কালীগঞ্জে গরমে ব্যস্ততা বাড়ছে পাখা পল্লীর কারিগরদের

পিবিএ,ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের পাখা পল্লীর কারীগরদের প্রচন্ড গরমে ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। কেউ পাতা কেটে সাইজ করছে, কেউ সেলাই করছে, কেউ সুতা ও বাঁশের শলাতে রং করছে। কেউ তৈরি করা পাখার বোঝা বাধছে। আবার কেউ পাইকারী ক্রেতাদের সাথে বকেয়া হিসেব ও আপ্যায়নে ব্যস্ত। কাজের ব্যস্ততায় শরীর ঘেমে মাটিতে পড়লেও নিজেদের তৈরি তাল পাখার বাতাস নেওয়ার সময় তাদের নেই।ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পাখা পল্লী খ্যাত দুলাল মুন্দিয়া ও পারিয়াট গ্রামে বর্তমান এ অবস্থা বিরাজ করছে।

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের পাখা পল্লীর কারীগরদের প্রচন্ড গরমে ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ।
গরমে ব্যস্ততা বাড়েছে পাখা পল্লীর কারিগরদের

সরেজমিনে কথা হয় দুলালমুন্দিয়া গ্রামের মজনু, ফজলু, খালেক, নুর আলী, আব্দুলবারিক, চাঁনমিয়া, মোস্তফা ও আব্দুর রহিম সাথে। তারা জানায়,তাদের পূর্ব পুরুষেরা এই পাখা তৈরীর কাজ করতেন। পূর্ব পুরুষদের পেশাটাকে ধরে রাখার জন্য এখনো তারা পাখা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন। কালীগঞ্জের দুলাল মুন্দিয়ার ৫০ পরিবার ও পারিয়াট গ্রামের প্রায় ৩৩ টি পরিবার তাল পাখা তৈর করে জীবন জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে।
জন্মগতভাবে এ পেশাটাকে পেয়ে থাকে বলেই তাদের ছেলেমেয়েরাও বিভিন্ন নকশার পাখা তৈরীতে পারদর্শপাখা কারিগর জানায়, হাত পাখার তৈরীর প্রধান উপকরণ তাল পাতা এই এলাকাতে পাওয়া যায় না। শীত মৌসূমে ফরিদপুর ও মাগুরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চারা গাছের পাতা কিনে আনেন তারা।

তারপর পাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পরে পানি থেকে উঠিয়ে নরম ভেজা পাতা গোলাকার করে কেটে মাঝখান থেকে দু-খন্ড করেন।এরপর বোঝা বেধে পাতা ঘরে রেখে দেন এবং সেখান থেকে নিয়েসারাবছর বাড়ীতে বসে তালপাখা তৈরী করেন।

একটি তাল পাতাথেকে দুটি তালপাখা তৈরী হয়। তিনি আরও জানান, পুঁজি না থাকায় এবং অনেক দূর থেকে পাতা কেনার কারণে পরিবহনে অনেক বেশি খরচ পড়ে যায়। কারিগর মজনু মিয়া জানান, বছরে২/৩ মাস তাল পাখার বেশী চাহিদা থাকে। চৈত্র থেকে শুরু করেজৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত বিক্রির মৌসূম হলেও চৈত্র ও বৈশাখমাসই পাখা বিক্রির উপযুক্ত সময়। প্রচন্ড তাপদাহ ওবিদ্যুতের লোডশেডিং এ সময়টাতে বেশী হওয়ার কারণেএসময়টাতে তাল পাখার কাটতি বেশী হয়ে থাকে।

ফলে এ সময় তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বছরের অন্যান্য মাসে তালপাখারতৈরীর কাজ ও বিক্রি চললেও শীত আসলে বিক্রি বন্ধ। তাইতারা শীতেরআগমনকে ভয় পায়।তিনি জানান, পরিবারের ছোটরাও বাবা মায়েদের ব্যস্ততা দেখে বসে থাকতে পারে না। পড়াশুনার পাশাপাশি পাখা তৈরীর বিভিন্ন কাজ করে তারবড়দের সাহায্য করে।নুর আলী নামের একজন কারিগর জানান, গত বছরগুলোর চেয়ে এবছর একটি পাখাতে দাম বেড়েছে প্রায় ৩ টাকা। কিন্তু লাভ হচ্ছে কম। কারণ প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেশী।

তিনি জানান, প্রতিটি পাখায় তৈরি পর্যন্ত প্রায় ৮ থেকে ১০ টাকা খরচ হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১২ থেকে ১৫টাকা টাকা। অবশ্য পাইকার ব্যবসায়ীরা উপরোক্ত দামে পাখাগুলি তাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। তারা একটি পাখা ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করে। অবশ্য খুব গরমের মধ্যে হাত পাখার চাহিদা বেশি হওয়ায় সে সময় একটি পাখা তারা ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি করে।

একজন কারিগর প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ টি তালপাখা তৈরী করতে পারেন। ফলে প্রতিটি কারিগর বিক্রির মৌসূমে দিনে যাবতীয় খরচবাদে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করতে পারেন। পাইকাররা এখন বাড়ী থেকেই পাখা কিনেনিয়ে যাচ্ছেন। ফলে পরিবহন খরচ থেকে রেহাই পাচ্ছেন।

জোছনা নামের এক গৃহবধু জানান,পাতা দিয়ে পাখা তৈরী করে,শরীর ঘেমে মাটিতে পড়লেও বাতাস নেওয়ার সময় তাদের হয় না।কারণ রান্নবান্না ও গৃহস্থলীর কাজের পাশাপাশি তাদেরকে পাখাতৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। অমেলা বেগম নামের বৃদ্ধামহিলা জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি পাখা তৈরীর কাজকরছেন। তিনি জানান, বাড়ীর বৌদেরকেও পাখা তৈরীর কাজ শিখিয়েছেন। ফলে তার ব্যস্ততা এখন একটু কমেছে।

পিবিএ/এটি/আরআই

আরও পড়ুন...