কাশ্মীরে ১৩ হাজার শিশু-কিশোর নিখোঁজ

পিবিএ ডেস্ক: কাশ্মীরে ১৩ হাজার নাবালক (শিশু-কিশোর) নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রগতিশীল মহিলা সংগঠনের সদস্যরা। সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তানের কয়েকটি গণমাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এ খবরটি প্রকাশ হয়েছে।

দেশটির সমাজকর্মী ও বামপন্থী আন্দোলনের নেত্রী অ্যানি রাজা, যোজনা কমিশনের সাবেক সদস্য সঈদা হামিদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, ৩৭০ ধারা বিলোপের এই সিদ্ধান্ত কাশ্মীরের অধিবাসীদের একজোট করেছে, যাবতীয় ছোটখাটো বিভেদকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আট থেকে আশি সবাই এখন ভারত সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কথা বলছে। প্রত্যেকেরই অভিমত হলো, সরকার তাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছে।

৫ আগস্ট সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলে ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। একই সঙ্গে সব স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গৃহবন্দিসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। গোটা রাজ্যে মোবাইল টেলিফোন আর ইন্টারনেট সেবা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিবিসির সাংবাদিক সামির হাশমি দক্ষিণ কাশ্মীরের অন্তত ছয়টি গ্রাম ঘুরে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মারধর এবং নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছিলেন।

গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যানি রাজা অভিযোগ করেন, ‘যে গ্রামগুলোয় আমরা গিয়েছিলাম, সেখানকার অধিকাংশ বাড়িতে ছোট ছোট ছেলে নিখোঁজ। এদের ধরে নিয়ে গিয়েছে সেনাবাহিনী ও আধা সেনা সদস্যরা। তাদের অভিভাবকরা খোঁজ নিতে গেলে তাদের বলা হচ্ছে, তিন রাজ্যের জেলে গিয়ে খোঁজ নিতে। সেখানে গেলে দেখা যাচ্ছে, জেলের বাইরের দেওয়ালে একটি তালিকা আটকানো রয়েছে, যেখানে নাম রয়েছে কাশ্মীরি অধিবাসীদের। এভাবে অগণিত কাশ্মীরি ছোট ছোট ছেলে জেলের মধ্যে রয়েছে।’

ভারতের যোজনা কমিশনের সাবেক সদস্য ও সাবেক আমলা সঈদা হামিদ ছোট থেকেই তিনি কাশ্মীরে বড় হয়েছেন। কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি বোঝাতে গেলে বলতে হয়, এই উপত্যকার পরিস্থিতি এখন বড় বেশি শান্ত, বড় বেশি অবসাদগ্রস্ত। সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণের সঙ্গে কথা বলার পরে আমরা প্রাথমিকভাবে যে হিসাবে পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে, ৩৭০ ধারা বিলোপের পর উপত্যকা থেকে নিখোঁজ হয়েছে প্রায় তেরো হাজার নাবালক।’

প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য আইনজীবী পুনম কৌশিকের দাবি, ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে কাশ্মীরের সর্বত্র রাত ৮টার মধ্যে সব বাড়ির আলো নিভিয়ে দিতে হয়। তা না হলে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর রোষানলে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় জনগণকে।

পুনম আরও দাবি করেন, ‘আমরা জম্মু-কাশ্মীর বার অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে গিয়ে তালা ঝুলতে দেখেছি। স্থানীয় আইনজীবীরা আমাদের জানিয়েছেন, আদালতে কোনো কাজ হচ্ছে না। কার্যত পুরো বিচারব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে। দেশের সংবিধানের কোনো অস্তিত্ব নেই এই উপত্যকায়। মারাত্মক ভয়, গ্লানি আর অসম্মানকে সঙ্গী করে বাঁচার জন্য রোজ লড়াই করতে হচ্ছে।’

পিবিএ/ইকে

আরও পড়ুন...