর কাছে আস্তে আস্তে পরিচিতী পায়।
আব্দুল ওয়াহেদ পিবিএ’কে বলেন, বেনারসি পল্লীতে তৈরি শাড়ির চাহিদা এতটাই ছিল যে, ঢাকার বিভিন্ন শাড়ির শো-রুম থেকে আগাম টাকা দিয়ে অর্ডার দেয়া হতো। সারা বছরের পাশাপাশি রমজান মাসে চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ কারণে রমজান মাসে দিন রাত কাজ করত শ্রমিকেরা। তবে গত কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বেনারসি শাড়ি প্রবেশ করায় দেশি বেনারসির আসায় কদর কমে গেছে। আর ভারতীয় বেনারসির দাম কম হওয়ায় সেগুলো বাজারে চলে বেশি।

পিবিএ/জিএম/হক

আরও পড়ুন...