পিবিএ ডেস্কঃ কাশি এমন একটা সমস্যা যেটার সম্মুখীন আমাদের মাঝে মধ্যেই হতে হয়। কারোর সঙ্গে কথা বলছেন বা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। তখনই শুরু হল কাশি। আবার সর্দি বা ঠাণ্ডা লাগা থাকলে তো কাশি হয়েই থাকে। অনেক সময়ে এই কাশি অনেক অপমানজনক পরিস্থিতির সামনেও আমাদের নিয়ে আসে। কিন্তু কাশি সারাতে গেলে যদি কাফ সিরাপ খাই, তাহলে আমাদের ঘুম পায় অনেক ক্ষেত্রেই। কাশি কেন হয় আর কাশি থেকে রক্ষা পাওয়ার বা কাশি কমানোর সহজ ঘরোয়া উপায়।
কাশি কেন হয়ঃ কাশি নানা রকম কারণে হয়ে থাকে।
ক. সবচেয়ে বড় কারণ হল সর্দি হলে বা ঠাণ্ডা লাগলে। আমাদের অনেক সময়ে গলা ফুলে যায় এই ক্ষেত্রে কাশি হলে। আর ভাইরাসের কারণে শ্বাসনালী ফুলে গিয়ে এই কাশি অনেক দিন থাকতে পারে।
খ. আপনার যদি কোনও জিনিসে অ্যালার্জি থাকে আর যদি অ্যাজমার ধাত থাকে তাহলেও কিন্তু খুব কাশি হয়। মূলত বাইরের ধুলো থেকে যে অ্যালার্জি হয়, যাকে ডাস্ট অ্যালার্জি বলে, তার থেকে সবচেয়ে বেশি কাশি হয়।
গ. আমাদের কোনও কারণে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে আমরা নাকে স্প্রে ব্যবহার করি। অনেক সময়ে এগুলো ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করেই ব্যবহার করা হয়। আর দিনের পর দিন ধরে এগুলো ব্যবহার করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার কাশি হওয়া স্বাভাবিক।
ঘ. ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও একটা বড় কারণ কাশির। ব্যাকটেরিয়ার কারণে সাইনাস ইনফেকশন, ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া হয়। তখন কিন্তু কাশি হয় আর তা অনেক দিন থাকে। এর সঙ্গে কিন্তু প্রবল জ্বর আসতে পারে।
ঙ. যক্ষ্মা, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে টিউবারকিউলোসিস, তার জন্যও কিন্তু কাশি হতে পারে। আর এই কাশির সঙ্গে রক্তপাত হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। তাই কাশিকে অবহেলা করবেন না।
কাশি কমানোর ঘরোয়া উপায়ঃ আগেই বলেছি ঘরে বসেই আপনি কাশি কমিয়ে ফেলতে পারবেন। সব সময়ে যে অ্যান্টিবায়োটিকেই কাশি সারবে তার কোনও মানে নেই। আসুন দেখে নিই কীভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে সাধারণ কাশি কমিয়ে ফেলা যায়।
মধু ব্যবহার করুনঃ মধু কাশি কমাতে অসাধারণ ভালো কাজ করে। এর সঙ্গে গলা ব্যথা কমাতেও মধু অব্যর্থ। চিকিৎসকদের মতে, মধু অনেক সময়ে কাশি কমানোর ওষুধের থেকেও ভালো কাজ দেয়। মধু শ্লেষ্মা কমাতে সাহায্য করে। তাই কাশির সময়ে নিয়ম করে লেবুর চা খান।
উপকরণঃ ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ মধু।
পদ্ধতিঃ প্রথমে লেবু দিয়ে চা বানিয়ে নিন। তার মধ্যে মধু দিন। চিনি দেবেন না। এবার এই চা গরম গরম পান করুন। রোজ দু বেলা খান। দেখবেন এক সপ্তাহে কাশি দূর হয়ে যাবে।
হলুদে ভরসা করুনঃ হলুদ কাশি কমানোর ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ দেয়। হলুদে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান কাশির সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। আপনাকে শুধু কয়েক দিন দুধে হলুদ মিশিয়ে খেতে হবে।
উপকরণঃ এক গ্লাস গরম দুধ, আধ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো, ১ চামচ মধু।
পদ্ধতিঃ গরম দুধে হলুদ আর মধু ভালো করে গুলে দিনে একবার খান। দেখবেন এতে খুব দ্রুত আরাম পাবেন।
আদা ও লেবুর শরবতঃ দাদা – দাদী তো কবে থেকে বলে আসেন কাশি হলে আদা খেতে। আদা শ্লেষ্মার সমস্যায় খুব ভালো কাজ দেয়।
উপকরণঃ এক কাপ পানি, কয়েক কুচি আদা, ১ চামচ লেবুর রস, মধু।
পদ্ধতিঃ পানি হাল্কা গরম করুন। তার মধ্যে এবার আদা কুচি, লেবুর রস আর মধু দিন। মিশিয়ে খেয়ে নিন। এটা দিনে তিন থেকে চার বার খেতে পারেন। খুবই উপকার পাবেন।
রসুনঃ শুনে কী অবাক হচ্ছেন? কাশিতে রসুনও কিন্তু খুব ভালো কাজ দেয়। রসুনে অ্যালিসিন নামের একটি উপাদান আছে যা জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে, ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে তার বৃদ্ধি আটকায়। আর রসুন শরীর গরমও রাখে। তাই রসুন শুষ্ক কাশি কমাতে খুবই দরকারী। রসুনের গন্ধের জন্য এটা আলাদা করে খেতে হবে না। শুধু খাওয়ার সময়ে শুরুতে একটু গরম ভাতে তেলে ভিজিয়ে রাখা রসুন চটকে খেয়ে নিন। দেখবেন বেশ কয়েক দিন খেলে উপকার পাবেন।
তুলসীপাতাঃ কাশির ক্ষেত্রে তুলসী বলতে পারেন অল ইন অল। সেই তো কবে থেকে আমরা শীত পড়ার শুরুতেই তুলসী খেয়ে এসেছি। আর তার ফলও পেয়েছি। কিন্তু আজকাল অনেকেই আর এইসব খাওয়ার সময় পান না। তাই আবার ফিরে যান তুলসীর কাছে।
উপকরণঃ ১ চামচ তুলসী পাতার রস, মধু।
পদ্ধতিঃ তুলসী পাতার রস আর মধু রোজ সকালে খেয়ে নিন ঘুম থেকে উঠে। এক সপ্তাহ খান। দেখুন কাশি কতটা কমে যাবে।
কাশি হলে আপনি কিন্তু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই সব ট্রাই করতে পারেন। আর সঙ্গে গার্গল করতে একদমই ভুলবেন না। কিন্তু খুব বেশি কাশি হলে ডাক্তার দেখাতে ভুলবেন না।
পিবিএ/এমআর