কারফিউ উপেক্ষা করে কাশ্মিরে ২৪ ঘন্টায় ২৩ টি বিক্ষোভ

পিবিএ,ডেস্ক: দ্বিতীয় দফায় কারফিউ জারির পরও জম্মু-কাশ্মিরজুড়ে ফের বড়ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। জাতিসঙ্ঘে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাষণের প্রভাবে উপত্যকাটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩টি বিক্ষোভের খবর এসেছে। কারফিউ জারির পাশাপাশি মোবাইল, ইন্টারনেট এবং ল্যান্ড ফোন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাস্তায় যানবাহন চলাচলের উপরেও নতুন করে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। শনিবার নিরাপত্তা বাহিনীকে মাইকে এ বিষয়ে ঘোষণা করতেও দেখা গিয়েছে।
কাশ্মিরি মিডিয়া সোর্সের সূত্রে জিও টিভি জানিয়েছে, রাজধানী শ্রীনগরসহ জম্মু-কাশ্মিরের অন্তত নয়টি এলাকায় শনিবার ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্থানীয় জনগণ। কারফিউ উপেক্ষা করে শুধু শ্রীনগর থেকেই ১৫টি মিছিল বেরিয়েছে।

এর আগে জাতিসঙ্ঘে ইমরান খানের ভাষণের পর শুক্রবার রাতেই কাশ্মিরের স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে শত শত কাশ্মিরি। শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া বিক্ষোভের পর ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠে ভারত অধিকৃত কাশ্মির। শনিবার দিনভর উপত্যকাটির বিভিন্ন এলাকায় স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। রামবন জেলায় অভিযানকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় অন্তত তিন বিদ্রোহী। বিদ্রোহীদের গুলিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সদস্যও নিহত হয়েছে। শুক্রবার সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে ইমরান ভারত কাশ্মির থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিলে ‘রক্তবন্যা বয়ে যেতে পারে’ বলে হুঙ্কার তোলেন। এর প্রভাব পুরো বিশ্বে পড়বে বলে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করেছেন তিনি। এরপরই কাশ্মিরে চলাচলে ফের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
শনিবার সকালে জম্মু-কাশ্মিরে দু’টি এনকাউন্টার এবং একটি গ্রেনেড হামলার খবর পাওয়া যায়। রামবান জেলার বাটোতে ভারতের সামরিক পোশাক পরিহিত দুই বিদ্রোহী জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস থামানোর চেষ্টা করে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে চালক বাসের গতি বাড়িয়ে তাদের ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে নিরাপত্তা বাহিনী গিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশি অভিযান শুরু করে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী এনডিটিভিকে ওই সময় অন্তত দু’টি বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষেও অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রের দাবি, পাঁচ বিদ্রোহী একটি বাড়িতে ঢুকে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে। বাড়িতে প্রবেশের আগে তারা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তবে শেষ পর্যন্ত বাড়িটি বিদ্রোহীদের কাছ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় ভারতীয় বাহিনী। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছে গেন্ডারবলে। সেখানে জওয়ানদের গুলিতে দুই থেকে তিন বিদ্রোহীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে সেনাবাহিনী বা পুলিশ এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানাতে পারেনি। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীনগরে। সেখানে বিদ্রোহীরা জনবহুল এলাকার আশপাশে একটি গ্রেনেড ছোড়ে। ওই গ্রেনেড হামলায় কেউ আহত হয়নি। নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় রাস্তায় খুব কম লোক ছিল। তাই বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে নিস্তার পাওয়া গেছে।

কাশ্মির ইস্যুতে মামলায় সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিরোধিতা করে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। এই মামলাগুলোর শুনানির জন্য পাঁচজন বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করেছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। ৩৭০ ধারা বাতিল সংক্রান্ত মামলার শুনানি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে শুরু হতে পারে। এই বেঞ্চের নেতৃত্বে রয়েছেন বিচারপতি এনভি রামানা।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে। সংবিধানের এই ধারা বাতিলের পর থেকে বদলে গিয়েছে কাশ্মিরের পরিস্থিতি। সরকারের এই সিদ্ধান্ত এবং সে সংক্রান্ত প্রেসিডেন্টের নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ গত আগস্টে এই সংক্রান্ত সমস্ত মামলা সাংবিধানিক বেঞ্চে ‘রেফার’ করেছেন। সে সময় তিনি জানান, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি শুরু হবে।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...