
দিন যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে আধুনিকতা। আর এই আধুনিকতা বাড়ার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরি শিল্পপণ্যগুলো। এক সময় মাটির তৈরি তৈজসপত্রের প্রচুর ব্যবহার ছিল। সেই তৈজসপত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে এ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি তৈজসপত্র। এ সবের দাম বেশি হলেও অধিক টেকসই। তাই টাকা বেশি হলেও এ্যালুমিনিয়াম ও প্লা¬স্টিকের তৈরি তৈজস পত্রই কিনে থাকে সাধারণ মানুষেরা।
কাঁচ, প্লাস্টিক আর মেলামাইনের ভিড়ে এখন মাটির তৈরি ঐ জিনিসপত্র গুলো প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পাড়ছে না। সেই সাথে এই শিল্পের সাথে জড়িতের জীবন ধারনও কঠিন হয়ে পড়ছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে প্রতিভাবান টাঙ্গাইলের মৃৎ শিল্পীরা। ফলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের মৃৎ শিল্প।

আগে টাঙ্গাইলের মিষ্টি মাটির পাত্রে বিক্রি করা হত। বর্তমানে এক মাত্র দৈ ছাড়া অন্য কোন মিষ্টান্ন বিক্রির ক্ষেত্রে মাটির পাত্র ব্যবহার করা হয় না। এখন সৌখিন জিনিসপত্র এবং কুয়ার পাতই একমাত্র ভরসা।
কিন্তু সঠিক দাম না পাওয়ায় বর্তমান অবস্থায় কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে এ সকল কারিগররা। বর্তমানে গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব, মেলায় তৈরি খেলনা পুতুল ছাড়া অন্য কোন মৃৎ শিল্পের গ্রাহক নেই বললেই চলে। অ্যালুমিনিয়াম, প¬াস্টিক ও স্টিলের জিনিসপত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির মুখে পড়েছে।

এ পেশায় জড়িত বিশেষ করে এটাই যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
টাঙ্গাইল সদর থানার দাইন্যা ইউনিয়নের বাসাখানপুরের জয়ীতা পাল বলেন, বর্তমানে এলুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের কারনে মাটির তৈরী জিনিস পত্র চলে না। ফলে আমাদের জীবন ধারন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তবুও দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জন্য আমরা এই কাজ করে যাচ্ছি। সরকার যদি সুদ মুক্ত ঋনের ব্যবস্থা করতো তা হলে বাপ-দাদার এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারতাম। পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে পারতাম।
মৃৎ শিল্পে সরকারী সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিক টাঙ্গাইল এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহনাজ বেগম বলেন, কালের বির্বতনে মৃৎ শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা বিসিক থেকে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন কারিগরী ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকি। বাজারজাত করনে যে অসুবিধা আছে আমাদের কাছে আসলে সঠিক দিক নির্দেশনা ও দক্ষ কারিগর তৈরী করতে বিসিক থেকে সহযোগিতা দেওয়া হবে। ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইলের এই মৃৎ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বিসিক।
পিবিএ/জেডআই