শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত,লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামে অবস্থিত কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজে উপবৃত্তি সুবিধাভোগি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। গেল বছর ডিসেম্বরে মাসে এই কলেজে আব্দুর রউফ সরকার অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর টিউশন ফি আদায়ের প্রথা চালু করেছেন। এর আগে উপবৃত্তি সুবিধাভোগি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নেওয়া হতো না। সরকারি ঘোষনা মোতাবেক উপবৃত্তি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নেওয়া যাবে না। কারন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ অর্থের যোগান দেয়া হচ্ছে।
কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজ সুত্র জানায়, এ কলেজে এইচএসসি, বিএ, বিএসএস, বিকম, বিএসসি ও বিএমটি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনিক্যাল) শাখায় ১৭০০ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন। এদের মধ্যে ৪৫৫জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছেন। উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০৭জন ছাত্রী আর ১৪৮জন ছাত্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করা হচ্ছে।
কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করায় কাকিনা চাপারতল এলাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শফিকুল ইসলাম বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, কাকিনা উতত্তর বাংলা কলেজটি প্রতিষ্ঠা হয় স্থানীয় গরীব পরিবার থেকে আসা ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করার জন্য। এ ছাড়া এই অঞ্চলে পিছিয়ে থাকা নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এই কলেজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারন। তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত বন্যা, খরা ও নদীভাঙনে নি:স্ব পরিবার থেকে অনেক শিক্ষার্থী এই কলেজে অধ্যয়ন করেন। এসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরপুর্বক টিউশন ফি আদায় করছেন কলেজের নতুন অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার। তিনি এ ব্যাপারে কারো কথাই শুনছেন না। তিনি ইচ্ছামতো কলেজ পরিচালনা করছেন। ‘আমি লিখিত অভিযোগ করেছি। আশা করছি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন,’ তিনি বলেন।
এই কলেজের উপবৃত্তি সুবিধাভোগি নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের কাছ থেকে জোরপুর্বক টিউশন ফি আদায় করা হচ্ছে। টিউশন ফি দিতে রাজি না হলে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। কলেজের নতুন অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার সরাসরি টিউশন ফি আদায়ের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছেন। সরকারি নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাচ্ছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা বলেন, কলেজের অধ্যক্ষের নির্দেশ তাদেরকে পালন করতেই হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। দরিদ্র পরিবার থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ সরকার বলেন, কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করা হচ্ছে। কারন কলেজে অতিরিক্ত শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত পাঠদান করা হচ্ছে। অতিরিক্ত শিক্ষকদের বেতন দিতে হয়। অতিরিক্ত পাঠদানের কারনে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান উন্নত হচ্ছে এবং ফলাফলও ভালো হচ্ছে। উপবৃত্তি সুবিধাভোগি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেওয়া হচ্ছে তারপরও কেন তাদের কাছ টিউশন ফি নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল মান্না বলেন, তিনি এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। সরকার প্রদেয় উপবৃত্তি সুবিধাভোগি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই টিউশন ফি আদায় করতে পারে না। কারন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ অর্থের যোগান দেয়া হচ্ছে।