জুলাই আগস্ট বৈষ্ণব বিরোধী আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের মুখে কারাগার থেকে পালানো বন্দীদের মধ্যে এখনো ৭শ জন পলাতন রয়েছেন। পাশাপাশি জঙ্গি সংশ্লিষ্ট মামলা এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ৭০ জন ঝুঁকিপূর্ণ আসামি পলাতক রয়েছে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছেন কারা মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন।
সম্প্রতি শাহবাগের পিজি হাসপাতালে গ্রেফতার অবস্থায় চিকিৎসাধীন সাবেক এক সংসদ সদদ্যের ওপর হামলার ঘটনার দায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন্স বলেন, আমরা অনেক সময় বন্দীদের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে হয়। পিজি হাসপাতালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায় আমরা এড়াতে পারি না। কারণ সেখানে আমাদের কারারক্ষীরা ছিলেন। তবে আমাদের দায়িত্বরত কারারক্ষীদের তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থার কারণে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তার অভাব ছিলো।
আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তখন আর বন্দীদের সরকারি হাসপাতালে পাঠাতে হবে না।
বর্তমানে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা জানেন আগের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কারণে অনেক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই সময়ে বন্দিসংখ্যা বেড়েছিল। পরবর্তীতে সেটি কমে আসে।
আমরা সব সময়ে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দী থাকে। আমাদের ধারণা ক্ষমতা ৪২ হাজার। ৫ই আগস্টের আগে বন্দী ছিলো ৫৫ হাজার। যদিও কোন অবস্থানের পর সেই সংখ্যা কমে গিয়েছিল। এখন আবার এনাম আমরা গ্রেফতার চলতেছে ফলে বন্দীর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। এখন যার সংখ্যা ৬৫ হাজার।
কারা অধিদপ্তরের লোগো পরিবর্তনের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনারা জানেন কারা অধিদপ্তরের লোগোতে নৌকা ও অন্যান বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করে কারা অধিদপ্তরের লোগোর সঙ্গে নৌকা সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তখন আমরা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারি না কারণ এ উত্তরের কোনো নথি বা জবাব আমাদের কাছে নেই। তাই এই প্রশ্ন সম্মুখীন হারাতে আমরা কারা অধিদপ্তরের লোগো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ক্ষতি দেখছি যাতে পরিবর্তন যৌক্তিক পরিবর্তন।
কারাগার ভেঙ্গে পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের বিষয় জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের প্রধান বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশব্যাপী সহিংসতা ও সরকার পতনের উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দেশের কয়েকটি কারাগারে বিশৃঙ্খলা-বিদ্রোহ করেন বন্দীরা। বাইরে থেকে কোনো কোনো কারাগারে চালানো হয় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। এই পরিস্থিতিতে কারাগারগুলো থেকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিসহ বিচারাধীন মামলার ২ হাজার ২০০ বন্দি পালিয়ে যায়। যারমধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেফতারের পর ফের কারাবন্দী করা হলেও এখনো ৭০০ বন্দী পলাতক রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী মধ্যে ১১ জন, ৭০ জন জঙ্গি ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও শীর্ষ সন্ত্রাসী রয়েছে। এছাড়া আন্দোলনের পর ১১ জঙ্গী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
কারাগারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ই আগস্টের ঘটনার দেশের যে সকল কারাগার থেকে বন্দী পালিয়েছেন তার প্রতিটি ঘটনা আমরা তদন্ত করেছি। সেখানে আমাদের অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ও কারাগারের বহির নিরাপত্তা এবং প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তায় ত্রুটি পাওয়া গেছে। আমরা প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্ব সহকারে প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে।
জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে প্রথম বন্দী পালনের ঘটনা ঘটে নরসিংদীর কারাগারে। এই ঘটনার সর্বশেষ অবস্থার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ঘটনায় জেল সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। তার যদি অবহেলা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। এই ঘটনা ২০১ জন কারারক্ষী আহত হয়েছিলো। পাশাপাশি কারারক্ষী ও কারা কর্মকর্তাদের বাস ভবনেও হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে৷ আমরা তাদের সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছি।
কারাগারে কতজন ডিভিশন পেয়েছেন। রাজনৈতিক বন্দীদের ডিভিশন দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে আইজি প্রিজন্স বলেন, কারাগারে দুই ধরেন ডিভিশন দেওয়া হয়। একটা হলো প্রথম শ্রেনীর সরকারি কর্মকর্তা ও একটা হল যারা সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি। তাদের বিষয় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত দেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে অবেকেই পেয়েছেন। আবার অনেকের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।