কাশ্মীরিদের পাশে থাকতে মালালার আহ্বান

পিবিএ ডেস্ক: ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মীরের বেসামরিকদের দুর্দশা লাঘবে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী পাকিস্তানি নাগরিক মালালা ইউসুফজাই। রাজ্যটিতে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রধের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা বাতিল করে অঞ্চলটির দখল নিজেদের করে নেয় ভারত সরকার। যে কারণে এবার সকল কাশ্মীরি, বিশেষত শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা ইস্যুতে ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) এক টুইট বার্তায় মালালা বলেন, ‘কাশ্মীরের মানুষ বর্তমানে এক সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকে; এমনকি আমার বাবা-মা যখন ছোট ছিলেন তখন থেকেও এই সমস্যাটি চলছে।’

মালালা আরও বলেন, ‘আমার দাদু-দিদা যখন অল্পবয়সী ছিলেন তখন থেকেও তারা এই বিষয়গুলোর সম্মুখীন হয়ে আসছেন। যে কারণে আমি কেবল এটাই বলতে চাই; গত সাত দশক যাবত এক রকম হিংসার মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে উঠছে কাশ্মীরি শিশুরা।’

টুইট বার্তায় কাশ্মীরি শিশু-নারীদের সুরক্ষা ইস্যুতে নিজের উদ্বেগের বিষয়টি জানিয়ে শান্তিতে নোবেল জয়ী এই পাকিস্তানি বলেন, ‘হিংসায় সবচেয়ে বিপন্ন কাশ্মীরি শিশু ও মহিলাদের জন্য আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন। আমাদের এখন আর এসব কষ্ট পাওয়া এবং একে-অপরকে আঘাত করার কোনো প্রয়োজনই নেই।’

অঞ্চলটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আর্জি জানিয়ে মালালা ইউসুফজাই বলেছিলেন, ‘আমি আশা করব, দুর্গতদের রক্ষা করতে সকল দক্ষিণ এশীয় নাগরিক, আন্তর্জাতিক মহল ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এক্ষেত্রে আগামীতে যে চুক্তিই হোক না কেন, অবশ্যই তা সবার আগে মানবাধিকার রক্ষা, শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা এবং এক চূড়ান্ত শান্তির দিকে জোর দিয়ে হবে বলে আমি আশা করছি।’

এ দিকে এক টুইট বার্তায় পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে কারফিউ প্রত্যাহারের পর সেখানকার নির্যাতিত জনগণের সঙ্গে ঠিক কেমন ব্যবহার হয়; এবার তা-ই দেখার অপেক্ষায় আছে গোটা বিশ্ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত কাশ্মীরিদের ওপর গণহত্যার সাক্ষী হওয়া। কেননা আমরা বিজেপি সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণ দেখব, নাকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এটি বন্ধ করার নৈতিক সাহস আছে?’

অপর দিকে একই দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যেখানে তিনি কাশ্মীরিদের বিভিন্ন আশায় ভাসিয়েছেন। ভাষণে কাশ্মীরিদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরকে সেরা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে। জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে আমি আশ্বস্ত করছি, আপনাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার আপনাদের খুব শীঘ্রই প্রতিষ্ঠিত হবে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তান থেকে ভারতে যারা এসেছিলেন, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তাঁদের সব অধিকার রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘লাদাখের ভেষজ ঔষধি ও সবজি সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। খেলার দুনিয়ায় কাশ্মীরের যুবকরা দেশের মান আরও বাড়াবে। খেলাধুলার প্রভূত উন্নতি হবে, সারা বিশ্বে তাদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাবে।’

মোদী আরও বলেন, ‘সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের যুব সম্প্রদায় অনেক এগিয়ে যাবে। একটা সময় ছিল, সিনেমার শুটিংয়ের জন্য জম্মু-কাশ্মীরই ছিল অন্যতম গন্তব্য। বলিউড, তেলুগু, তামিল সিনেমার লোকজনকে আর্জি জানাব, ফের উপত্যকায় শুটিংয়ে আসতে। এবার নতুন ব্যবস্থাপনায় সেই অবস্থা আবার ফিরে আসবে। কিন্তু অশান্তির জন্য সেটা বন্ধ ছিল।’

ভারত সরকারের এই প্রধান বলেছেন, ‘আমি মানি না, দীর্ঘদিন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরে চালু রাখার প্রয়োজন হবে। আমার পুরো বিশ্বাস, এই নতুন ব্যবস্থায় আমরা সবাই মিলে জম্মু-কাশ্মীরকে সন্ত্রাসমুক্ত করব। জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে একটা কথা বলতে চাই, আপনাদের দ্বারাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।’

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...