কালীগঞ্জে বাস ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ১১, মাস্টার্স পরীক্ষার্থীসহ আহত ৩০

আরিফ মোল্ল্যা,ঝিনাইদহ: ঢাকা -খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস ট্রাক সংঘর্ষে শিশুসহএ পর্যন্ত ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে দূর্ঘটনায় পতিত বাসের মধ্য থেকে। আর একজন মারা গেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এছাছাড়াও ওই বাসের আহত ৩০ জন যাত্রীকে কালীগঞ্জ ও যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। আহত নিহতদের অধিকাংশই মাস্টার্স পরীক্ষার্থী।

স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার, কালীগঞ্জের ফায়ার সার্ভিস , বারোবাজার হাইওয়ে পুলিশের কর্মিরা ও স্থানীয় লোকজন প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকাল ৩ টার দিকে উপজেলার বারোবাজার তেলপাম্পের সামনে। নিহতদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ২ জন মহিলা ১ টি শিশু রয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

কালীগঞ্জ হাসপাতালসূত্রে জানাগেছে, ইতোমধ্যে ৫ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদার আব্দুর রশিদের কন্যা রেসমা খাতুন (২৬),একই জেলার নাগদাগ গ্রামের জান্নাতুল বিশ্বাসের ছেলে ওলিউল আলম শুভ (২৬) ও কালীগঞ্জের সুন্দরপুর গ্রামের ইছাহক মন্ডলের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২৬)একই উপজেলার বড় ভাটপাড়া গ্রামের রনজিত দাসের ছেলে সোনাতন দাস (২৬) ঝিনাইদহের নাথকুন্ডু গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে ইউনুছ আলী (২৬)। তারা সকলেই মাষ্টার্স পরীক্ষার্থী ছিলেন। বাকিদের শনাক্তের কাজ চলছে। ঘটনাস্থলে স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার দিনভর উদ্ধার ও লাশ শনাক্তের কাজে সহযোগীতা করছেন। এর আগে ঘটনাস্থল থেকে তিনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মিদের সাথে একটি পিকআপ ভ্যানে মৃতদেহগুলো কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয় সাংসদ আনার। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথও ছুটে এসেছেন কালীগঞ্জ হাসপাতালে। মৃতদেহ শনাক্তের কাজ এখনও চলছে। দূর্ঘটনার পর সড়কের সকল ধরনের যান চলাচল প্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপি বন্ধ ছিল।

কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ডঃ মামুনুর রশিদ জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী মাগুরা রোডের একটি বাস যার নাম্বার ঢাকা মেট্রো ব- (১১০২১৪) ঝিনাইদহের উদ্দেশ্য যাচ্ছিল। বাসটি ঝিনাইদহ যশোরের মাঝখানে বারোজার তেল পাম্পের নিকটে পৌছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগে। এ সময় দ্রুতগামী বাসটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে মহাসড়কের উপরেই আড়াআড়ি ভাবে উল্টে পড়ে। এ সময় বাসের সকল যাত্রীই রক্তাক্ত আহত হয়। আহতদের চিৎকারে একাবাসী এগিয়ে আসে। এরপর খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মি ও স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার ঘটনাস্থলে পৌছে বাসের মধ্য থেকে এ পর্যন্ত ৩০ /৩৫ জনকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ ও যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির করা হয়েছে। বাসটির মধ্য থেকে মোট ৯ আর হাসপাতালে মারাগেছেন অজ্ঞাত ১ জন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ মাস্টার্স পরীক্ষা পরীক্ষা ছিল। কাজেই নিহত আহতদের মধ্যে বেশির ভাগই মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘদিন এ সড়কে চলাচলরত অনেক যাত্রীবাহীবাস বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে যাত্রী বহন করে আসছে। যে কারনে প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। যার কোন প্রতিকার নেই।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাফুজুর রহমান মিয়া জানান, হাসপাতালে রেখে লাশ শনাক্তের কাজ চলছে। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। এ পর্যন্ত ৫ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্তের কাজ এখনও চলছে।

স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার জানান,খবর পেয়েই আমি ঘটনাস্থলে পৌচেছি। আমি দেখেছি মানুষের আহাজারী। আহতদের আকুতি। আমি নিজে ,ফায়ার সার্ভিসসহ এলাকার মানুষের সাহায্যে দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এরপর সাথে থেকে মৃতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসে শনাক্ত ও লাশ হস্তান্তের কাজ চালাচ্ছি। তিনি বলেন, এমন বীভৎস ঘটনায় এলাকার নারী পুরুষ ও আহত যাত্রীদের আহাজারী আর্তনাদে কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল। সর্বশেষ মৃতদেহ শনাক্তের জন্য হাসপাতালে থেকে সাহায্য করছি।

পিবিএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...